খ্রিস্টজ্যোতি পালকীয় সেবাকেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হল রাজশাহী ধর্মপ্রদেশে সেবারত সিস্টারদের সেমিনার

গত ১৮ থেকে ২০ মার্চ ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, রাজশাহী ধর্মপ্রদেশীয় যাজকীয় ও ব্রতধারী/ব্রতধারিনীদের জন্য কমিশনের উদ্যোগে খ্রিস্টজ্যোতি পালকীয় সেবাকেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হলো রাজশাহী ধর্মপ্রদেশে সেবারত সিস্টারদের নিয়ে তপস্যাকালীন সেমিনার।
এই সেমিনারের মূলসুর ছিলো, “ব্রতীয় জীবনে মিলনের সাধনা: সংহতি ও অন্তভূক্তি”। এতে ধর্মপ্রদেশে সেবারত বিভিন্ন ধর্মপল্লী থেকে প্রায় ৩৭জন সিস্টার অংশগ্রহণ করেন।
পবিত্র খ্রিস্টযাগের উপদেশ বাণীতে ফাদার প্রেমু রোজারিও সংঘবদ্ধ জীবনের মিলনের কয়েকটি দিক তুলে ধরে বলেন স্বার্থপরতার উর্ধ্বে উঠে সেবাকাজ করতে হবে, ক্ষমা আদান-প্রদানের সংস্কৃতি চর্চা করতে হবে, সহভাগিতা-সহযোগিতা-সহমর্মিতা রাখতে হবে, লোভের উর্ধ্বে উঠে কাজ করতে হবে, সমালোচনা পরিহার করে সমর্থন করতে হবে পরস্পর পরষ্পরকে ও গ্রহণীয় মনোভাব রাখতে হবে। আর এইগুলো করতে পারলে আমাদের সংঘবদ্ধ জীবনে মিলন, অংশগ্রহণ ও প্রেরণ দায়িত্ব আরো সক্রিয় হবে।

সিস্টার হেলেন, এসসি মূলভাবের উপর সহভাগিতায় তিনি বলেন, “সংঘবদ্ধ জীবনের প্রেরণা হলো আদিমণ্ডলীর খ্রিস্টভক্তদের সংঘবদ্ধ জীবন, একমন-একপ্রাণ-একচিত্ত-মিলেমিশে জীবন যাপন করাই হলো সংঘবদ্ধ জীবন, একে অপরের প্রতি যত্নশীল হওয়াই হলো সংঘবদ্ধ জীবন, পরষ্পরের সাথে সুখে জীবন যাপন-দায়িত্ব নেয়া পরষ্পরের-ভাল-মন্দের অংশীদার হওয়াই হলো সংঘবদ্ধ জীবন।”
“সংঘবদ্ধ জীবনের কয়েকটি দায়িত্ব তুলে ধরে তিনি আরো বলেন প্রার্থনা হলো একে অপরের সাথে যোগাযোগ ও ঐক্য রাখা, প্রেরণাদান একে অপরকে, দায়িত্ব পালনে সদা জাগ্রত থাকা, দৈহিক ও মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সচেতন থাকা, সহ-দায়িত্বশীলতা সৃস্টি, হাস্য রসিক ব্যক্তিত্ব অর্জন, যুগলক্ষণ বুঝতে পারা, পরিচালনায় সৃজনশীলতা, সামঞ্জস্যপূর্ণ ব্যক্তি, গোপনীয়তা রক্ষায় যত্নশীল, অযথা সন্দেহ না করা, ধর্য্যশীল হওয়া এবং নিজের ভুল স্বীকার করার সৎসাহস থাকা”, বলেন সিস্টার হেলেন।
তিনি আরো বলেন, “সিনোডাল সংঘ হওয়ার জন্য দরকার বিভেদ বা পক্ষপাতিত্ব না করা, মিলনের অবিরাম চেষ্ঠা, জীবন সাক্ষ্য দেয়া, প্রার্থনাশীলতা, অন্যকে মূল্য দেয়া, অন্যের কথা শোনা, অন্যকে কথা বলার সুযোগ দেয়া, অন্যকে মর্যাদা দেয়া, সংলাপ করা ও ধর্য্যশীল হওয়া।”

এই সেমিনারের শেষ দিনে পবিএ খ্রিস্টযাগ উৎসর্গ করেন বিশপ জের্ভাস রোজারিও। তিনি তাঁর উপদেশ বাণীতে বলেন, “ঈশ্বরের সাথে ও পরষ্পরের সাথে মিলনই হলো ব্রতীয় জীবনে সত্যিকারের মিলন, সকলকে সঙ্গে রাখা-একসাথে রাখা, কাউকে বাদ দিয়ে নয় এটাই হলো অর্ন্তভুক্তি এবং অন্যের সাথে এক হওয়াই সংহতি।”
“একে-অপরকে বোনের মতো দেখা ও নিজেদের জীবনের অংশী মনে করাই আমাদের মিলনের সাধনার যর্থাথতা প্রকাশ করে”, বলেন বিশপ রোজারিও।
দুইদিন ব্যাপি এই সেমিনারের মধ্যে ছিল পবিত্র ক্রুশের আরাধনা, জীবন সহভাগিতা, উদ্বোধনী নৃত্য ও প্রদীপ প্রজ্জ্বলন, দলীয় আলোচনা, সম্প্রদায়ভিত্তিক পরিচয় পর্ব, নবাই বটতলা ধর্মপল্লী ও আন্ধারকোঠা ধর্মপল্লী পরিদর্শন এবং আনন্দ ভ্রমন।
পরিশেষে ধর্মপ্রদেশীয় যাজকীয় ও ব্রতধারী/ব্রতধারিনীদের জন্য কমিশনের আহ্বায়ক ফাদার মাইকেল কোড়াইয়া সবাইকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশের মধ্য দিয়ে সেমিনারের সমাপ্ত ঘোষণা করেন। - ফাদার স্বপন মার্টিন পিউরীফিকেশন