দুজন যাজককে মন্সিনিয়র ও একজন সাধারণ খ্রিস্টভক্তকে পোপীয় সম্মাননা প্রদান
১১ জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টবর্ষ, দিনটি ময়মনসিংহ ধর্মপ্রদেশ তথা গোটা বাংলাদেশ মণ্ডলীর জন্য অতীব স্মরণীয় আনন্দময় ঐতিহাসিক একটি দিন। এই দিনে ময়মনসিংহ ধর্মপ্রদেশের দুজন প্রবীণ যাজক, ফাদার পিটার গোদল রেমা ও ফাদার শিমন হাচ্ছা, পুণ্যপিতা ফ্রান্সিস কর্তৃক মন্সিনিয়র উপাধিতে আনুষ্ঠানিকভাবে ভূষিত হন।
একই দিনে ময়মনসিংহ ধর্মপ্রদেশের আরেকজন নিবেদিতপ্রাণ ধর্মশিক্ষিকা ও সমাজসেবিকা মিসেস লবদিনী তেরেজা চিসিমকেও আনুষ্ঠানিকভাবে পুণ্যপিতা ফ্রান্সিস কর্তৃক প্রদত্ত ‘PRO ECCLESIA ET PONTIFICE’ সম্মাননা প্রদান করা হয়।
সাধু প্যাট্রিকের ক্যাথিড্রাল, ময়মনসিংহে উৎসর্গীকৃত হয় মহা পবিত্র খ্রিস্টযাগ, প্রধান পৌরহিত্য করেন ময়মনসিংহ ধর্মপ্রদেশের ধর্মপাল বিশপ পনেন পৌল কুবি, সিএসসি, এবং সহার্পণে ছিলেন পুণ্যপিতার প্রতিনিধি আর্চবিশপ কেভিন রান্ডাল সহ প্রায় অর্ধশত যাজক, ময়মনসিংহ ধর্মপ্রদেশের বিভিন্ন ধর্মপল্লীতে কর্মরত সিস্টার, ব্রাদার, ও ধর্মপল্লীর প্রতিনিধিবৃন্দ।
খ্রিস্টযাগে পোপের প্রতিনিধি আর্চবিশপ কেভিন রান্ডাল তাঁর উপদেশ বাণীতে উল্লেখ করেন, “এ দিনটি শুধুমাত্র ময়মনসিংহ ধর্মপ্রদেশকেই আনন্দিত করেনি, বরং বাংলাদেশ মণ্ডলীকেই আনন্দে আত্মহারা করেছে। মণ্ডলীর প্রতি তাদের একনিষ্ঠ সেবা, আনুগত্য, ত্যাগস্বীকার ও পবিত্রতা সকলের কাছে আদর্শ অনুকরণীয়।”
উপদেশ বাণীর পর পুণ্যপিতা কর্তৃক স্বাক্ষরিত ও প্রেরিত অনুজ্ঞাপত্রটি পাঠ করা হয় এবং এর পর পরই প্রদান করা হয় দুজন ফাদার শিমন হাচ্ছা ও পিটার রেমাকে মন্সিনিয়রশিপ এর বিশেষ টুপি এবং মিসেস লবদিনী চিসিমকে বিশেষ একটি মেডেল।
খ্রিস্টযাগ শেষে বিশপ ভবন সংলগ্নে অবস্থিত ‘আমা আচিক রাসং’ নামে ধর্মপ্রদেশীয় জাদুঘরের অভ্যন্তরে ফাদার হোমরিক মিলনায়তনে ভ্যাটিকান কর্তৃক প্রাপ্ত তিনজনের সম্মানার্থে আয়োজিত হয় জাঁকজমকপূর্ণ সম্বর্ধনা অনুষ্ঠান।
উল্লেখ্য যে, মন্সিনিয়র পিটার রেমা ও মন্সিনিয়র শিমন হাচ্ছা উভয়ই ময়মনসিংহ ধর্মপ্রদেশের বরুয়াকোনা ধর্মপল্লীর সন্তান এবং মিসেস লবদিনী চিসিম মরিয়মনগর ধর্মপল্লীর সন্তান। মন্সিনিয়র পিটার রেমা এ বছর যাজকীয় জীবনের পঞ্চাশটি বছর পূর্ণ করেছেন, যিনি তাঁর সুদীর্ঘ যাজকীয় জীবনের পুরোটাই ব্যয় করেছেন মান্দি ভাষা, কৃষ্টি ও সংস্কৃতির উন্নয়ণের পেছনে। তার লেখা ও সুর করা অসংখ্য মান্দি গান আজ পবিত্র উপাসনায় ব্যবহৃত হয়, যা সত্যিই অতুলনীয়। এছাড়াও তিনি গবেষণাধর্মী অনেক বই, প্রবন্ধ প্রকাশ করেছেন।
মন্সিনিয়র শিমন হাচ্ছা সুদীর্ঘ ৩৯ বছরের যাজকীয় জীবনে একনিষ্ঠভাবে সেবা দিয়ে এসেছেন। তাঁর বিশেষ অবদান হলো আন্তঃমাণ্ডলিক ও আন্তঃধর্মীয় সংলাপ জোড়ালো করার মাধ্যমে সমাজে ও মণ্ডলীতে শান্তি, একতা ও সম্প্রীতি বজায় রাখা। এই কর্মের কারণে তিনি হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, সরকারী ও বেসরকারী, আপামর সকল স্তরের মানুষের কাছে তিনি ব্যাপক পরিচিত ও জনপ্রিয়।
মিসেস লবদিনী চিসিম, সাধারণ খ্রিস্টভক্তদের কাছে আদর্শ শিক্ষিকা, সমাজসেবিকা ও অনুকরণীয় খ্রিস্টান হিসেবে সুপরিচিত, যিনি, আজ অবধি মণ্ডলীর সেবাকাজে নিজেকে যুক্ত রেখেছেন। নিম্নবিত্ত পরিবারের সাধারণ একজন গৃহিণী হয়েও মণ্ডলীর প্রেরণকাজে, মানুষের সেবায় যে জীবন উৎসর্গ করা যায় তার জীবন্ত আদর্শ এই মিসেস লবদিনী চিসিম।
ময়মনসিংহ ধর্মপ্রদেশের ধর্মপাল পনেন পৌল কুবি, সিএসসি তার বক্তব্যে ঐ তিনজনের বিষয়ে বলেন: এই তিনজন ব্যক্তিকে তাদের সেবাকাজের প্রতিদানে স্বীকৃতি ও সম্মাননা প্রদান করে পুণ্যপিতা ফ্রান্সিস গোটা গারো জাতি তথা সমগ্র বাংলাদেশ মণ্ডলীকেই সম্মানিত করেছেন।
সংবাদ :ফাদার সঞ্জয় ইগ্নাসিউস চিসিম, ময়মনসিংহ ধর্মপ্রদেশ