বাংলাদেশ কাথলিক বিশপ সম্মিলনীর আয়োজনে অনুষ্ঠিত হলো খ্রীষ্টের জন্ম জয়ন্তী উৎসব
গত ৮ নভেম্বর ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, বাংলাদেশ কাথলিক বিশপ সম্মিলনী (সিবিসিবি) এর আয়োজনে সেন্ট মেরীস কাথিড্রাল রমনায় জাতীয়ভাবে অনুষ্ঠিত হলো খ্রীষ্টের জন্ম জয়ন্তী উৎসব।
এই জুবিলী অনুষ্ঠানের মূলসুর ছিলো, “আশার তীর্থযাত্রী: আনন্দ ও মিলনোৎসব”। এতে বাংলাদেশের আটটি ধর্মপ্রদেশের বিশপগণ, যাজকগণ, ব্রাদারগণ, সিস্টারগণ এবং খ্রিস্টভক্তগণ মিলে প্রায় পাঁচশত জনের বেশী অংশগ্রহণ করেন।
এছাড়াও আরো উপস্থিত ছিলেন ভাটিকানের রাষ্ট্রদূত আর্চবিশপ কাভিন রান্ডাল, কার্ডিনাল প্যাট্রিক ডি’ রোজারিও, অবসরপ্রাপ্ত সহকারী বিশপ থিয়োটনিয়াস গমেজ সিএসসি।
জুবিলী অনুষ্ঠানের শুভ উব্দোধনী ঘোষণা করেন ঢাকা মহাধর্মপ্রদেশের আর্চবিশপ বিজয় এন ডি ’ক্রুশ ওএমআই । পরে প্রার্থনা পূর্ন নিরবতায় জুবীলির পূন্য দরজা দিয়ে র্গীজায় প্রবেশ করা হয়।
সিবিসিবি’র সেক্রেটারি জেনারেল বিশপ পল পনেন কুবি তাঁর উদ্বোধনী বক্তব্যে সবাইকে শুভ্চ্ছে জানিয়ে বলেন, “আশার র্তীথযাত্রী এর অর্থ হলো এক মণ্ডলী হিসেবে এক সাথে যাত্রা করা। হতাশা গ্রস্ত সমাজে আশা জাগ্রত করা এবং ঈশ্বরের দয়া লাভের জন্য হৃদয় উন্মুক্ত করা।”
“আশার তীর্থযাত্রী: আনন্দ ও মিলনোৎসব” এই মূলসুরের উপর সহভাগিতা করেন বরিশাল ধর্মপ্রদেশের বিশপ ইম্মানুয়েল কানন রোজারিও। তিনি বলেন, “জুবিলীর মূল প্রেরণা হলো পরিপূর্ন মুক্তি ও প্রনরুদ্ধার। জুবিলী বর্ষ হলো ঘরে ফেরার সময় এবং যা কিছু হারিয়ে ছিলো তা পুনরূদ্বাধার করার সময়।”
“বিগত বছরে ধ্যান প্রার্থনা এবং আধ্যাত্নিক অনুশীলন ও দয়ার কাজের মধ্য দিয়ে খ্রিস্ট জন্ম জয়ন্তীর জন্য প্রস্তুতি নিয়েছি। আশার র্তীথযাত্রা এই নির্ধারিত মূলভাবটি নিয়ে ২০২৫ খ্রিস্টাব্দে প্রত্যাশিত সেই জুবিলী উদযাপন করছি। এই জুবিলীর বর্ষ হলো পবিত্র বর্ষ এবং ