রাজশাহী উত্তম মেষপালক ক্যাথিড্রাল ধর্মপল্লীতে অনুষ্ঠিত হল ঐতিহাসিক ওয়ানগালা উৎসব
গত ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, মনোমুগ্ধকর পরিবেশে রাজশাহী উত্তম মেষপালক ক্যাথিড্রাল ধর্মপল্লীতে অনুষ্ঠিত হলো ঐতিহাসিক ওয়ানগালা উৎসব।
গারো নারীদের চুলের খোঁপায় মোরগের পালক আর পরনে দৃষ্টিনন্দন বর্ণিল ঐতিহ্যগত পোশাক, সবার হাতে উৎপাদিত নানা ধরণের শস্যের ডালা এবং মঙ্গল শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে ওয়ানগালা উৎসবের শুরু।
গারো জাতির ১১টি গোত্র থেকে প্রতীকী অর্থে নতুন উৎপাদিত এই শস্য সৃষ্টিকর্তার নিকট উৎসর্গ করেন। শস্য উৎসর্গের স্থানে ১১টি খুঁটি দিয়ে একটি বেদী নির্মাণ করা হয় যার কেন্দ্রবিন্দু পবিত্র ক্রুশ।
গারো সম্প্রদায়ের ১১ টি গোত্রের (অতং, ডুয়াল, আ-উই, আ-বেঙ, রুগা, মে-গাম, চিসক, মাতচি, মতাবেঙ, চিবোক ও গারা-গানচিং) চিহ্নিত খুঁটির উপর রাখা একটি করে মোমবাতি প্রজ্জ্বলন করা হয়।
প্রাচীন কালে শস্য দেবতার কাছে এইভাবেই রীতি মেনে গারো সম্প্রদায় উৎপাদিত শস্য উৎসর্গ করতেন। কালক্রমে গারো সম্প্রদায় খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করায় তাদের সৃষ্টিকর্তা ঈশ্বর বা খ্রিস্ট যিশুর নিকট এই শস্য উৎসর্গ করে থাকে।
১১টি গোত্রের দ্বারা প্রজ্জ্বলিত মোমবাতির কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল পবিত্রক্রুশ। রাজাধিরাজ হিসেবে পবিত্র ক্রুশকে কুতুব (পাগড়ি) পরানো হয়। বর্ণিল এই আয়োজনের ধাপে ধাপে ছিল নৃত্যগীত এবং গীতিনাট্য।
আনন্দের মাত্রাকে আরো বাড়িয়ে তোলে এক পাশে রাখা মাদল, হারমোনিয়াম বাজিয়ে গারো নারী-পুরুষ অবিরতভাবে গেয়ে যাচ্ছিল সুমধূর গান। অনুষ্ঠানের শুরুতেই ছিল থক্কা প্রদান।
এই পর্বে নতুন ধানের আতপ চালের গুড়া মাখিয়ে অথিতিদের কপালে টিপ দেওয়া হয়। এ পর্বে গারো নারীরা সূচি, সিঁথি, চারমিং ও তার দল থক্কা প্রদান করে।
ওয়ানগালা অনুষ্ঠানের নকমা (প্রধান) লোটাস লুক চিসিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন উত্তম মেষপালক ক্যাথিড্রালের পালপুরাহিত ও রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের ভিকার জেনারেল ফাদার ফাবিয়ান মার্ডী।
বিশেষ অতিথির বক্তব্য প্রদান করেন বাংলাদেশ বেতার রাজশাহীর উপ-আঞ্চলিক পরিচালক জান্নাতুল ফেরদৌস, প্রথম আলোর প্রতিবেদক আবুল কালাম মুহম্মদ আজাদ, চ্যানেল আইয়ের স্টাপ রির্পোটার আবু সালেহ্, নানকিং গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো: এহসানুল হুদা, রাজশাহী পার্লার এসোসিয়েসন এর সভাপতি মিসেস রুকসানা হুদা, রাজশাহী খ্রিস্টিয়ান নার্সিং ইন্সটিউট এর প্রিন্সিপাল সুলতা ম্রংসহ অনেক ফাদার সিস্টার ও ভক্তজনগণ।
দিনব্যাপী এই অনুষ্ঠানে আরো ছিল বিভিন্ন খেলাধূলা, আদিবাসী নৃত্য, ফুটবল এবং সম্মিলিত কীর্তন। পরিশেষে সকলকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে প্রথমবারের মত হয়ে যাওয়া গারো ভাইবোনদের সর্ববৃহৎ এই আনন্দের উৎসব ওয়ালগালা শেষ হয়। - ফাদার শ্যামল গমেজ