কাথলিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নটর ডেম কলেজের ৭৫তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদযাপন

বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী কাথলিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নটর ডেম কলেজের ৭৫তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদযাপন

গত ২৭ জানুয়ারি ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী কাথলিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নটর ডেম কলেজের ৭৫তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদযাপন করা হয়।

“প্রদীপ্ত প্রত্যয়ে প্রজ্জ্বলিত পঁচাত্তর” এই স্লোগানকে সামনে রেখে উৎসব মুখর পরিবেশে গত তিনদিন ব্যাপি সাবেক ও বর্তমান এবং কৃতি নটরডেমিয়ানদের নিয়ে উদযাপিত হলো এই প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।

অনুষ্ঠানের তৃতীয় দিনে পবিত্র খ্রিস্টযাগ অর্পনের মধ্যদিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদযাপন অনুষ্ঠান শুরু হয়। পবিত্র খ্রিস্টযাগ উৎসর্গ করেন ঢাকার আর্চবিশপ বিজয় এন. ডি’ক্রুশ, ওএমআই সহ আরো উপস্থিত ছিলেন কার্ডিনাল প্যাট্রিক ডি’রোজারিও, বাংলাদেশে ভাটিকানস্থ দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত  আর্চবিশপ  কেভিন রেনডেল, ফাদার জর্জ কমল রোজারিও, সিএসসি, ফাদার হেমন্ত পিউস রোজারিও, সিএসসি, এবং বিভিন্ন ধর্মপ্রদেশ থেকে আগত ফাদারগণ, সিস্টারগণ, ব্রাদারগণ এবং খ্রিস্টভক্তগণ।

খ্রিস্টযাগের উপদেশ সহভাগিতায় আর্চবিশপ বিজয় এন. ডি’ক্রুশ বলেন, “নটর ডেম কলেজ কাথলিক চার্চের একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য হলো মূল্যবোধসম্পন্ন জ্ঞানের বিকাশ ঘটিয়ে শিক্ষার্থীদের আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা।”

তিনি দার্শনিক প্লেটো’র কথা উল্লেখ করে বলেন, “জ্ঞানই হচ্ছে বিধাতার দানসমূহের মধ্যে সবচেয়ে বড় দান। যে ব্যক্তির কথা ও কাজ সামঞ্জস্যপূর্ণ সে ব্যক্তিই জ্ঞানী। অন্যদিকে কাথলিক খ্রিষ্টানদের ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিস বলেছেন, সত্যিকার শিক্ষা মানুষকে পরিপূর্ণ একটা ব্যক্তিত্বে রূপান্তরিত করে।”

“প্রকৃত শিক্ষা একজন ব্যক্তির সার্বিক জীবনকে গড়ে তোলে এবং প্রতিনিয়ত তার সুপ্ত প্রতিভা ও জীবনকে বিকশিত করতে সাহায্য করে”, বলেন আর্চবিশপ বিজয় এন. ডি’ক্রুশ।

কার্ডিনাল প্যাট্রিক ডি’রোজারিও বলেন, “বিগত পঁচাত্তর বছর ধরে চার্চের মিশন-দায়িত্বের অংশীদার হিসেবে নটর ডেম কলেজ দেশ, জাতি ও জনগণের জন্য শিক্ষাক্ষেত্রে এক  ব্যতিক্রমধর্মী ও অতুলনীয় সেবা ও বিরাট অবদান রেখে যাচ্ছে। বাংলাদেশে চার্চের ইতিহাসে লক্ষ্য করা যায় যে, দেশ স্বাধীন হওয়ার পরপরই কাথলিক চার্চ, দেশ ও জাতি নির্মাণের জন্য, প্রয়োজনের তাগিদে নতুন নতুন প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেছে, যার মধ্যে নটর ডেম কলেজ অন্যতম।”

