কলকাতার সাধ্বী তেরেসা গির্জায় ৩৯ জন কিশোর কিশোরীর হস্তার্পণ সংস্কার গ্রহণ
গত ২০শে অক্টোবর ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ, কলকাতার মৌলালিতে অবস্থিত সাধ্বী তেরেসা গির্জায় ৩৯ জন কিশোর কিশোরী হস্তর্পণ সংস্কার গ্রহণ করেন। যা তাদের বিশ্বাস, আশা এবং পবিত্র আত্মার সাথে প্রতিশ্রুতিতে ভরা একটি দিন ছিল। কারণ, এই অল্পবয়সী ছেলে এবং মেয়েরা খ্রিস্টান হিসাবে তাদের যাত্রার পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করল এই পবিত্র সংস্কারের মধ্যে দিয়ে।
গির্জা প্রাঙ্গণে অবস্থিত মা মারিয়ার গ্রোটোর সামনে থেকে ভক্তি সহযোগে শোভাযাত্রার মাধ্যমে অনুষ্ঠানের শুভারম্ভ করা হয়। শোভাযাত্রার শুরুতেই সকল প্রার্থীগণ এবং বেদী সেবকগণ সারিবদ্ধ ভাবে গির্জা ঘরে প্রবেশ করে। গির্জায় প্রবেশ করার সাথে সাথে গায়কদল পবিত্র আত্মার স্তোত্র-এর মাধ্যমে প্রার্থীদের আন্তরিকভাবে স্বাগত জানান। বেদী সেবকগণ পবিত্র ঘন্টা বাজিয়ে গির্জা ঘরে প্রবেশ করেন।
এই পবিত্র খ্রিষ্টযাগ উৎসর্গ করেন কলকাতা মহা ধর্মপ্রদেশের মহা ধর্মপাল টমাস ডি'সুজা। এছাড়া ৩৯ জন প্রার্থীর পরিবার, বন্ধুবান্ধব আত্মীয় পরিজন এবং অন্যান্য ধর্মপল্লীবাসীগণ এই পবিত্র সংস্কার গ্রহণের অনুষ্ঠানটি নিজেদের চোখে প্রত্যক্ষ করেন এবং সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন।
এই ৩৯ জন প্রার্থীরা ক্যাথলিক বিশ্বাস, খ্রিস্টীয় শিক্ষা এবং হস্তার্পণ সংস্কারের তাৎপর্যকে অনুধাবন করার জন্য ধর্মপল্লীর পাল পুরোহিত ফাদার জর্জ আন্তুনীর তত্ত্বাবধানে, সিস্টার মারিয়া রুথ এবং অন্যান্য ক্যাটিকিস্টদের কাছ থেকে খ্রিস্টীয় জীবন সম্পর্কে নির্ধারিত ক্লাস গ্রহণ করেন এবং এই সংস্কারের জন্য নিজেদেরকে প্রস্তুত করেন। যেখানে তারা এই সংস্কারের তাৎপর্য সম্পর্কে আরও নিবিড় ভাবে নিজেদেরকে সম্পৃক্ত করতে শেখে। শুধুমাত্র নিজেদের বিশ্বাসকেই নয় বরং খ্রিস্টমণ্ডলীর আজীবন সদস্য রূপে নিজেদের প্রস্তুত করতে শেখেন।
অনেক প্রার্থী খ্রীষ্টযাগ শেষে তাদের অভিজ্ঞতা ব্যক্ত করেন যে, কিভাবে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এবং এই সংস্কার গ্রহণের মধ্যে দিয়ে তারা ঈশ্বরের সান্নিধ্য উপলব্ধি করেছে । অন্যদিকে প্রার্থনা, প্রতিফলন এবং একে অপরের সাথে সহভাগিতার মধ্য দিয়ে একে অপরের প্রতি বিশ্বাস এবং অন্যকে বোঝার ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করেছে। এই প্রস্তুতির মধ্যে দিয়ে তারা নিজেদেরকে আরও আধ্যাত্মিকভাবে পরিপক্ক করে তুলতে এবং আমাদের খ্রিস্টীয় জীবনের দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত হয়েছে।
অন্যদিকে মহা ধর্মপাল থমাস ডি'সুজা প্রার্থীদের উৎসাহ প্রদান করেন যেন তারা বিশ্বাসের সাথে বাঁচতে শেখে এবং তাদের জীবনের সমস্তটা জুড়ে খ্রিস্ট শিক্ষার প্রতি স্থির থাকতে পারে। তিনি তাদের আরও বলেন যে, " হস্তার্পণ সংস্কার তাদের আধ্যাত্মিক যাত্রার শেষ নয় বরং একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা যেখানে তাদের মন্ডলীতে সেবা দানের জন্য এবং সারা পৃথিবীতে ঈশ্বরের প্রেমের সাক্ষী হতে সাহায্য করবে"।
এই ৩৯ জন প্রার্থী নম্রতা এবং করুণার মনোভাব নিয়ে বেদীর সামনে নতজানু হয়ে হাতে মোমবাতি জ্বালিয়ে তাদের বাপ্তিস্ম সংস্কারের শপথ বাক্য পুনরাবৃত্তি করে এবং একে একে তারা আর্চবিশপের সামনে উপস্থিত হলে তিনি তাদের কপালে পবিত্র ক্রিসম তেল দিয়ে অভিষিক্ত করেন। আর্চবিশপ তাদের উদ্দেশ্যে প্রার্থনা করেন যে, প্রতিটি প্রার্থী যেন পবিত্র আত্মার উপহারে পরিপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে - প্রজ্ঞা, বোঝাপড়া, পরামর্শ, দৃঢ়তা, জ্ঞান, ধার্মিকতা এবং ঈশ্বরকে সম্ভ্রম করতে শেখে।
খৃষ্ট যাগ শেষে সকল প্রার্থীদের জন্য একটি আনন্দ অনুষ্ঠান ও জলখাবারের আয়োজন করা হয়।
এরপর সানডে স্কুল ইনচার্জ শ্রীমতি শ্যারন রিথিকা বিশ্বাস এবং প্রার্থীদের মধ্যে থেকে শ্রী রিশান সকলের উদ্দেশ্যে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
সবশেষে সানডে স্কুল ইনচার্জ শ্রীমতি ডায়ানা ডোমিঙ্গো আর্চবিশপ থমাস ডি'সুজাকে ধর্মপল্লীর পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানান করেন এবং পাল পুরোহিত ফাদার জর্জ আন্তুনী শাল ও মাল্য দানের মধ্যে দিয়ে মহামান্য ধর্মপালকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
প্রতিবেদন - ডমিনিক পাঞ্জা, অনুলিখন - তেরেসা রোজারিও