হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় উৎসব দীপাবলি উপলক্ষ্যে আন্তঃধর্মীয় সংলাপ বিষয়ক এপিসকপাল কমিশনের শুভেচ্ছা বাণী

হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় উৎসব দীপাবলি

প্রিয় হিন্দু ভাই বোনেরা,

হাজার হাজার বছর ধরে আপনারা আপনাদের বিশ্বাসের ধারায় শ্যামা পূজা বা কালী পূজা পালন করে আসছেন অন্ধকারসম অসূর নির্মূল রে ঐশ জ্যোতির প্রভায় জীবন গঠন এই মূল বাণী নিয়ে। আর তাই এই উৎসবের নাম ধারণ করা হয়েছে দীপাবলি।

বছর দীপাবলি উৎসব পালিত হচ্ছে ৩১ অক্টোবর ২০২৪ খ্রীষ্টাব্দ; ১৫ কার্তিক ১৪৩০ বঙ্গাব্দ। কৃষ্টি-সংস্কৃতি ঐতিহ্য অনুসারে এই সনাতনী ধর্মীয় পর্বে আপনাদের্র প্রতিটি গৃহে প্রজ্জ্বলিত হয় মাটির প্রদীপ; আলোয় আলোকিত হয় গৃহের প্রতিটি অঙ্গন; নারী-পুরুষ সবাই প্রজ্জ্বলিত প্রদীপ হাতে নিয়ে শক্তির দেবী শ্যামার নিকট প্রার্থনা জানায় প্রতিটি মানুষ যেন পাপের অন্ধকার থেকে বেরিয়েআলোকিত মানুষ হয়ে উঠে।

হিন্দু খ্রীষ্টান এই আলোর উৎসবে শুধু ঔপাসনিক দিক দিয়ে নয়, পবিত্র শাস্ত্র ভিত্তিকও একত্রে সাম্যের দৃষ্টান্ত হতে পারে। প্রথমে বলতে পারি যীশু নিজেই বলেছেন, “আমি জগতের জ্যোতি, যে আমার পশ্চাতে আসে, সে কোনমতে আধাঁরে চলবেনা, কিন্তু জীবনের দীপ্তি পাবে।

পবিত্র বাইবেলের সৃষ্টির কাহিনীতেও পাই, ঈশ্বর বললেন, “আালো হউক  আর আলোতে ভরে গেল গোটা পৃথিবী। ঔপাসনিক আমেজে বলতে পারি যে, ইস্টার সানডে পূর্বদিন নিস্তার জাগরণী পুণ্য শনিবারে যীশুই যে পুণ্য জ্যোতি, তার প্রতীক হিসেবে বৃহৎ মোমবাতি জ্বালানো হয়।

চিরকুমার ধর্মযাজক খ্রীষ্টজ্যোতি সেই বড় মোমবাতি উচু করে তুলে ধরেন এবং তাঁর সাথে সবাই জলন্ত প্রদীপ হাতে নিয়ে মহান আলো যীশুর সাথে উপাসনালয়ে শোভাযাত্রা করে প্রবশ করে এই গান গেয়ে: “প্রদীপ হাতে নিয়ে চলো, প্রভুর মহিমাগান বল ; হাতে হাতে মিলিয়ে, হিংসা-দ্বেষ ভুলে নতুন পৃথিবী  গড়ে তুলো।

বর্তমান পৃথিবীতে মানব সমাজের মধ্যে বৈচিত্র ভিন্নতা বৃদ্ধি পাছেঃ জাতি, বিভিন্ন নৃগোষ্ঠি, কৃষ্টি-সংস্কৃতির আদলে মানুষ দিনির পর দিন যেমন একসঙ্গে বসবাস করছে; আবার এই বাস্তবতায় আাহত্ম অহম হিংসা বিদ্বেষও বেড়ে চলছে।

যেন সমাজে আলোর মধ্যে অন্ধকার। এই দীপাবলি উৎসবে আমরা বিবেচনায় আনতে পারি, আমরা খ্রীষ্টবিশ্বসীরা হিন্দু ভাইবোনেরা কিভাবে বৈচিত্রের মাঝে শত ভিন্নতা থাকা সত্বেও উল্লেখিত এই বাস্তবত্র মধ্যে সম্প্রীতি বাস্তবায়ন করতে পারি।

