রেডিও ভেরিতাস এশিয়া বাংলা বিভাগের শ্রোতা সম্মেলন, আরভিএ দিবস ও যিশু খ্রিষ্টের জন্মের জুবিলী বর্ষ উদযাপন
গত ৫ ডিসেম্বর ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, লক্ষ্মীবাজার আর্চবিশপ টি.এ. গাঙ্গুলী হল রুমে রেডিও ভেরিতাস এশিয়া বাংলা বিভাগের শ্রোতাদের নিয়ে অনুষ্ঠিত হলো শ্রোতা সম্মেলন, আরভিএ দিবস ও যিশু খ্রিষ্টের জন্মের জুবিলী বর্ষ উদযাপন।
এই দিবসকে কেন্দ্র করে মূলসুর হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছিল, “আশার র্তীথযাত্রী: সত্য প্রচারে আমরা”। এতে ১ জন বিশপ, ১০ জন ফাদার, ১৫ জন সিস্টার, ২ জন ব্রাদার সহ প্রায় ১৪০ জন অংশগ্রহন করেন।
খ্রিস্টান, মুসলিম, হিন্দু সকল শ্রোতাদের অংশগ্রহনে উৎসবমুখর আনন্দ নিয়ে এই দিবসটি উদযাপন করা হয়। খ্রিস্টযাগ উৎসর্গ করার মধ্য দিয়ে এই দিবসের শুরু হয়।
এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সামাজিক যোগাযোগ কমিশনের চেয়ারম্যান এবং অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি বিশপ জেমস্ রমেন বৈরাগী, খুলনা ধর্মপ্রদেশ এবং অনুষ্ঠানের সভাপতি এবং খ্রিস্টিয় যোগাযোগ কেন্দ্রের পরিচালক ফাদার বুলবুল আগষ্ঠিন রিবেরু এবং রেডিও ভেরিতাস এশিয়া বাংলা বিভাগের কো-অর্ডিনেটর ফাদার নিখিল গমেজ।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ফাদার উজ্¦ল লিনুস রোজারিও, পাল-পুরোহিত লক্ষ্মীবাজার ধর্মপল্লী, ফাদার পলাশ গমেজ, মি. থিওফিল নকরেট, পরিচালক, সিডিআই, কারিতাস বাংলাদেশ, মি. জেমস গমেজ, পরিচালক, মটস ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ, মি. প্রদীপ আগস্টিন গমেজ, পরিচালক, হাউজিং সোসাইটি ও মিসেস ফ্লোরেন্স গমেজ, প্রিন্সিপাল ওয়াই.ডব্লিউ সি.এ, এবং প্রাক্তন প্রযোজক রেডিও ভেরিতাস এশিয়া বাংলা বিভাগ।
দিনব্যাপী এই অনুষ্ঠানের মধ্যে ছিলো পবিত্র খ্রিস্টযাগ, জাতীয় সংগীত, পতাকা উত্তোলন, শপথ পাঠ, প্রদীপ প্রজ্জ¦লন, ধর্মগ্রন্থ থেকে পাঠ, উত্তরীয় প্রদান, শ্রোতাদের পরিচয় পর্ব, ডকুমেন্টারি প্রদর্শন, বিশেষ অতিথিদের বক্তব্য, শ্রোতাদের অনুভূতি প্রকাশ, ক্রেস্ট প্রদান এবং কেক কাটা অনুষ্ঠান।
রেডিও ভেরিতাস এশিয়া বাংলা বিভাগের কো-অর্ডিনেটর ফাদার নিখিল গমেজ তার শুভেচ্ছা বক্তব্যে বলেন, “দর্শক ও শ্রোতা বন্ধুরাই হচ্ছে রেডিও ভেরিতাস এশিয়া বাংলা বিভাগের প্রাণ। র্দীঘ এই ৪৫ বছরের পথ চলায় শ্রোতারাই রেডিও ভেরিতাসের মূল চালিকা শক্তি ও প্রেরণার উৎস।”
ফাদার গমেজ আরও বলেন, “নির্বাক মানুষের কন্ঠস্বর রেডিও ভেরিতাস এশিয়া। ভেরিতাস অর্থ সত্য। আর এই সত্য মানুষকে আলোর পথ দেখায়। এই সত্যকে মানুষের কাছে প্রচার করার জন্যই ফিলিপাইনের রাজধানী ম্যানিলার কেজন সিটিতে, রেডিও ভেরিতাস এশিয়া প্রতিষ্ঠা করা হয়।”
“রেডিও ভেরিতাস এশিয়া বাংলা বিভাগের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলো জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকলের মধ্যে সংলাপ, মিলন ও ভ্রাতৃত্ব গড়ে তোলা এবং সত্যকে প্রচার ও প্রকাশ করা,” বলেন ফাদার নিখিল।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বিশপ জেমস রমেন বৈরাগী, খুলনা ধর্মপ্রদেশ এবং সামাজিক যোগাযোগ কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, “ “এবছর রেডিও ভেরিতাস এশিয়া বাংলা বিভাগ ৪৫তম দিবস ও শ্রোতা সম্মেলন এবং খ্রিস্টের জন্মের জুবিলী বর্ষ উদযাপন করছে যা সত্যিই অনেক আনন্দের, কারণ এখানে খ্রিস্টান, মুসলিম, হিন্দু সকল শ্রোতারা একএে মিলিত হতে পেরেছি যা আন্তঃধর্মীয় সংলাপের একটি বহ্নি প্রকাশ। রেডিও ভেরিতাস এশিয়া বাংলা বিভাগ সকলকে নিয়ে একসাথে সত্য প্রচারে ও প্রকাশে কাজ করবে আমি এই প্রত্যাশা করি।”
