প্রসঙ্গ পোপ ফ্রান্সিস - তাঁর মৃত্যুতে বিশ্ব নেতারা কি বললেন

পোপ ফ্রান্সিস

জর্জ মারিও বার্গোগলিও যিনি পোপ ফ্রান্সিস নামে পরিচিত হন, তিনি লাতিন আমেরিকার, আর্জেন্টিনা থেকে প্রথম পোপ নির্বাচিত হন ১৩ মার্চ ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দে। পোপ ফ্রান্সিস ২১ এপ্রিল ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দে রোমের সময় সকাল ৭:১৫ তে এই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে পরলোক গমন করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর। তিনি রোমান ক্যাথলিক চার্চের ২৬৬ তম পোপ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তিনি সর্ব ধর্মের মানুষের কাছে জনপ্রিয় হয়েছিলেন তাঁর নম্রতা, করুণা এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের জন্য।

১৯৩৬ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ ডিসেম্বর আর্জেন্টিনার বুয়েনেস আইরেসে তিনি জন্মগ্রহণ করেন ইতালীয় অভিবাসী পরিবারে। তাঁর বাবার নাম ছিল মারিও জোস বার্গোগলিও এবং তাঁর মা’র নাম ছিল রেজিনা মারিয়া সিভোরি। তাঁর বাবা ছিলেন রেলের হিসেবরক্ষক। তাঁর মা ব্যাস্ত থাকতেন তাঁর পাঁচ সন্তানদের দেখাশোনার কাজে।   

পোপ ফ্রান্সিস

পোপ ফ্রান্সিস রসয়ান প্রকৌশলী হিসেবে গ্র্যাজুয়েট হন এবং ১১ মার্চ ১৯৫৮ খ্রিষ্টাব্দে জেসুইট (যীশু সঙ্ঘ) সমাজে অন্তরভুক্ত হন। এরপর চিলিতে তিনি কলা বিভাগে পড়াশোনা শেষ করে আর্জেন্টিনাতে ফিরে আসেন  এবং ১৯৬৩ খ্রিষ্টাব্দে স্যান মিগুয়েলের কলেজিও দ্য স্যান জোস থকে দর্শনশাস্ত্রে গ্র্যাজুয়েট ডিগ্রি প্রাপ্ত হন। ১৯৬৪ – ১৯৬৫ খ্রিষ্টাব্দ অবধি তিনি সান্তা ফে তে ইম্মাকুলেট কনসেপসন কলেজে সাহিত্য এবং দর্শনশাস্ত্র অধ্যাপনা করতেন। ১৯৬৭ থেকে ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দ অবধি তিনি কলেজিও অফ স্যান জোস থেকে ধর্মতত্ত্ব অধ্যয়ন করে ডিগ্রি প্রাপ্ত হন।

১৩ ডিসেম্বর ১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দে পুরোহিত হিসেবে অভিসিক্ত হন আর্চবিশপ রামন জোস কাস্তেলানোর দ্বারা। ৩১ জুলাই ১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দে তিনি আর্জেন্টিনার জেসুইটদের প্রাদেশিক নিযুক্ত হন এবং এই পদে টানা ছয় বছর আসীন ছিলেন।

পোপ ফ্রান্সিস

পোপ ফ্রান্সিসের প্রথম জীবনের কর্মকান্ড শিক্ষা, যাজকীয় কাজ, এবং সামাজিক প্রচারণার প্রতি গভীর প্রতিশ্রুতির দ্বারা চিহ্নিত ছিল যা প্রায়শই সমাজের প্রান্তিক মানুষদের ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে।

বুয়েনেস আইরেসের আর্চবিশপ কার্ডিনাল আন্তোনিও কুয়ারসিনো তাঁকে একজন সহযোগী হিসেবে চেয়েছিলেন। তাই ২০ মে ১৯৯২ খ্রিষ্টাব্দে পোপ দ্বিতীয় জন পল তাঁকে আউকা এবং বুয়েনেস আইরেসের সহকারী আর্চবিশপ পদে নিযুক্ত করেন।

তাঁর সহজলভ্য আচরণ, এবং বিশেষ করে দরিদ্র ও শরণার্থীদের প্রতি করুণা ও অন্তর্ভুক্তির ওপর জোর দেওয়ার জন্য পরিচিত হয়ে ওঠেন। তাঁর যাজকীয় অগ্রাধিকারের মধ্যে ছিল দারিদ্র্য মোকাবেলা, পরিবেশের পক্ষে থাকা ও পরিবেশের উন্নতির কাজ করা এবং আন্তঃ ধর্মীয় সংলাপ প্রচার।   