“নটর ডেম কলেজের লক্ষ্য মানুষ গড়া, আলোকিত মানুষ গঠন করা এবং একই সাথে শিক্ষা ও জ্ঞানার্জনের পাশাপাশি, মানবিক ভ্রাতৃত্বে এবং নৈতিক ও আধ্যাত্নিক চরিএ গঠনে সর্বদায় অধিক গুরুত্ব আরোপ করে যাচ্ছে,” বলেন কার্ডিনাল প্যাট্রিক ডি’রোজারিও।

প্রদেশপাল পবিত্র ক্রুশ যাজক সংঘ বাংলাদেশ,  ফাদার জর্জ কমল রোজারিও, সিএসসি বলেন, “নটর ডেম কলেজ শিক্ষার পাশাপাশি ছাত্রদের নৈতিক মূল্যবোধ, ন্যায়নিষ্ঠতা, সহমর্মিতা ও সহনশীলতার মতো মানবিক গুণাবলির পরিপূর্ণ বিকাশের দ্বারা এই কলেজ সমাজ, রাষ্ট্র এমন কী সমগ্র বিশ্বের জন্য দায়িত্বপূর্ণ নাগরিক গঠনে অনবদ্য ভূমিকা পালন করে আসছে। মেধা ও মননের বিকাশের দ্বারা ছাত্রদের সার্বিক উৎকর্ষ সাধনের মাধ্যমে দক্ষ ও মানবিক গুণাবলিসমৃদ্ধ মানুষরূপে গড়ে তোলার জন্য সর্বদায় এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কাজ করে যাচ্ছে।”

“ঐতিহ্যবাহী নটর ডেম কলেজ সৃষ্টির শুভলগ্ন থেকেই জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সুশিক্ষা, জ্ঞান ও মূল্যবোধ গঠনের জন্য দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। তাই সকল পর্যায়ের শিক্ষার্থী উপযুক্ত নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে দক্ষ, যোগ্য যাজকগণ তাদের সন্ন্যাস জীবনের সর্বাধিক উৎপাদনশীল ও ফলপ্রদ সময়কে উৎসর্গ করেছেন স্বনামধন্য এই প্রতিষ্ঠানের সুশিক্ষা বিস্তারের কর্মযজ্ঞে,” বলেন ফাদার জর্জ কমল রোজারিও।

এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী একজন ছাত্র নির্মল কস্তা তার অনুভূতি ব্যক্ত করে বলেন, “প্রথমেই আমি ঈশ্বরকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই কারণ এই ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রাতষ্ঠান আমাকে মানবিক ও আধ্যাত্নিকভাবে বেড়ে উঠতে সহায়তা দান করছে, যার জন্য আজ আমি দেশের মধ্যে একজন সফল নাগরিক হিসেবে মাথা উচু করে দাড়িয়ে আছি।”

দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিশ্ব দরবারে এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা সুনাম ধরে রাখবে এমনটাই প্রত্যাশা কলেজ কর্তৃপক্ষের। তিন দিনের এই জমকালো আয়োজনের শেষে সাবেক কৃতি শিক্ষার্থীদের সম্মাননা দেয়া হয়।

নটর ডেম কলেজ প্রথম শুরু হয়েছিল পুরনো ঢাকার লক্ষ্মীবাজারে অবস্থিত সেন্ট গ্রেগরীজ হাইস্কুলে ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দের ৩রা নভেম্বর। প্রথম পাঁচ বছর এটি সেন্ট গ্রেগরীজ কলেজ নামেই পরিচিতি ছিল।

এই কলেজের প্রথম প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ ছিলেন ফাদার জন হ্যারিংটন, সিএসসি এবং তাঁর সহকারী ছিলেন ফাদার জেমস্ মার্টিন, সিএসসি। ঐ সময় কলা ও বাণিজ্য বিভাগের মাএ ১৯ জন ছাত্র নিয়ে নটর ডেম কলেজের যাত্রা শুরু হয়েছিল। - আরভিএ সংবাদ