রাজশাহী ক্যাথিড্রাল ধর্মপল্লীতে অনুষ্ঠিত হল ডিকন মুকুট গ্রেগরী বিশ্বাসের যাজকীয় অভিষেক
গত ১৮ অক্টোবর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের উওম মেষপালক ক্যাথিড্রাল ধর্মপল্লীতে অনুষ্ঠিত হল ডিকন মুকুট গ্রেগরী বিশ্বাসের যাজকীয় অভিষেক।
এ অভিষেক অনুষ্ঠানে পবিত্র খ্রিস্টযাগে প্রধান পৌরহিত্য করেন রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের বিশপ জের্ভাস রোজারিও। এতে ধর্মপ্রদেশের বিভিন্ন ধর্মপল্লী থেকে আগত প্রায় ৪৫ জন ফাদার, ৫ জন ডিকন, ৪৬ জন সিস্টার এবং আনুমানিক ১৩০০ জন খ্রিস্টভক্ত অংশগ্রহন করেন।
খ্রিস্টযাগের উপদেশ বাণীতে বিশপ জের্ভাস রোজারিও বলেন, “আমরা আজ একজন নতুন যাজক পেতে যাচ্ছি। ঈশ্বর নিজেই যাজক প্রার্থী হিসেবে বেছে নেন, মনোনয়ন এবং অভিষিক্ত করেন। ঈশ্বর নিজেই মুকুটকে বেছে নিয়েছেন। এখন থেকে মুকুট আর কারো নয় বরং তিনি ঈশ্বরের।”
বিশপ নব অভিষিক্ত যাজকের উদ্দেশে বলেন, “আজ থেকে তুমি বিশপের হয়ে ঈশ্বরের রাজ্য বিস্তারের জন্য কাজ করবে। একজন যাজক হচ্ছেন একজন পালক, শাসন কর্তা এবং প্রবক্তা। তবে আমরা তার জন্য প্রার্থনা করব যেন সুন্দর ভাবে তাঁর যাজকীয় সেবা দায়িত্ব পালন করতে পারে।”
নব অভিষিক্ত ফাদার মুকুট গ্রেগরী তার অনুভূতি ব্যক্ত করে বলেন, “ঈশ্বর আমাকে তাঁর দ্রাক্ষাক্ষেত্রে কাজ করার জন্য অভিষিক্ত করেছেন তাই প্রথমে আমি ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানাই। আমি যাজক পদে অভিষিক্ত হয়ে আজ নিজেকে অনেক ভাগ্যবান বলে মনে করছি। কারণ দীর্ঘদিন অপেক্ষার পরে ও নানা বাধাবিপত্তি অতিক্রম করে আমি আজ আমরা স্বপ্ন পূরণ করতে পেরেছি।”
ফাদার মুকুট আরো বলেন, “আজ আমি যে বিশেষ দায়িত্ব লাভ করেছি তা যেন আজীবন পবিত্র থেকে পালন করে যেতে পারি। আমার জন্য সকলেই প্রার্থনা করবেন আমি যেন সর্বদা পবিত্র থেকে বিশ্বস্তভাবে আমরা এই যাজকীয় কাজ করতে যারি।”
নব অভিষিক্ত ফাদারের মা তেরেজা বিশ্বাস তাঁর অনুভূতি ব্যক্ত করে বলেন, “আজ আমার সন্তান যাজক পদে অভিষিক্ত হয়েছে তাই আমি ভীষণ আনন্দিত ও উল্লসিত। তাই আমি ঈশ্বরকে অনেক ধন্যবাদ জানাই।”
“আমার সন্তান ঈশ্বরের দ্রাক্ষাক্ষেত্রে কাজ করবে, সকলের সেবা করবে এটিই আামি চাই। আমি প্রার্থনা করি সে যেন সুস্থ থেকে তাঁর সেবা দায়িত্ব কর্তব্য সুন্দর ভাবে পালন করতে পারে”, বলেন তেরেজা বিশ্বাস।
ক্যাথিড্রাল ধর্মপল্লীর পাল-পুরোহিত ফাদার ফাবিয়ান বলেন, “যাজকত্ব হলো যিশু হৃদয়ের ভালোবাসা ও ঈশ্বরের একটি অমূল্য ভালোবাসার দান। সেই অমূল্য আহ্বানে সাড়া দিয়ে ফাদার মুকুট গ্রেগরী এই যাজকীয় অভিষেক লাভ করেছে তাই আমি অত্যন্ত আনন্দিত। ঐশ অনুগ্রহের এই শুভ সময়ে কৃতজ্ঞ অন্তরে তাকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই।”
ধর্মপল্লীর স্কুল শিক্ষক মনিকা ঘরামী তাঁর অনুভূতি ব্যক্ত করে বলেন, “নব অভিষিক্ত যাজক মুকুটের জন্য অনেক অনেক আশির্বাদ ও প্রার্থনা রইল, সে যেন ঐশ প্রজ্ঞা, জ্ঞান ও শক্তিতে বলিয়ান হয় এবং নিষ্ঠার সঙ্গে পবিত্র থেকে ঈশ্বর, মণ্ডলী ও মানব সেবা করে যেতে পারে আমি সেই প্রত্যাশা করি।”
প্যারিশ কাউন্সিলের সহ-সভাপতি ফ্রান্সিস সরেন বলেন, “একজন যাজকের ক্ষমতা তার হৃদয়ে, জনগণের হৃদয় জয় করতে পারলেই তার আনন্দ। এসব অর্জন করতে হলে নিবিষ্টচিত্তে প্রভু পরমেশ্বরের নিকট প্রার্থনা করতে হয়। আজকে আমি খুবই আনন্দিত, পুলকিত কারণ আমার ধর্মপল্লী থেকে আমরা একজন যাজক পেলাম।”
একজন অভিষিক্ত যাজক মানুষকে আধ্যাত্মিক পথ দেখানোর মাধ্যমে স্বর্গের পথ দেখান। তিনি নিজে পবিত্র থেকে মানুষকে পবিত্রতার পথে চালিত করেন। তাই মণ্ডলীতে যাজকদের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।
পরিবারের কোন সন্তান যখন যাজক পদে অভিষিক্ত হন তখন শুধু সেই পরিবারের সদস্য-সদস্যাগণই নয় বরং গোটা গ্রাম তথা গোটা ধর্মপল্লীতেই আনন্দের সাড়া পড়ে যায়। তারা ঐশ আশির্বাদে ধন্য হয়ে ঈশ্বরকে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন।- আরভিএ সংবাদ