তেজগাঁও হলি রোজারী গির্জা লক্ষ্য করে ককটেল বিষ্ফোরণের ঘটনায় বাংলাদেশ কাথলিক মণ্ডলীর নিন্দা ও উদ্বেগ প্রকাশ

তেজগাঁও হলি রোজারী গির্জা লক্ষ্য করে ককটেল বিষ্ফোরণ

গত অক্টোবর ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, রাত ১০ টা মিনিটে ঢাকার তেজগাঁও- অবস্থিত  ঐতিহ্যবাহী সুপ্রাচীন  হলি রোজারী গির্জায় ককটেল বোমা নিক্ষেপ বিষ্ফোরণের ঘটনা ঘটে।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণে জানা যায়, দুষ্কৃতিকারীরা দুটি মোটরসাইকেল যোগে গির্জার প্রধান ফটকের সামনে এসে গীর্জা লক্ষ্য করে ককটেল নিক্ষেপ করে দ্রুতবেগে পালিয়ে যায়।

এই বিষ্ফোরণে বিকট শব্দ ধোঁয়ার কুণ্ডলী তৈরী হয়। বিস্ফোরণের শব্দে আশেপাশে সকলের মনে গভীর আতংকের সুষ্টি হয়। সাহসী উৎসুক জনতা ধীরে ধীরে ঘটনাস্থলে জড়ো হতে থাকে। খবর পেয়ে আইন-শৃংখলা বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিট অতি দ্রুত ঘটনাস্থলে আসে এবং তাদের পর্যবেক্ষণ অনুসন্ধান কাজ শুরু করেন।

গীর্জার প্রধান ফটকে এখনও বিষ্ফোরণের চিহ্ন স্পষ্ট দৃশ্যমান। এছাড়াও ঘটনাস্থল থেকে দুটি অবিষ্ফোরিত ককটেল বোমা আইন-শৃংখলায় নিয়োজিত বাহিনী বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিবর্গ দ্বারা উদ্ধার করা হয়।

বাংলাদেশের খ্রিস্টানগণ এই ঘটনায় ভীষণভাবে আতঙ্কিত উদ্বিগ্ন। বিগত তিনশত বছরেরও বেশী সময় ধরে তেজগাঁও এলাকায় খ্রিস্টান জনগোষ্ঠীর বসবাস। বাংলাদেশে বিদ্যমান গীর্জাগুলোর মধ্যেও তেজগাঁও গীর্জাটি প্রাচীনতম।

এছাড়া নগরায়নের ফলে ঢাকায় খ্রিস্টান জনগোষ্ঠীর সবচেয়ে বড় অংশের বসবাস এখানে। তেজগাঁয়ে এই গীর্জা ছাড়াও এখানে চার্চ দ্বারা পরিচালিত হলি ক্রস গার্লস্ স্কুল কলেজ, বটমলী হোম অফানেজ হাইস্কুল, তেজগাঁও চার্চ প্রাথমিক বিদ্যলয়, সেইন্ট জন ভিয়ান্নী হাসপাতালসহ বেশ কিছু সেবা প্রতিষ্ঠান কয়েছে। এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে এই বোমা বিষ্ফোরণের ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক অগ্রহণযোগ্য।

বাংলাদেশের খ্রিস্টান সমাজ আমাদের এই প্রিয় দেশ জনসেবায় অনন্য অবদান রেখে চলেছে। খ্রিস্টান সমাজ বরাবরই শান্তিপ্রিয় এবং দেশ জাতির কল্যাণ মঙ্গলে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এমতাবস্থায় খ্রিস্টানদের উপাসনালয়ের চত্বরে এই আক্রমণ হামলা একদিকে যেমন আতঙ্ক সৃষ্টি করে অন্যদিকে দেশের ধর্মনিরপেক্ষতা ধর্মীয় স্বাধীনতাকেও প্রশ্নবিদ্ধ করে।

প্রসঙ্গত: উল্লেখ্য, গত ২০০১ খ্রিস্টাব্দে গোপালগঞ্জের বানিয়ারচর গির্জায় বোমা বিষ্ফোরণের ঘটনায় ১০ জন খ্রিস্টবিশ্বাসীর মৃত্যু ২৬ জন আহত হওয়ার ঘটনার সুবিচার এখনও সম্পন্ন হয়নি। একইভাবে, এই ঘটনারও যদি দ্রুত সঠিক অনুসন্ধান এবং মূল হোতাদের চিহ্নিত আইনের আওতায় আনা না হয় তাহলে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটার সাম্পদায়িক সহিংসতাকে উসকে দেয়ার ভয় আছে এবং সংখ্যালঘু খ্রিস্টানগণ চরম নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে বাস করবে।

এই প্রেক্ষিতে, বাংলাদেশের সমগ্র খ্রিস্টান সমাজের পক্ষ থেকে সরকারের প্রতি সবিশেষ আহ্বান: যেন তেজগাঁয়ের এই বিস্ফোরণ ঘটনার ব্যাপারে দ্রুত আইনগত পদক্ষেপ নেয়া হয়; খ্রিস্টধর্মের বিশ্বাসীসহ সকল ধর্মের বিশ্বাসীগণ যেন নির্ভয়ে তাদের জীবনযাপন ধর্মপালন করতে পারে সেজন্য সকল প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।  

সংবাদ বিজ্ঞপ্তি: আর্চবিশপ বিজয় এন ডিক্রুজ, ওএমআই, ঢাকার আর্চবিশপ বাংলাদেশ কাথলিক বিশপ সম্মিলনীর সভাপতি