তিনি আরও বলেন, “প্রতিটি ধর্ম সত্য তুলে ধরতে অনুপ্রাণিত করে। কোন ধর্মই বলে না মিথ্যার আশ্রয় নিতে, আমাদের মৌলিক মূল্যবোধ হচ্ছে আমাদের সত্যের মানুষ হতে হবে।”
রেডিও ভেরিতাস এশিয়া বাংলা সার্ভিসের নিয়মিত শ্রোতা হ্যাপি সরদার তার অনুভূতি ব্যক্ত করে বলেন, “আজকের এই প্রোগ্রামে আসতে পেরে আমি নিজেকে গর্বিত মনে করছি তাই ধন্যবাদ জানাই আমাকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য। রেডিও ভেরিতাসের নিয়মিত প্রোগ্রামগুলো আমাদের দৈনন্দিন ও আধ্যাত্মিক জীবনে বেড়ে উঠতে সহায়তা করে। বিশেষভাবে বাইবেল পাঠ ও রবিবাসরীয় ভাষ্য অনুষ্ঠানে ফাদারদের উপদেশগুলো আমাদের আধ্যাত্নিকতায় বেড়ে উঠতে সাহায্য করে।”
রেডিও ভেরিতাস এশিয়া বাংলা বিভাগের নিয়মিত শ্রোতা ও দর্শক দিদারুল ইকবাল বলেন, “এই রেডিও ভেরিতাস এশিয়া বাংলা বিভাগের বিভিন্ন অনুষ্ঠান শুনে এবং দেখে আমার জীবনকে আমি অনেক পরিবর্তন করতে পেরেছি এবং অনেক কিছু শিখতে পেরেছি। তাই আমি রেডিও ভেরিতাস এশিয়া’র সকল কর্মী ভাই-বোনদের অনেক ধন্যবাদ জানাই তাদের সুন্দর আধ্যাত্নিক ও নৈতিক শিক্ষা মূলক অনুষ্ঠানের জন্য। আমি রেডিও ভেরিতাস এশিয়া বাংলা বিভাগের সাথে আছি এবং সব সময় থাকব।”
খ্রিস্টীয় যোগাযোগ কেন্দ্রের পরিচালক ফাদার বুলবুল আগষ্টিন রিবেরু বলেন, “ অনলাইন শ্রোতার সংখ্যা বড় নয়, প্রকৃত বিষয় হলো সত্য আর তাইতো আজকের এই দিবসের মূলসুর হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে “আশার তীর্থযাত্রী: সত্য প্রচারে আমরা। রেডিও ভেরিতাস এশিয়া বাংলা সার্ভিসকে আমাদের নিজেদের ভিতরে ধারণ করতে হবে।”
“তবে আমরা সৌভাগ্যবান যে আমরা এখন বাংলাদেশ থেকে কো- অর্ডিনেটর পেয়েছি যার মাধ্যমে আমাদের বাংলাদেশকে আরো বেশি সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে সহায়ক হবে,” বলেন রিবেরু।
উল্লেখ্য যে, ১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দে ১১ এপ্রিল এশিয়ার কাথলিক বিশপগণ রেডিও ভেরিতাস এশিয়া প্রতিষ্ঠা করেন সত্যকে মানুষের কাছে প্রচার করার জন্য। ফিলিপাইনের রাজধানী ম্যানিলার কেজন সিটি থেকে এশিয়ার ২২টি ভাষায় বর্তমানে প্রায় ২০০ কোটি অধিক মানুষের কাছে এই সত্যবাণী প্রচার করা হচ্ছে।
বাংলা ভাষায় আরভিএ এর সত্য বাণী প্রচার শুরু হয় ১৯৮০ খ্রিষ্টাব্দের ১ ডিসেম্বর যা আজও চলমান রয়েছে। আসুন আমরা নির্বাক মানুষের কণ্ঠস্বর তুলে ধরি রেডিও ভেরিতাসের মধ্য দিয়ে গোটা বিশ্বের কাছে।
রেডিও ভেরিতাস এশিয়া বাংলা বিভাগ বর্তমানে বিশ্বের ৫৬টা দেশের মানুষ এই ওয়েব সাইট বিজিট করছে। আর বর্তমানে রেডিও ভেরিতাস এশিয়া বাংলা বিভাগের ফেজবুকে ফলোয়ারস আছে ৩৬,২৫১ অধিক।
উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভিউয়ার্স চট্রগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, কিশোরগঞ্জ, মৌলোভীবাজার, টঙ্গী, দিনাজপুর এবং বরিশাল।
এই রেডিও ভেরিতাস এশিয়া একটা নন-প্রফিটেবল অর্গানাইজেশন বা অলাভজনক একটি প্রতিষ্ঠান এবং এটা কাথলিক চার্চ দ্বারা পরিচালিত। আপনারা যে প্রোগ্রাম গুলো দেখেন তা বিজ্ঞাপন ছাড়া বা এড বিহীন। তবে দর্শক ও শ্রোতা বন্ধুরাই হচ্ছে রেডিও ভেরিতাস এশিয়া’র প্রাণ । র্দীঘ এই পথ চলায় তারাই রেডিও ভেরিতাসের মূল চালিকা শক্তি ও প্রেরণার উৎস। - আরভিএ সংবাদ