রাঘবপুর সাধু যোসেফ ক্যাথলিক গীর্জায় মা মারীয়ার জন্ম পর্ব পালন

রাঘবপুর সাধু যোসেফ ক্যাথলিক গীর্জায় মহাসমারহে পালন করা হল ভেলাঙ্কানী মা মারীয়ার জন্ম পর্ব। খ্রিস্টীয় ক্যাথলিক মন্ডলীতে প্রতিবছর এই পর্ব পালন করা হয় ৮ই সেপ্টেম্বর। এই পর্ব দিন উপলক্ষে রাঘবপুর ধর্মপল্লীতে নবাহ প্রার্থনার আয়োজন করা হয়। 

গত ৩০ আগস্ট থেকে ৭ই সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রথমে জপমালা রোজারি প্রার্থনা ও পবিত্র খ্রীষ্টযাগের আয়োজন করা হয়। নয় দিন প্রার্থনার পর ৮ই সেপ্টেম্বর আরোগ্যদায়িনী মা মারীয়ার জন্ম পর্ব পালন করা হয় ।

নবাহ প্রার্থনার প্রথম দিনে ৩০শে আগস্ট বৈকাল ৪.৩০ মিনিটে ভেলেঙকানী মা মারীয়ার পতাকা উত্তোলন করা হয়। প্রতিকৃতিতে মাল্যদান আরতি করে নবাহ প্রার্থনার শুভ সূচনা করা হয়। পাল পুরোহিত ফাদার যোসেফ টোপ্প এস.জে. মহাশয় পতাকা উত্তোলন করেন তারপর বাইবেল থেকে মঙ্গলসমাচার পাঠ করেন।শোভাযাত্রার মাধ্যমে কীর্তন গান সহযোগে গির্জা প্রাঙ্গনে প্রবেশ করা হয়।  

জপমালা প্রার্থনা পরে পবিত্র খ্রীষ্টযাগ উৎসর্গ করা হয়। প্রথম দিন খ্রীষ্টযাগ উৎসর্গ করেন রাঘবপুরের পাল পুরোহিত ফাদার যোসেফ টোপ্প এস.জে মহাশয়। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ব্রাদার ডি.কন স্টিফেন কিসকু এস.জে মহাশয়, ডি.এস.এ সিস্টারগণ ও অগণিত খ্রীস্টভক্তগণ। এই ভাবে নয় দিন প্রার্থনা ও পবিত্র খ্রীষ্টযাগ উৎসর্গ করা হয় বিভিন্ন উদ্দেশ্য নিয়ে।

নয় দিনের রোজারি জপমালা প্রার্থনা পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয় মাগুরখালী ও গোবরাচক কনভেন্টের ডি.এস.এ সিস্টারগণ, খ্রিস্টীয় জীবন সংঘ(সি.এল.সি), ভিনসেন্ট ডি পল সোসাইটি(এস.ভি.পি), যুবদল, মহিলা কমিশন, সেবক দল, পালকীও পরিষদের সদস্যদের।

নয় দিনে মা মারীয়ার নয়টি উদ্দেশ্যে রাখা হয়। ১.আনন্দদায়িনী মা মারীয়া,

২.ক্রুশের তলায় মা মারীয়া 

৩.বিশ্ব রাণী মা মারীয়া 

৪.স্বর্গের রাণী মা মারীয়া ৫.আরোগ্য দায়িনী মা মারীয়া 

৬.শান্তি দায়িনী মা মারীয়া ৭.মানব পরিত্রাতা মা মারীয়া 

৮.কৃতজ্ঞচিত্ত মা মারীয়া

৯.দর্শন দায়িনী মা মারীয়া

নয় দিন নবাহ প্রার্থনার পর দশম দিন ৮ই সেপ্টেম্বর রবিবার আরোগ্যদায়িনী মা মারীয়ার জন্মদিন পালন করা হয়। বৈকাল ৪ ঘটিকায় রাঘবপুর সাধু যোসেফ ক্যাথলিক গীর্জায় কলকাতা যীশু সংঘের প্রভিন্সিয়াল ফাদার আর্জেন টেটে, পাল পুরোহিত ফাদার যোসেফ টোপ্প এস.জে  মহাশয়ের উপস্থিতিতে মা মারীয়ার পতাকা অবনমন করা হয়। তারপর পতাকায় মাল্যদান ও আরতি করা হয়।

রাঘবপুর গীর্জা থেকে শোভাযাত্রা কীর্তন সহযোগে সেন্ট পলস বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে পবিত্র খ্রিষ্টযাগের জন্য এগিয়ে যাওয়া হয়।

খ্রীস্টযাগ আরম্ভের পূর্বে চারজন যুবতী নারীকে মা মারীয়া রূপে প্রদর্শিত করা হয় খ্রীস্টভক্তদের সামনে। 

১.লুড্ডের রানী মা মারীয়ার 

২.আরোগ্য দায়িনী মা মারীয়া ৩.ব্যান্ডেল রানী মা মারীয়া ৪.সাহায্যকারীণী মা মারীয়া

পরবর্তীতে আশার তীর্থ যাত্রী ও নৃত্য সহায় মা যে তোমার নেই কো তুলনা প্রবেশিকা নৃত্যের মধ্যে দিয়ে ফাদার আর্জেন টেটে এস.জে মহাশয়, রাঘবপুর প্যারিসের পাল পুরোহিত ফাদার যোসেফ টোপ্প এস.জে ও অন্যান্য পুরোহিতবর্গকে স্বাগত জানানো হয়। উপাসনা বেদীর সামনে শ্রদ্ধেয় প্রভিন্সিয়াল ও পুরোহিত বর্গকে বরণ ও চন্দনের ফোঁটা দেওয়া হয়। তারপর মূল উপাসনার আরম্ভ হয়। প্রথম পাঠ, দ্বিতীয় পাঠ এবং মঙ্গল সমাচার পাঠের পর প্রভিন্সিয়াল মহাশয় তার মূল্যবান উপদেশে বলেন ক্রুশের তলায় মা মারীয়া যখন যীশুকে কোলে নিয়ে মায়ের এই মূর্তিটি আমাদের এটাই বোঝায় মা মারিয়ার মত কঠিন সময়েও আমাদের জীবনের দুঃখ যন্ত্রণা যেন আমরা বহন করতে পারি।  এজন্য প্রভু যীশুকে যেন আঁকড়ে ধরতে পারি তাহলে আমাদের জীবনেও আমরা পুনরুত্থানের মাহাত্ম্য লাভ করতে পারবো।

মা মারীয়া জন্ম দিন উপলক্ষে উপস্থিত প্রত্যেক পরিবার তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী অর্ঘ দান করেন বেদির সামনে। খ্রীষ্টযাগ আরম্ভের মুহূর্তে সেই অর্ঘ পুরোহিত আশীর্বাদ প্রদান করেন এবং খ্রীস্টযাগ শেষে তার সকলের মধ্যে বিতরণ করা হয়। খ্রীষ্টযাগ শেষে পর্ব দিন উপলক্ষে সকল খ্রীস্টভক্তের জন্য মিষ্টিমুখের আয়োজন করা হয়। 

প্রতিবেদন – তন্ময় মন্ডল