স্বর্গীয় পোপ ফ্রান্সিস এর স্মরণে অনুষ্ঠিত হলো আন্তঃমাণ্ডলিক প্রার্থনা ও স্মরণ সভা

গত ১৫ মে ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ঢাকা মহাপ্রদেশের সংলাপ কমিশনের আয়োজনে রমনা আর্চডায়োসিসান সেন্টারে অনুষ্ঠিত হলো স্বর্গীয় পোপ ফ্রান্সিস এর স্মরণে আন্তঃমাণ্ডলিক প্রার্থনা ও স্মরণ সভা।
এই আন্তঃমাণ্ডলিক প্রার্থনা ও স্মরণ সভায় প্রায় ২০টি মণ্ডলী থেকে ২ জন বিশপ, ২১ জন পালক, পাষ্টর এবং ২৮ জন খ্রীষ্টভক্ত অংশগ্রহন করেন।
এছাড়াও কাথলিক মণ্ডলীর পক্ষ থেকে কার্ডিনাল, আর্চবিশপ, বিশপ, পুরোহিত, সিস্টার, রমনা সেমিনারিয়ান ও খ্রীষ্টভক্তসহ ৩১ জন এই সভায় অংশগ্রহণ করেন। তবে বিভিন্ন মণ্ডলী থেকে প্রায় ৮২জন অংশগ্রহনকারী অংশগ্রহণ করেন।
স্বর্গীয় পোপ ফ্রান্সিসের স্মরণের দিনটি আমাদের কাজের মধ্যে যেন প্রতিফলিত করতে পারি এই আশীর্বাদ যাচনা করে সকলের পক্ষে মেথডিষ্ট চার্চের বিশপ সাইমন বিশ্বাস প্রারম্ভিক প্রার্থনা করেন।
এরপর স্বর্গীয় পোপ ফ্রান্সিস এর জীবনের উপর বিভিন্ন মণ্ডলীর পক্ষে সহভাগিতা ও অনুভূতি প্রকাশ করা হয়।
সহভাগিতা ও অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে এন.সি.সি.বি. সভাপতি খ্রীষ্টফার অধিকারী বলেন, “ইষ্টারের পরের দিন পোপ ফ্রান্সিস-এর মৃত্যু সংবাদ যেন গোটা বিশ্বে কাথলিক খ্রীষ্টান, অন্যান্য মণ্ডলীভুক্ত খ্রীষ্টান, এমনকি অন্য ধর্মের মানুষকেও শোকাহত করেছে। তিনি বিশ্বের অনেক মানুষের হৃদয়কে জয় করেছেন।”

কার্ডিনাল প্যাট্রিক ডি’ রোজারিও, সি. এস. সি তাঁর উপস্থাপনায় পোপ হিসেবে ১২ বছর বিশ্ব মণ্ডলীর পরিচালনায় পোপ ফ্রান্সিস কর্তৃক মণ্ডলীর সংস্কার আনয়নে বিশিষ্ট ধরণের পদক্ষেপগুলো উল্লেখ করেন। বিশিষত “আন্ত:ধর্মীয় ও আন্ত:মাণ্ডলিক বিষয়ে প্রথাগত ভাবনার বাইরে এসে পারষ্পরিক সাক্ষাৎ ও সংলাপ করার একটি কৃষ্টি তিনি গড়ে দিয়ে গেছেন”।
এন.সি.এফ.বি. সেক্রেটারী জেনারেল রেভা: মার্থা দাস সহভাগিতা ও অনুভূতি প্রকাশে বলেন, “বাংলাদেশে পোপ ফ্রান্সিস-এর আগমনের আয়োজনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে তিনি নিজে ব্যক্তিগতভাবে পোপকে ঘিরে মানুষের হৃদয়ের গভীর আনন্দের দিক উপলদ্ধি করেছেন। পোপ ফ্রান্সিস-এর জীবন অনেক বড় নেতা থেকে শুরু করে অতি সাধারণ মানুষের জীবনকে আকৃষ্ট করেছে।”
চার্চ অব বাংলাদেশ-এর অবসর প্রাপ্ত বিশপ পল শিশির সরকার পোপ ফ্রান্সিস এর উল্লেখযোগ্য পালকীয় পত্র “লাওদেতে সী” এবং ফ্রাতেল্লে তুত্তি” এর তাৎপর্যপূর্ণ দিকগুলো সহভাগিতা করেন। “গোটা বিশ্ব আমাদের কমন হোম” এবং “সকলে আমরা ভাই ভাই” চেতনাগুলো তিনি অতি গভীরভাবে উপলদ্ধি করেন।
“পোপ ফ্রান্সিস সম্পর্কে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে ঢাকা মহাধর্মপ্রদেশের আর্চবিশপ বিজয় এন. ডি’ ক্রুশ পোপের বিনম্র, সহজ-সরল ও সাধারণ জীবন-যাপনের কয়েকটি দৃষ্টান্ত তুলে ধরেন।”
এরপর “পোপ নির্বাচন প্রক্রিয়া” সম্পর্কে উপস্থাপনা করেন বিশপ সুব্রত বনিফাস গমেজ (সহকারি বিশপ, ঢাকা মহাধর্মপ্রদেশ)। তিনি বলেন, “কার্ডিনালগন (বয়স ৮০ বছরের নীচে) নিজেরা একেকজন পোপ পদ-প্রার্থী আবার নিজেদেরই ভোটে একজনকে পোপ নির্বাচিত করেন। প্রার্থনার মধ্য দিয়ে অবধারণ প্রক্রিয়ায় যেন তাঁরা যোগ্য উত্তরসূরী পোপকে নির্বাচিত করেন।”
আর্চবিশপ বিজয় এন. ডি’ ক্রুশ “পোপ নির্বাচন প্রক্রিয়া একটি বিশিষ্ট ধরণের পদ্ধতি” এই বিষয়ের উপর বলতে গিয়ে বলেন, “এটা জনপ্রিয়তার প্রতিযোগিতা নয়, বরং পবিত্র আত্মা যাকে মনোনীত করে রেখেছেন কার্ডিনালগন প্রার্থনা ও ধ্যানের মধ্য দিয়ে পবিত্র আত্মার অনুপ্রেরণাতে তাকে নির্ধারিত করেন বা পোপ নির্বাচন করেন।”
পরিশেষে আর্চবিশপ ডি’ ক্রুশ সকলকে ধন্যবাদ জানান এই আন্তঃমাণ্ডলিক প্রার্থনা ও স্মরণ সভায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করার জন্য।
প্রার্থনার শেষে কার্ডিনাল প্যাট্রিক ডি’ রোজারিও, সি.এস.সির অনুরোধে উপস্থিত সকলে দাঁড়িয়ে একত্রে নাইসিয়ান ক্রিড বা নিশিয় বিশ্বাসমন্ত্র প্রার্থনা উচ্চারণ করা হয়। - সিস্টার রেবা ভেরোনিকা ডি’কস্তা, আর.এন.ডি.এম (কো-কোঅর্ডিনেটর, সংলাপ কমিশন, ঢাকা মহাধর্মপ্রদেশ)