খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের উপর হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন
গত ১৭ আগস্ট ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বাংলাদেশ খ্রীষ্টান এসোসিয়েশনের উদ্যোগে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সন্মুখে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের উপর হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন করা হয়।
দেশে চলমান পরিস্থিতিতে খ্রিস্টান সম্প্রদায়সহ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর সংঘটিত হামলা, ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ, লুটতরাজ ও হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে এবং জড়িতদের শাস্তির দাবীতে এক মানববন্ধন কর্মসূচীর আয়োজন করা হয়।
মানববন্ধনে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন এসোসিয়েশনের মহাসচিব হেমন্ত আই কোড়াইয়া, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের যুগ্ম মহাসচিব শ্রী মনিন্দ্র কুমার নাথ, এসোসিয়েশনের যুগ্ম মহাসচিব জেমস সুব্রত হাজরা, চার্চ অব বাংলাদেশের পুরোহিত রেভা. ইম্মানুয়েল মিঠু মল্লিক।
অন্যদিকে আরো উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ খ্রীষ্টান এসোসিয়েশনের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক থিওফিল রোজারিও, পাস্টর জেমস জিপু রয়, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা জলি তালুকদার, দি খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লি:, ঢাকা এর চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার লিটন টমাস রোজারিও, বাংলাদেশ খ্রীষ্টান নারী এসোসিয়েশনের সদস্য সচিব করবী জয়ধর, বাংলাদেশ খ্রীষ্টান যুব এসোসিয়েশনের আহ্বায়ক লিংকার্স বি রোজারিও প্রমুখ।
বাংলাদেশ খ্রীষ্টান এসোসিয়েশনের মহাসচিব ইগ্নাসিওস হেমন্ত কোড়াইয়া’র দেয়া তথ্যমতে, জুলাই ও আগষ্ট মাসে নওগাঁ জেলায় চার্চ অব বাংলাদেশে হামলা, দিনাজপুরে ইভ্যানজিলিক্যাল হলিনেস চার্চে হামলা, নারায়নগঞ্জের মদনপুরে ঢাকা ক্রেডিটের কালেকশন বুথ লুট করে অগ্নিসংযোগ, বরিশালের গৌরনদীতে তিনটি খ্রিষ্টান বাড়ীতে হামলা করা হয়েছে।
“স্বাধীন দেশে আমরা ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা অধিকার নিয়ে বাঁচতে চাই। খ্রীষ্টান সম্প্রদায়সহ অন্যান্য কোনো সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর হামলা আমরা কিছুতেই মেনে নিব না। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালিন সরকারের কাছে আমাদের দাবী এই হামলার সুষ্ঠুতদন্ত সাপেক্ষে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে,” বলেন কোড়াইয়া।
এছাড়াও, খুলনা শহরে একটি খ্রীষ্টান বাড়ী, ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটের আসকিপাড়ায়, পার্বতীপুরের হরিপুর মুন্সিপাড়ায়, ঠাকুরগাঁওয়ের নিজপাড়া মিশনে মা মারীয়ার মূর্তি ভাংচুরকরা সহ বিভিন্ন মিশনারী স্কুল-কলেজে হামলার চেষ্টা ও হুমকী দেয়া হয়েছে।
মানববন্ধনে বাংলাদেশ খ্রীষ্টান এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট নির্মল রোজারিও খ্রিষ্টানসহ সকল সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর হামলার বিচার দাবী করে বলেন, “প্রেসক্লাবের সামনে এসে প্রতিবাদ জানাতে জানাতে আমরা ক্লান্ত হয়ে গিয়েছি, একের পর এক ঘটনা ঘটতে থাকে এবং আমাদের এখানে এসে প্রতিবাদ জানাতে হয়। কিন্তু দুঃখের বিষয় বেশিরভাগ দাবিগুলোই বাস্তবায়ন হয় না।”
রোজারিও বলেন, “গত ৫ তারিখে সরকার পরিবর্তনের পরে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর যে হামলা হয়েছে সেটা আমরা কখনো চিন্তা করতে পারিনি। বার বার সরকার পতনের পরে যে হামলা হয় সংখ্যালঘুদের উপর এবার তার চেয়ে বেশি হয়েছে।” তিনি এই ধরণের ঘটনার চিরতরে অবসান চান।
বাংলাদেশ খ্রীষ্টান এসোসিয়েশন সম্প্রতি দেশে খ্রীষ্টানসহ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর হামলার তদন্ত সাপেক্ষে দ্রুত বিচারের ব্যবস্থা করা, ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ, ’৭২ এর সাংবিধানের মৌল চেতনায় ফিরে যাওয়া, সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রনয়ণ, ইস্টার সানডেতে সরকারি ছুটি, গোপালগঞ্জের বানিয়ারচরে গির্জায় বোমা হামলার বিচার ও আন্তর্ভুক্তিমূলক রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে তোলার দাবি জানান।
মানববন্ধনে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনিন্দ্র কুমার নাথ উপস্থিত থেকে বলেন, “আমরা অত্যন্ত দুঃখের সাথে বলতে চাই এই বৈষ্ণম্য বিরোধি ছাত্র-জনতার আন্দোলনকে ঘিরে বাংলাদেশে খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে হামলা হয়েছে। হামলা হয়েছে আদিবাসী ও হিন্দুদের মন্দির, বাড়ীঘরে।”
এই ধরণের হামলা চিরতরে নিরসনের ও ধর্মীয় স্বাধীনতার দাবি করেন মনিন্দ্র কুমার নাথ।
এছাড়াও তাঁরা অন্তর্বতীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে একজন খ্রীষ্টান প্রতিনিধি রাখারও দাবী জানিয়েছেন। - ডিসিনিউজবিডি