রাজশাহী ধর্মপ্রদেশে অনুষ্ঠিত হলো শিশুমঙ্গল সংঘের তীর্থ

গত ২৯ আগস্ট ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের বিভিন্ন ধর্মপল্লীর শিশুদের নিয়ে রক্ষাকারীনি মা মারীয়ার তীর্থ-ভূমি নবাই বটতলা ধর্মপল্লীতে অনুষ্ঠিত হলো খ্রিস্ট জন্ম জয়ন্তীর তীর্থ উৎসব।
এই তীর্থ উৎসবের মূলসুর ছিল, “আশার তীর্থ : যীশুর সান্নিধ্যে আমরা”। এতে ধর্মপ্রদেশের বিভিন্ন ধর্মপল্লী থেকে আগত ৮৬০জন শিশু, ১৯০জন এনিমেটর, ২৫জন যাজক, ৩৫জন সিস্টার ও ৩০জন স্বেচ্ছাসেবকসহ সর্বমোট ১১৪০জন অংশগ্রহণ করে।
সকাল থেকেই বিভিন্ন ধর্মপল্লী থেকে শিশুরা নবাই-বটতলা সাধু যোসেফ স্কুল চত্ত্বরে সমবেত হয়। শিশুরা ব্যানার, ফেস্টুন ও স্লোগান দিয়ে এই তীর্থ উৎসব পালন করে।
শিশুরা পায়ে হেঁটে ঢাক-ঢোল, বাঁশি ও নানারূপ বাদ্য যন্ত্রের তালে তালে “আমরা শিশু: ভালোবাসেন যীশু”, “প্রতিদিন সন্ধ্যা বেলা: ঘরে ঘরে জপমালা”, “বাইবেলের আলো: ঘরে ঘরে জ্বালো” এমন অনেক সুন্দর সুন্দর অর্থপূর্ণ স্লোগানে দিয়ে রক্ষাকারীনি মা মারীয়ার তীর্থ-ভূমিতে যায়।
এই তীর্থের আধ্যাত্নিক প্রস্তুতি হিসেবে অংশগ্রহণকারীরা ভক্তিপূর্ণ পরিবেশে রোজারি মালা প্রার্থনা ও পাপস্বীকার সংস্কার গ্রহণ করে।
শিশুদের জন্য পবিত্র খ্রীষ্টযাগ উৎসর্গ করেন রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের বিশপ জের্ভাস রোজারিও। তিনি তাঁর উপদেশ বাণীতে বলেন, “শিশুরাই শিশুদের সাহায্য করে”। শিশুদের আজকের এই তীর্থ সম্ভব হয়েছে কারণ অন্য দেশের শিশুরা তাদের জন্য চিন্তা করেছে ও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে।”

“তাই আমাদের শিশুরাও যেন নিজেদের সামর্থ অনুযায়ী অন্য শিশুদের পাশে দাঁড়ায়, পরস্পরকে যেন ভালোবাসে ও সাহায্য করে,” বলেন বিশপ রোজারিও।
উপদেশের সময় বিশপ শিশুদের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্ন করেন যেমন, “তারা পরস্পরকে সাহায্য করবে কিনা? যীশুকে ও অন্যকে ভালোবাসবে কিনা? নিয়মিত গির্জায় যাবে ও প্রার্থনা করবে কিনা? বাবা-মায়ের বাধ্য হয়ে চলবে কিনা? শয়তানকে পরিহার করবে কিনা?”
পবিত্র খ্রীষ্টযাগের পরপরই রাজশাহী পিএমএস (পন্টিফিকাল মিশন সোসাইটি) পরিচালক ফাদার পিউস গমেজ এই তীর্থে অংশগ্রহণ ও স্বার্থক করে তোলার জন্য সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।
নাবই বটতলা ধর্মপল্লীর পাল-পুরোহিত ফাদার স্বপন মার্টিন পিউরিফিকেশন শিশুদের উদ্দেশে নবাইবটতলার তীর্থ স্থান হয়ে উঠার পেছনে ঐতিহাকি প্রেক্ষাপট ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সংক্ষিপ্ত আকারে তুলে ধরেণ এবং উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ জানান।
শিশুদের জন্য ছিল “যীশুর সান্নিধ্যে আমরা” এই মূলভাবের উপর ভিত্তে করে আর্ট ও মাটির কাজের প্রতিযোগিতা। তাদের অংশগ্রহন ও কাজগুলো সত্যিকারভাবেই আশা জাগানিয়া একটি চিহ্ন হিসাবে প্রশংসিত হয়। পিএমএস জাতীয় পরিচালকের সহায়তায় এর জন্য তাদের পুরষ্কৃতও করা হয়।
পরে শিশুদের অংশগ্রহণে একটি মনোজ্ঞ স্বাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। উক্ত অনুষ্টানে শিশুরা ধর্মপল্লী ভিত্তিক দলে বাইবেলে’র বিভিন্ন ঘটনা ও সাধু-সাধ্বীদের জীবনী ভিত্তিক মনোমুগ্ধকর নাটিকা ও দলীয় নাচ উপস্থাপন করে।
উল্লেখ্য যে, রাজশাহীর ধর্মপ্রদেশের শিশুদের নিয়ে এমন উদ্যোগ সকলের মধ্যেই বেশ প্রভাব পরে। খ্রীষ্ট জন্মজয়ন্তী বর্ষে ধর্মপ্রদেশের সকল ধর্মপল্লীর শিশুদের বিশ্বাস বৃদ্ধি ও আধ্যাত্মিক যত্নের জন্য এই তীর্থ ছিলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও অর্থবহ। - ফাদার শেখর ফ্রান্সিস কস্তা