রাঙ্গামাটিয়া ধর্মপল্লীর জয়রামবের গ্রামে অনুষ্ঠিত হল পবিত্র শিশুমঙ্গল সেমিনার ও গঠন প্রশিক্ষণ

জয়রামবের গ্রামে ভেলেঙ্কাণী মা মারীয়ার চ্যাপেলে অনুষ্ঠিত হলো পবিত্র শিশুমঙ্গল সেমিনার ও গঠন প্রশিক্ষণ

গত ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,  রাঙ্গামাটিয়া ধর্মপল্লীর জয়রামবের গ্রামে ভেলেঙ্কাণী মা মারীয়ার চ্যাপেলে অনুষ্ঠিত হলো পবিত্র শিশুমঙ্গল সেমিনার ও গঠন প্রশিক্ষণ।

পবিত্র শিশু মঙ্গল সেমিনার ও গঠন প্রশিক্ষণের মূলসুর ছিল “শিশুরাই শিশুদের সাহায্য করে”। এতে জয়রামবের গ্রামের ১৪০ জন শিশু, ৭০ জন অভিভাবক, ৮ জন শিশু এনিমেটর, ৫ জন ফাদার ও ২ জন সিস্টারসহ মোট ২২৩ জনের সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে সারাদিন ব্যাপী সেমিনার ও গঠন প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয়েছে।

প্রথমেই বাইবেল উপস্থাপন, শিশুদের দ্বারা প্রদীপ প্রজ্জ্বলন ও প্রার্থনার মধ্য দিয়ে কার্যক্রম শুরু করা হয়। “শিশুরাই শিশুদের সাহায্য করে” এই মূলসুরের উপর ভিডিও প্রদর্শন ও স্লাইটের মাধ্যমে বিস্তারিত আলোকপাত করেন ফাদার বিকাশ জেমস রিবেরু, সিএসসি।

ফাদার বিকাশ তার সহভাগিতায় বলেন, “শিশুরাই শিুশুদের নিকট বাণী প্রচারের উত্তম মাধ্যম। তাই প্রার্থনা, ত্যাগস্বীকার, দান ও সেবাকাজের মাধ্যমে শিশুরা শিশুদের সাহায্য করতে পারে।”

শিশুদের বাইবেল ও ধর্মশিক্ষা এই বিষয়ে অত্যন্ত সুন্দর ও সহজভাবে ধর্মশিক্ষা প্রদান করেন ফাদার তুষার গমেজ। অন্যদিকে  গ্রামের সন্তান সুবীর কোড়াইয়া বাইবেলে শিশু সুরক্ষার বিষয়ে সহজ-সরল ভাষায় ব্যাখা করেন ও বাইবেল কুইজের মাধ্যমে শিশুদের অনুপ্রাণিত করেন।

শিশুরা বাবা-মায়ের নিকট যা দেখে, তাই শিখে” এই বিষয়কে কেন্দ্র করে অভিভাবকদের শিক্ষা সচেতনতা ও নৈতিক আচার-আচরণে সচেতন হতে অনুপ্রাণিত করেন এবং গ্রামের স্কুলে সন্তানদের ভর্তি করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মান-মর্যাদা বৃদ্ধি করতে প্রতিশ্রুতি আদায় করেন পালপুরোহিত ফাদার আলবিন গমেজ।

এই সেমিনারের অন্যতম আকর্ষণ ছিল শিশুদের বর্ণাঢ্য র‌্যালীর মাধ্যমে বাজনার তালে তালে বিভিন্ন সচেতন মূলক স্লোগানে গ্রামের স্নিগ্ধ পরিবেশকে ক্ষণিকের জন্য মুখরিত করা। “শিশু দিবসের আলো, শিশুদের মাঝে জ¦ালো। দিন বদলের বইছে হাওয়া, শিক্ষা মোদের প্রথম চাওয়া। বাইবেলের উক্তি, পালন করলে মুক্তি। গুরুজনে ভক্তি, শিশুদের শক্তি। লেখাপড়া কর, সুন্দও জীবন গড়। আমার স্কুল আমার দেশ, রক্ষা করব পরিবেশ। জাতি-ধর্মের বিভেদ নাই, সম্প্রীতি আর শান্তি চাই। বাইবেলের শিক্ষা, মানব সেবায় দীক্ষা। এক সাথে পথ চলি, মিলন-সমাজ গড়ে তুলি।”

এই সেমিনারে অংশগ্রহণকারী শিশু কথা পিরিচ তার অনুভূতি ব্যক্ত করে বলেন, “আমি প্রথমবার এই সেমিনারে অংশগ্রহণ করে বাইবেল সম্বন্ধে জেনেছি এবং বাইবেল পাঠ করতে উৎসাহ পেয়েছি।”

আরেকজন অংশগ্রহণকারী শিশু অর্ঘ্য গমেজ বলেন, “যীশু ভালবাসেন শিশু, এবং একজন শিশু হয়ে আমি কিভাবে প্রার্থনা ও ত্যাগস্বীকারের মাধ্যমে অন্য শিশুদের সাহায্য করতে পারি, এটা আমাকে খুব অনুপ্রাণিত করেছে।”

অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে একজন অভিভাবক মিসেস সাধনা রোজারিও বলেন, “অনেক বছর পর এই ধরণের সেমিনারে শিশুদের প্রাণবন্ত ও সক্রিয় অংশগ্রহণ দেখে এবং অভিভাবকদের উৎসাহ দেখে আমি খুবই খুশি ও আনন্দিত। গ্রাম পর্যায়ে শিশুদের ধর্মশিক্ষা, নেতৃত্ব, প্রতিভার বিকাশ ও দক্ষতা উন্নয়নে এই ধরণের সেমিনার ধারবাহিকভাবে চলমান রাখতে আমি শিশু এনিমেটর ও পালপুরোহিতকে বিশেষভাবে অনুরোধ করছি।”

ফাদার প্রলয় আগষ্টিন ক্রুশ ভেলেঙ্কানী মায়ের পর্ব উৎসবের জন্য গ্রামের খ্রিস্টভক্তদের ও শিশুদের আধ্যাত্মিক ভাবে প্রস্তুত করেন এবং প্রত্যেক পরিবারে একটি করে মঙ্গলবার্তা বাইবেল উপহার দেন।

পরিশেষে, শিশুদের ভিতর থেকে ভয়, লজ্জা দূর করে সুপ্ত প্রতিভা বিকাশে আলোকিত মানুষ হওয়ার লক্ষ্যে শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সেমিনারের পরিসমাপ্তি করা হয়। - মিসেস সুমা রিবেরু, শিশু এনিমেটর