২১ ফেব্রুয়ারি ২০০১ খ্রিষ্টাব্দে তাঁকে পোপ দ্বিতীয় জন পল তাঁকে কার্ডিনাল পদে নিযুক্ত করে উপাধি প্রদান করেন স্যান রোবার্টো বেলারমিনো।

এপ্রিল ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দে তিনি কনক্লেভে অংশ নেন যেখানে পোপ ষোড়শ বেনেডিক্ট নির্বাচিত হন।

১৩ মার্চ ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দে তিনি পোপ হিসেবে নিযুক্ত হন।

পোপ ফ্রান্সিস

পোপ ফ্রান্সিসের পরলোকগমনের সংবাদ ২১ এপ্রিল ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দে ছড়িয়ে পড়ার পর বিশ্ব নেতারা তাঁদের শোক প্রকাশ করেছেন এবং সমবেদনা জানিয়েছেন।

আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট জাভিয়ের মিলেই বলেন, “আর্জেন্টিনা দেশটি ক্যাথলিক ঐতিহ্যের দেশ এবং পোপ ফ্রান্সিসের জন্মভূমি। আর্জেন্টিনা পুণ্য পিতা পোপ ফ্রান্সিসের মৃত্যুতে গভীরভাবে শোকাগ্রস্থ এবং বার্গোগলিও পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানায়।“

ভারতের প্রধানমন্ত্রী, শ্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছেন, “পোপ ফ্রান্সিসকে সারা বিশ্বের লক্ষ লক্ষ মানুষের কাছে করুণা, নম্রতা এবং আধ্যাত্মিক সাহসের এক আলোকবর্তিকা হিসেবে সর্বদা স্মরণ করা হবে। তিনি দরিদ্র এবং নিপীড়িতদের সেবায় নিবেদিতপ্রাণ ছিলেন। যারা কষ্ট ভোগের মধ্যে আছেন তাদের জন্য তিনি আশার আলো জ্বালিয়েছিলেন।“

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, মহঃ ইউনুস দেশের তরফ থেকে গভীর সমবেদনা জানিয়ে বলেন, “তিনি সম্মানিত পোপ ফ্রান্সিসের সঙ্গে দেখা করতে পেরে। তিনি একজন প্রকৃত বন্ধু এবং আত্মার আত্মীয় ছিলেন।“

পোপ ফ্রান্সিস

আমেরিকার প্রেসিডেন্ট, ট্রাম্প বলেছেন, “পোপ ফ্রান্সিস শান্তি কামনা করি। ঈশ্বর তাঁকে এবং তাঁকে যারা ভালোবাসতেন তাদের সকলকে আশীর্বাদ করুন। তিনি একজন ভালো ব্যক্তি ছিলেন, কঠিন পরিশ্রম করতেন, তিনি পৃথিবীকে ভালোবাসতেন।“

ব্রিটেনের রাজা চার্লস বলেন, “মহামান্য পোপ ফ্রান্সিস মনে থাকেবেন তাঁর পবিত্রতা, তাঁর করুণা, গির্জার ঐক্যের প্রতি তাঁর উদ্বেগ এবং সকল বিশ্বাসী মানুষের এবং অন্যদের কল্যাণের জন্য তাঁর কাজ এবং তাঁর সদিচ্ছার প্রতি তাঁর অক্লান্ত পরিশ্রমের জন্য।“

ইউক্রেনের প্রধানমন্ত্রী ভোলোদোমির জেলেন্সকি বলেন, “তাঁর জীবন ঈশ্বর, মানুষ এবং চার্চের প্রতি নিবেদিত ছিল। তিনি জানতেন কিভাবে আশা দিতে হয়, প্রার্থনার মাধ্যমে দুঃখ লাঘব করতে হয় এবং ঐক্য গড়ে তুলতে হয়। তিনি ইউক্রেন এবং ইউক্রেনীয়দের জন্য শান্তি প্রার্থনা করেছিলেন।“

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন বলেছেন, “খ্রিস্টধর্মের একজন নিবেদিতপ্রাণ সেবক, একজন জ্ঞানী ধর্মীয় নেতা, রাষ্ট্রনায়ক এবং মানবতাবাদ ও ন্যায়বিচারের উচ্চ মূল্যবোধের একজন ধারাবাহিক রক্ষক হিসেবে পোপ ফ্রান্সিস আন্তর্জাতিকভাবে অত্যন্ত সম্মানিত ছিলেন।“

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মার্কন বলেন, “বুয়েনেস আইরেস থেকে রোম পোপ ফ্রান্সিস চেয়েছিলেন পিছিয়ে পড়া মানুষদের জন্য আনন্দ এবং আশা। মানুষে মানুষে ও প্রকৃতিতে ঐক্যবদ্ধতা।“ – অতনু দাস।