নবাই বটতলা ধর্মপল্লীতে অনুষ্ঠিত হল পালকীয় সম্মেলন

রক্ষাকারিণী মা মারীয়ার ধর্মপল্লীর উদ্যোগে দিনব্যাপি অনুষ্ঠিত হল পালকীয় সম্মেলন

গত ১৪ জুন ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,  নবাই বটতলা রক্ষাকারিণী মা মারীয়ার ধর্মপল্লীর উদ্যোগে দিনব্যাপি অনুষ্ঠিত হল পালকীয় সম্মেলন।  

এই পালকীয় সম্মেলনের মূলসুর ছিল “সিনোডাল মণ্ডলি: খ্রিস্টাবশ্বাসীর  দায়িত্ব, মণ্ডলী ও সমাজে”। এতে বিভিন্ন গ্রামের প্রায় ১২৫ জন নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ অংশগ্রহণ করেন।

দিনব্যাপি এই পালকীয় সম্মেলনের অনুষ্ঠানসূচীতে ছিল অতিথিদের আসন গ্রহণ, প্রদীপ প্রজ্জ্বলন, পবিত্র আত্মার গানের মাধ্যমে পবিত্র বাইবেল পাঠসহ ক্ষুদ্র প্রার্থনা, উদ্বোধনী নৃত্যসহ অতিথিদের ফুলেল শুভেচ্ছা। 

ধর্মপল্লীর পাল-পুরোহিত ফাদার স্বপন পিউরীফিকেশন স্বাগত বক্তব্যে তুলে ধরেন সিনোডাল মণ্ডলী অর্থ বাহ্যিক মিলনের পাশাপাশি অন্তর-আত্মায় মিলন। একসাথে পথ চলছি এটা প্রকাশ করে আমরা একজন আরেকজনের অন্তরে আছি। উদাহরন হিসাবে একজনে আনন্দে আরেকজনও আনন্দিত হন এবং একজনের ব্যাথায় আরেকজনও ব্যথা পান/ব্যাথা অনুভব করেন। সিনোডাল মণ্ডলীতে সবাইকে অন্তভূক্তি করতে হবে এবং সবার প্রতি সংহতি দেখাতে হবে।

রাজশাহী পালকীয় সেবাদলের আহ্বায়ক ফাদার বাবলু কোড়াইয়া বলেন, “মিলন সাধনা: অন্তর্ভূক্তি ও সংহতি। সদ্ইচ্ছা ছাড়া মিলন সম্ভব নয়। মিলন সমাজের চর্চা এখনো পুরোপুরি করতে পারছিনা বলেই পৃথিবীতে দেখা যায় দ্বন্দ্ব-বিবাদ, ধনী-দরিদ্রদের মধ্যে বৈষম্য, অন্যায্যতা ও অশান্তি, যুদ্ধ-বিগ্রহ এবং প্রকৃতির প্রতি মানুষের বৈরী আচরণ। এইসবের মধ্যে কোন শান্তি নেই। একা একা ভাল থাকতে চেষ্ঠা করলে দেখা যাবে অন্তরে শান্তি নেই।”

কোন কাজই স্বার্থকতা পাবে না যদি না ঈশ্বর  আমার সাথে সমর্থন না দেন। আমাদের জীবন ও কাজে ঈশ্বরের  ইচ্ছা মেনে চললে আমরা ঈশ্বরের  কাছের মানুষ হয়ে উঠি। অন্তর্ভুক্তি ও সংহতি ছাড়া প্রেমপূর্ণ মিলন সমাজ গড়া সম্ভব নয়। অন্তর্ভুক্তি মানে হলো সকলকে সঙ্গে রাখা বা অন্তরে স্থান দেওয়া; কাউকে বাদ না দিয়ে সকলকে সঙ্গে নিয়ে পথ চলা বা জীবন যাপন করা। আর সংহতি অর্থ অন্যের সাথে এক হওয়া বা একাত্ম হওয়া; প্রতিবেশী ভাইবোনের সুখ-দুঃখের সঙ্গী হওয়া। আমাদের মিলন সাধনা করতে হবে পরিবারে, সমাজে ও ধর্মপল্লীর ভাইবোনদের সঙ্গে আর তাহলে অন্তর্ভূক্তিমূলক ও সংহতিপূর্ণ সমাজ গড়ে তোলা সম্ভব হবে”, বলেন ফাদার বাবলু।

বিশপ মহোদয়ের পালকীয় পত্রের আলোকে চারটি দলে বিভক্ত হয়ে দলীয় আলোচনা করা হয়। দলীয় আলোচনায় মিলন ও ন্যায্যতাপূর্ণ সমাজ স্থাপনের ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি বাধা উঠে আসে। যেমন- দরিদ্রতা, ন্যায্য কথা বলতে ভয় পাওয়া, নারীদের কম গুরুত্ব দেয়া, গীর্জা-প্রার্থনায় অনীহা, বাল্যবিবাহ ও অবৈধভাবে জীবনযাপন, কাজের দোহায় দিয়ে মাণ্ডলীক কাজে অনীহা, সামাজিক কাজে অবহেলা, গ্রাম্য প্রধানদের কথা না মানা, খ্রিস্টিয় মূল্যবোধ গুরুত্ব না দেয়া, পেশাগত কাজে সময় না দিতে পারা, পরিবারে নৈতিক শিক্ষার অভাব, নেশা, মোবাইল ফোন ব্যবহারে অতিরিক্ত আসক্তি, পিতা-মাতার সচেতনতার অভাব, ইত্যাদি।          

এইসব দূর করার উপায়সমূহ হলো সচেতনতা সৃষ্টি,  ছেলে-মেয়েদের নৈতিক শিক্ষা প্রদান, পরিবার পরিদর্শন, মণ্ডলীর কাজে সময় দেয়া, আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহারে সচেতন হওয়া, পরষ্পরের মতামতের সম্মান দেয়া, নিজের সংস্কৃতি চর্চা ও রক্ষা করা, প্রার্থনায় গুরুত্ব দেয়া, শিক্ষা সেমিনারে অংশগ্রহণ করা, যোগ্য ও সৎ নেতা নির্বাচন করা, নারীদের মতামতের গুরুত্ব দেয়া, সঞ্চয়ী মনোভাব গড়ে তোলা, ইত্যাদি।

অন্যদিকে ধর্মপল্লীর জন্য কয়েকটি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কর্মসূচী নির্ধারণ করা হয় যথা; ১। সবাই মিলে খ্রিস্টযাগে অংশগ্রহণ করবো ২। ধর্মশিক্ষা ও নৈতিক শিক্ষা প্রদানের ব্যবস্থা করবো ৩। সংঘ-সমিতিগুলোকে জোরালোভাবে জীবন্ত করে তুলবো ৪। পারিবারিক প্রার্থনা  (বিশেষ করে রোজারিমালা প্রার্থনায় গুরুত্ব দেয়া) ৫। বিভিন্ন অনুদান দিবো (পালকীয় অনুদান দিবো) এবং ৬। নবাই বটতলা ধর্মপল্লীর স্কুলকে সনির্ভরশীল করে গড়ে তুলবো।

পরিশেষে পাল-পুরোহিতের ধন্যবাদ বক্তব্য, সহকারী পাল-পুরোহিত ফাদার আরতুরো স্পেজিয়ালে পিমে’র প্রার্থনা ও আর্শিবাদ এর মধ্যদিয়ে সম্মেলনের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়। - ফাদার স্বপন পিউরীফিকেশন