ঐশ পরিকল্পনায় বৈচিত্র ভিন্নতা সম্প্রীতির জন্য ভীতি নয় বরং সম্প্রীতি হল বৈচিত্র ভিন্নতা-এই দুইয়ের মাঝে সম্প্রীতি নিয়ে ভ্রাতৃত্ব নিয়ে সহাবস্থান। এমন সহাবস্থানই জ্যোতির্ময়, আালোকময়। এখানে বৈচিত্র পার্থক্যকে অমৃত হিসাবে, ঈশ্বরের দান হিসাবে গণ্য করা হয়; আরর এভাবই তো সৌহার্দ বন্ধুত্ব হয়ে উঠে সম্প্রীতির বাহন।

তবে কথাও একদম সত্য যে পৃথিবীর কয়েক স্থানে রয়েছে চরম মৌলবাদ, ভোগবাদ, চরম জাতীয়তাবাদ, বর্ণবাদ এবং আরো। এগুলোই ঈশ্বর-সৃষ্ট আালোর মাঝে নিয়ে আসে অন্ধকার, হিংসা-বিদ্বেষ, অবিশ্বাস, এমন কি সূপ্ত অসন্তোস, রাগ একে অন্যের প্রতি।

এই দীপাবলী উৎসব আমাদেরকে আহ্বান জানায় ঈশ্বরের মৌলিক পরিকল্পনা পুনর্বিবচনা করতে। আমাদের বাংলাদেশে যে হানাহানি, খুন, চুরি-ডাকাতি, ক্ষমতার দম্ভ-লম্ফ এগুলোকে পরাভূত করে সম্প্রীতির সমাজ গড়ে তুলতে।

তাই আসুন, আমরা সকল ধর্ম-বর্ণ-কৃষ্টির মানুষ ভ্রাতৃত্বে এক হয়ে সম্প্রীতি নিয়ে বসবাস করি; আামাদের মধ্যে থাকবেনা কোন বৈষম্য; কোন জাতি ভেদাভেদ; আমরা সবাই ভাইবোন; সবাই সমান অধিকার দায়িত্ব নিয়ে বাংলাদেশী। এখানে থাকবেনা সংখ্যা লঘু, থাকবেনা সংখ্যা গরিষ্ঠতা। আমরা সবাই বাংলাদেশী ভাইবোন।

আলোকিত মন যেমন ইসলাম ধর্মীয় উৎসবকে সামনে  আনে, উৎসবে আনন্দ পায়, শুভেচ্ছা জানায়; তেমনি হিন্দু বৌদ্ধ ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা, বড়দিন ইস্টার, বৌদ্ধ পূর্ণিমাতেও আনন্দ পায়; শুভেচ্ছা জানায়। এখানে ধর্মীয় গোড়ামীর কোন স্থান নেই।

বর্তমান পৃথিবীতে, বর্তমান বাংলাদেশে এই সার্বজনীন ভ্রাতৃত্ব নম্প্রীতির ভীষণ প্রয়োজন। তাই আসুন, এই দীপাবলী  উৎবে আমরা প্রত্যেকেই বৈষম্য, আত্ম অহম, হিংসা-বিদ্বেষ, মিথ্যা অপবাদ এসব অন্ধকার থেকে বেরিয়ে এসে অন্তরে, আচরণে, স্বভাবে ভ্রাতৃত্ব সম্প্রীতির আলো জ্বালাই; নিজেরাই হয়ে উঠি দীপাবললির প্রদীপশিখা।

এই দীপাবলি উৎসব উপলক্ষে বাংলাদেশ কাথলিক বিশপ সম্মিলনী খ্রীষ্টি ঐক্য আন্তঃধমীয় সংলাপ কমিশন আপনাদের জানায় প্রার্থনাপূর্ণ শুভেচ্ছা আপনাদের প্রত্যেকের জীবন হয়ে উঠুক দেবতার আলোকে আলোকময়। - খ্রীষ্টিয় ঐক্য আন্তঃধর্মীয় সংলাপ বিষয়ক এপিসকপাল কমিশনের সভাপতি আর্চবিশপ লরেন্স সুব্রত হাওলাদার, সিএসসি এবং সেক্রেটারি ফাদার প্যাট্রিক গমেজ।