পবিত্র ঈদুল আযহা উপলক্ষ্যে মুসলমান ভাইবোনদের প্রতি খ্রীষ্টিয় ঐক্য ও আন্তঃধর্মীয় সংলাপ কমিশনের শুভেচ্ছা বাণী

প্রিয় মুসলমান ভাই ও বোনেরা,
পবিত্র ঈদুল ফিতরের ২ মাস ১০ দিন পর এ বছর আপনারা পালন করছেন পবিত্র ঈদুল আযহা। এখানে প্রধান ধর্মীয় কর্মই হল আল্লাহতালার কাছে পশু কুরবান এবং এর দ্বারা তাঁকে তুষ্ট করা; কেননা তাঁর তুষ্টি এনে দেয় আপনাদের উপর শত রহমত।
আপনাদের বিশ্বাস মতে পবিত্র কোরানে বর্ণিত আব্রহাম (ইব্রাহিম) তার সন্তান, ইসমায়েলকে কুরবান দেওয়ার ঘটনার উপর ভিত্তি করেই আাপনাদের এই ঈদুল আযহার সময় পশু কোরবান দেওয়া। তাই এই ঈদের নাম কুরবাণীর ঈদ নামেও আখ্যায়িত। অধিকন্তু কুরবাণীর এই মাংস আবার দরিদ্র ও মিসকিনদের মাঝে বিতরণ করারও বিধান রয়েছে।
খ্রীষ্ট ধর্মেও পবিত্র বাইবেলের পুরাতন নিয়মে আব্রাহামের বলিদান ঘটনাটির উল্লেখ রয়েছে। ঈশ্বরের পরীক্ষায় জয়ী হয়েছিলেন, তিনি ঈশ্বরের কাছে তাঁর একমাত্র পুত্র ইসাহাককে উৎসর্গ করতে প্রস্তুত ছিলেন।
আপনাদেরকে শুভেচ্ছা জানাবার সাথে সাথে আমরা উভয় ধর্মের মানুষই সহভাগিতা করতে পারি এই ঈদের মূল আধ্যাত্মিক বাণী। জগতের পশুবলিতে সৃষ্টিকর্তা তুষ্ট হন, এটি আপনাদের বিশ্বাস। তবে আরো গভীরে গেলে দেখা যাবে যেমন বর্তমান জগতে, সমাজে, দেশে, পরিবারে এমনকি ব্যক্তির মধ্যে রয়েছে অনেক অনৈতিক, অধর্মীয় অসামাজিক পাপাচার যাকে আমরা “পশুত্ব” হিসাবে চিহ্নিত করতে বা আাখ্যায়িত করতে পারি।
আরর এমন পাশবিক আচরণেই আসে যুদ্ধ-বিগ্রহ, মারামারি, হিংসা-বিদ্বেষ। এমন ধরণের পাশবিক কার্যকলাপকে নিজের জীবনে শেষ করে দেওয়া, কুরবান দেওয়া বর্তমানে খুবই প্রয়োজন। আার এই সত্য ও প্রয়োজন মুসলমান, খ্রীষ্টান, বৌদ্ধ-সনাতন সকল ধর্মেরই মানুষেরই।
কুরবানের মাংস দরিদ্রদের বিতরণ। তাতে আাল্লাহতালা খুবই প্রীত হন। শুধু মাংস বিতরণেই নয়, যখন আমরা সবার সাথে, সকল ধর্মের মানুষের সাথে বিতরণ করি ভ্রাতৃত্ব, সংলাপ-সম্প্রীতি, গড়ে তুলি শান্তি-সম্প্রীতির সমাজ, নিজেদের মধ্য থেকে দূর করে দেই পাশবিক সব আচরণ ও কার্যকলাপ তবেই ঈদুল আযহা দিনদিন প্রতিদিন, সবার ঘরে।
প্রয়াত পোপ ফ্রান্সিসের মতে, আমরা যে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই ভাইবোন এর উপর খুবই জোর দিয়েছেন। জোর দিয়েছেন আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতির উপর; আহ্বান জানিয়েছেন যুদ্ধরত দেশগুলোকে যুদ্ধ বন্ধ করতে। দেশের পাশবিক আাচরণকে বন্ধ করে শান্তি স্থাপন করতে।
আর বর্তমান পোপ পুণ্যপিতা পোপ চতুর্দশ লিও প্রথমেই শান্তির আাহবান জানিয়েছেন সবার প্রতি, দেশগুলোর প্রতি। সবাইকে দু’হাত বাড়িয়ে অভিবাদন করে বলেছেন, “তোমাদের শান্তি হোক।” যুদ্ধরত দেশগুলোর নাম উল্লেখ করে উদাত্য আহ্বান জানিয়েছেন যুদ্ধ নামক “পশুত্ব” একদম কুরবান দিয়ে শান্তি স্থাপন করতে। এর ফলে যুদ্ধরত দেশগুলো শুরু করেছে শান্তির করমর্দন করতে।
এবারের পবিত্র ঈদুল আযহা’র মূল প্রতিপাদ্য বিষয়ই হোক পাশবিক শক্তি ও কর্মকাণ্ডের নিধন; শান্তির সুবাতাস হোক প্রবাহমান। আার তা শুধুমাত্র মুসলমানদের জন্যই নয়, এই আহ্বান জাতি-ধর্ম-বর্ণ সবার প্রতি।
সুপ্রিয় মুসলিম ভাই ও বোনেরা, এবারের ঈদুল আযহা মহোৎসবে মহান সৃষ্টিকর্তা আপনাদের উপর বর্ষণ করুন তাঁর শত অনুগ্রহ, আশীর্বাদ, তৌফিক; আপনারা লাভ করুন মহান আল্লাহতালার রহমত। ঈদের নামাজে দোয়া ভিক্ষা করুন সকল দেশে, আমাদের বাংলাদেশে, আমাদের সবার অন্তরে ‘পশুত্ব’ বর্জন ও শান্তি স্থাপনের জন্য।
বাংলাদেশ কাথলিক বিশপ সম্মিলনী’র খ্রীষ্টিয় ঐক্য ও আন্তঃধর্মীয় সংলাপ কমিশনের নামে আপনাদের সবাইকে জানাই পবিত্র ঈদুল আযহা’র আন্তরিক শুভেচ্ছা: ঈদ মোবারক ! - খ্রীষ্টিয় ঐক্য ও আন্তঃধর্মীয় সংলাপ কমিশনের সভাপতি আর্চবিশপ লরেন্স সুব্রত হাওলাদার, সিএসসি ও নির্বাহী সচিব ফাদার প্যাট্রিক গমেজ।