বিশ্ব যুব ক্রুশ চট্টগ্রামে “ঈশ্বরের ভালোবাসার সাক্ষ্যে এক ঐতিহাসিক যাত্রা”

গত ০৬ এপ্রিল ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, চট্টগ্রাম মহাধর্মপ্রদেশে বিশ্ব যুব ক্রুশের আগমন ঘটে এবং শত শত খ্রিস্টভক্তের অংশগ্রহণে সারাদিনব্যাপী ক্রুশের আরাধনা, প্রার্থনা ও খ্রিস্টযাগের মধ্য দিয়ে ক্রুশের প্রতি ভক্তি ও ভালোবাসা নিবেদন করা হয়।
ক্রুশ পরিত্রাণের চিহ্ন এবং মানবজাতির প্রতি ঈশ্বরের অপার ভালোবাসার এক জীবন্ত নিদর্শন। যে ক্রুশ ছিল একসময় বর্বর নির্যাতনের প্রতীক, প্রভু যীশুর ক্রুশীয় মৃত্যুবরণের মধ্য দিয়ে সেটিই আজ অপার মহিমায় পরিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
বিশ্ব যুব ক্রুশ অতি সাধারণ একটি কাঠের ক্রুশ। ১৯৮৩ খ্রিস্টাব্দে পরিত্রাণের পূণ্যবর্ষ উপলক্ষ্যে পোপ দ্বিতীয় জন পল এটি প্রথম স্থাপন করেন রোমে অবস্থিত সাধু পিতরের মহামন্দিরে।
১৯৮৪ খ্রিস্টাব্দে এই ক্রুশের যাত্রা শুরু হয় যখন সাধু পোপ দ্বিতীয় জন পল যুবসমাজকে রোমে আহ্বান জানান এবং তিনি যুবকদের হাতে এই ক্রুশ তুলে দিয়ে বলেন, “তোমরা এটি সারা পৃথিবীতে বহন করো এবং খ্রিস্টের ভালোবাসার সাক্ষ্য দাও।”
সেই থেকে বিশ্ব যুব ক্রুশ ভ্রমণ করছে দেশ থেকে দেশে, এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মের মাঝে এবং সেই সাথে বহন করছে মানবজাতির প্রতি ঈশ্বরের ভালোবাসার বার্তা। এই ক্রুশের মধ্য দিয়ে অসংখ্য যুবক-যুবতী নিজের জীবনের আলো ফিরে পেয়েছে এবং সেই আলো দিয়ে জগতের অন্ধকার দূর করতে সচেষ্ট হয়েছে।

বিশ্বব্যাপী অসংখ্য যুবক-যুবতীর স্পর্শ, প্রার্থনা ও ভালোবাসায় অতি সাধারণ এই কাঠের ক্রুশটি হয়ে উঠেছে অসাধারণ ও যুবদের শক্তি ও আশার প্রতীক।
ক্রুশের সাথে সহযাত্রী মা-মারীয়ার প্রতিকৃতি যীশু খ্রিস্টের যাতনাভোগের সময় যেমন মা-মারীয়া তার পুত্রের সাথে যাত্রা করেছেন। একজন মা হয়েও তার পুত্রের অপরিসীম কষ্ট দেখেছেন, সহ্য করেছেন এবং মানবজাতির কল্যাণে তার পুত্রকে সেই পথ পাড়ি দিতে সাহস জুগিয়েছেন। তেমনিভাবে বিশ্ব যুব ক্রুশের সাথে বহন করা হয় মা-মারীয়ার প্রতিকৃতি যেন তিনি সকল যুবক-যুবতীকে নিজ নিজ জীবনের ক্রুশ বহনে সাহস, প্রেরণা ও শক্তি জুগিয়ে দেন।
প্রতি তিন বছর পর পর পূণ্যপিতা পোপ মহোদয়ের আহ্বানে সারা বিশ্ব হতে যুবক যুবতীগণ একত্রিত হয়ে বিশ্ব যুব দিবস উদ্যাপন করে। বিগত বছরগুলোতে বিভিন্ন মহাদেশ ঘুরে ২০২৭ খ্রিস্টাব্দে এশিয়া মহাদেশের দক্ষিণ কোরিয়াতে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বিশ্ব যুব দিবস।
এর আগে ইতালী, আর্জেন্টিনা, স্পেন, পোল্যান্ড, আমেরিকা, ফিলিপিনস্, ফ্রান্স, কানাডা, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, পানামা ও পর্তুগালে বিশ্ব যুব দিবস অনুষ্ঠিত হয়েছে।
যেহেতু এশিয়া মহাদেশে আগামী বিশ্ব যুব দিবস অনুষ্ঠিত হবে তাই বাংলাদেশের জন্য সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে এই ক্রুশ প্রথমবারের মত আনয়নের।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রামে আসার পূর্বে দিনাজপুর, রাজশাহী ও ঢাকাতে এই ক্রুশ যাত্রা করেছে। এবং চট্টগ্রামে যাত্রা শেষ করে এই ক্রুশ জাপানে নেয়া হবে। - ফ্লেভিয়ান ডি’কস্তা