চাঁদপুকুর ধর্মপল্লীর অধিনে হাসেনবেগপুর গ্রামে পবিত্র ক্রুশ ধর্মপল্লীর শুভ উদ্বোধন
গত ২৫ এপ্রিল ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের অধিন্যস্ত চাঁদপুকুর ধর্মপল্লীর হাসেনবেগপুর গ্রামে হলিক্রস বা পবিত্র ক্রুশ কোয়াজি ধর্মপল্লী হিসেবে তার আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে।
হাসেনবেগপুর গ্রামটি চাঁদপুকুর ধর্মপল্লীর একটি উরাঁও অধ্যুষিত গ্রাম। এই গ্রামকে ধর্মপল্লীতে রূপ দেওয়ার উদ্দেশ্যে ফাদার সুবল কুজুর সিএসসি বিগত ২১ ডিসেম্বর ২০২০ খ্রিস্টাব্দে চাঁদপুকুর ধর্মপল্লীতে আসেন এবং ২ বছর চাঁদপুকুর মিশনে থেকে তার পালকীয় সেবা কাজ পরিচালনা করেন।
আজ হাসেনবেগপুর পবিত্র ক্রুশ ধর্মপল্লীর জন্য একটি ঐতিহাসিক দিন। কেননা, এই দিন রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের বিশপ জের্ভাস রোজারিও এবং পবিত্র ক্রুশ সংঘের প্রভিন্সিয়াল ফাদার জর্জ কমলের উপস্থিতিতে এবং নেতৃত্বে ধর্মপল্লীর গির্জাঘর ও ফাদার বাড়ি নির্মাণের জন্য মাটি খননের কাজ শুরু হয়।
একই দিনে ফাদারদের থাকার জন্য একটি আধা-পাকা ঘরের শুভ উদ্বোধন ও আশির্বাদ করেন বিশপ জের্ভাস রোজারিও। পবিত্র খ্রিস্টযাগে প্রধান পুরোহিত্য করেন বিশপ জের্ভাস রোজারিও এবং সহার্পিত খ্রিস্টযাগে অংশগ্রহণ করেন পবিত্র ক্রুশ সংঘের প্রভিন্সিয়াল, সহকারি প্রভিন্সিয়াল ও হাসেনবেগপুরের আশে-পাশের ধর্মপল্লীর ফাদারগণ, সিস্টারগন সহ প্রায় ৭০০ জন খ্রিস্টভক্তগণ।
রাজশাহী ধর্মপ্রধেশের মধ্যে পবিত্র ক্রুশ সংঘের জন্য হাসেনবেগপুর হলো ২য় কোয়াজি ধর্মপল্লী। বিশপ তার ঘোষণায় বলেন যে, ফাদার সুবল কুজুরই হচ্ছে হাসেনবেগপুর পবিত্র ক্রুশ কোয়াজি ধর্মপল্লীর পাল-পুরোহিত।
পবিত্র খ্রিস্টযাগের শুরুতেই বিশপ বলেন, “খ্রিস্টেতে প্রিয়জনেরা, আজকে আমরা অনেক আনন্দিত। আজ হাসেনবেগপুরে একটি নতুন কোয়াজি ধর্মপল্লীর সূচনা হতে যাচ্ছে। এই জায়গা থেকে যে সমস্ত গ্রামে খ্রিস্টবাণী প্রচারিত হবে এবং পালকীয় সেবা দান করা হবে এবং যে সব গ্রাম থেকে বা ধর্মপল্লী থেকে সবাই এখানে এসেছেন, আমরা সবাই আনন্দিত। কারণ এখানে ঈশ^রের বাণী প্রচারের জন্যে কেন্দ্র গড়ে উঠছে। এজন্য আমরা ঈশ^রকে অনেক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।”
“আমরা ধন্যবাদ জানাই পবিত্র ক্রুশ সংঘের ফাদারদের কারন তাদের সহযোগিতায় আমরা যাজকদের পেয়েছি যারা এখানে সেবা দিবেন। এছাড়াও পবিত্র ক্রুশ সম্প্রদায় এই কোয়াজি ধর্মপল্লীর জন্য আধ্যাত্নিকভাবে, আর্থিকভাবে সেবা দিয়ে যাবেন”, বলেন বিশপ রোজারিও।
পবিত্র ক্রুশ সংঘের প্রভিন্সিয়াল ফাদার জর্জ কমল তার অনুভুতি ব্যক্ত করে বলেন, “সত্যিই আজ একটি আনন্দের দিন, একটি সুখের দিন, যে আমরা এই চাঁদপুকুরের একটি গ্রামে কোয়াজি ধর্মপল্লী উদ্বোধন করতে পেরেছি এবং এখানে অস্থায়ী ফাদারদের বাড়ি আশির্বাদ হয়েছে এবং নতুন একটি গির্জা হবে সেটারও গ্রাউন্ড ব্রেকিং এর কাজ শুরু হয়েছে। তারপর আবার ফাদারদের জন্য বড় একটি বাড়ি হবে সেটারও গ্রাউন্ড ব্রেকিং হয়েছে।”
“ঈশ্বর সত্যিই আমাদেরকে অনেক কৃপা অনেক আশির্বাদ দান করেছেন। আপনারা প্রার্থনা করবেন যেন আমরা ঈশ্বরের রাজ্য স্থাপনে একসাথে কাজ করে যেতে পারি। ঈশ্বরের নামে যেন আমরা সবাই কাজ করতে পারি এবং মানুষের সেবা করতে পারি”, বলেন ফাদার জর্জ কমল ।
চাঁদপুকুর ধর্মপল্লীর কাটেখ্রিস্ট মাস্টার গুপিন তার অনুভূতি ব্যক্ত করে বলেন, “আগে থেকেই চিন্তা ছিল হাসানবেগপুরে মিশন হতে পারে। ঈশ্বর আমাদের চাঁদপুকুরবাসীর কথা মনে হয় বুঝতে পেরেছেন আর ঠিকই এই জায়গাটা বেছে নিলেন। আমাদের জন্য অনেক আনন্দের বিষয় হলো আমরা একটা মিশন এবং ফাদারকে পেয়েছি যারা আমাদেও আধ্যাত্নিক যত্ন নিবেন।”
হাসানবেগপুরে কোয়াজি ধর্মপল্লীর পাল-পুরোহিত ফাদার সুবল কুজুর, সিএসসি বলেন, “আজ আমি সত্যিই খুব খুশি এবং আনন্দিত এই জন্য যে, হাসেনবেগপুর গ্রামে বসবাস করার একটি আধা পাকা বাড়ি পেয়েছি এবং আজই বিশপ হাসেনবেগপুরকে কোয়াজি ধর্মপল্লী হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন এবং গির্জা ও ফাদার বাড়ি নির্মাণের লক্ষ্যে মাটি খনন করেছেন।”
“আমি সকলের কাছে প্রার্থনা চাই, ঈশ্বর যেই কাজ শুরু করেছেন, সেই কাজে আত্ম নিয়োগ করে আমি যেন তার ইচ্ছা পূর্ণ করতে পারি”, বলেন ফাদার সুবল কুজুর।- বরেন্দ্রদূত রিপোর্টার