শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষে কাথলিক বিশপ সম্মিলনী’র খ্রীষ্টিয় ঐক্য ও আন্তঃধর্মীয় সংলাপ কমিশনের শুভেচ্ছা বাণী
সনাতন তথা হিন্দু ধর্মের সুপ্রিয় ভাই ও বোনেরা,
এই দুর্গাপূজা বা শারদীয় দুর্গোৎসব বোধ করি আপনাদের একটি প্রধান ধর্মীয় উৎসব। ষষ্ঠির বোধন দিয়ে এই পূজা শুরু হয়, প্রতিমাকে মণ্ডপে স্থাপন করা হয় এবং পুরাহিতের মস্ত্রজপ, প্রার্থনা, প্রতীমা দর্শন এবং আরো বহুভাবেই পূজো চলতে থাকে নবমী পর্যন্ত। দশমীতে প্রতিমা বিসর্জন।
ঈশ্বর-দেবতার এই পৃথিবীকে মাতা হিসাবে আাগমন। দশটি হাত ভগবানের শক্তির প্রকাশ, একের মধ্যে বহুত্বের প্রকাশ। আপনাদের ধর্মীয় বিশ্বাস মতে মা দুর্গার একেকটি হাত একেকটি দেবতার শক্তি। এই শক্তিগুনেই অশুভ শক্তির পরাজয়।
মা দুর্গা, একের মধ্যে বহুত্ব; কার্তিক, যুদ্ধ জয়ের প্রতীক; নোপতি; লক্ষী, ধন-দৌলত; গনেশ, সম্বৃদ্ধি; স্বরম্বতী. জ্ঞান, প্রজ্ঞা। অশুর, শয়তান, মন্দশক্তি। এই দুর্গোৎসবে সবচেয়ে অর্থপূর্ণ যে প্রতীক বা দেবতার শক্তি তা হলো অশুরকে মা দুর্গার হাত ত্রিশূল দিয়ে বধ করছে। অশুভ শক্তির পরাজয়, দেবতার হস্ত ও ধনুক দিয়ে, তথা দৈবশক্তিগুণে।
খ্রীষ্টধর্মের প্রসঙ্গ টেনে বলা যায় যীশুর মুক্তিদায়ী ক্রুশ জগতের সকল মন্দকে পরাভূত ক’রে তথা নিজে ক্রুশে মৃত্যুবরণে কর এরপর নিজের পুনরুত্থানে মানবজাতিকে পুনরুত্থিত ক’রে শেষে স্বর্গে পিতার কাছে চলে যান। উভয় ধর্মের যে বাণী, তা হলো স্বয়ং ঈশ্বরের শক্তিতেই শয়তানের শক্তি নাশ । দুর্গতীনাশিণীর দৈব শক্তিতে অশূর নাশ; মন্দের, পাপের পরাজয়। নতুন পৃথিবী; শান্তি-সম্প্রীতির পৃথিবী।
দুর্গাপূজায় প্রার্থনা ও উপাসনা বড়ই তাৎপর্যপূর্ণ। ঢাক, কাঁসর এবং শংখ ও উলুধ্বণীর মধ্য দিয়ে মানবজাতির শান্তি কামনায় মা দুর্গা তথা এই দুর্গা প্রতীমার মধ্যে ঈশ্বরকে স্বাগতম জানানো হয়। আর আারতি: সে তো পূজা-আারাধনা, দেবতার জয়কীর্তন। বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহার, ধুপারতি, হাতজোর করে সর্বশক্তিমান প্রভুর কাছে প্রার্থনা বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের খ্রীষ্টবিশ্বাসীদের একটি ঔপাসনিক ঐতিহ্য।
বাংলাদেশ বহুধর্মাবলম্বীদের দেশ। প্রতীমা দেখার জন্য প্রতিটি মণ্ডপে ভীড় জমায় সকল ধর্মের মানুষ। সনাতন ধর্মের ভাইবোনদের শুভেচ্ছা-নমস্কার জানায় সকল ধর্মের মানুষ। আান্তঃধর্মীয় সম্প্রীতির এক বহিঃপ্রকাশ। ধর্মীয় বিশ্বাসে আামর একক হলেও ধর্মীয় উৎসবে আমরা সবাই এক; এই এক ভ্রাতৃত্ব।
এই শারদীয় মহোৎসব হিন্দু মুসলিম বৌদ্ধ খ্রীষ্টান সবার উপর শান্তি বর্ষণ করুক। এক অন্তঃধর্মীয় শান্তি-সম্প্রীতি নিয়ে বাংলার মানুষ বাস করুক। আার এটিই হোক এবার দুর্গোৎসবের প্রধান প্রতিপাদ্য বিষয় এবং প্রভুর কাছে প্রার্থনা। - শুভেচ্ছান্তে আর্চবিশপ লরেন্স সুব্রত হাওলাদার, সিএসসি সভাপতি বিশপীয় খ্রীষ্টিয় ঐক্য ও আন্তঃধর্মীয় সংলাপ কমিশন ফাদার প্যাট্রিক গমেজ নির্বাহী সচিব ।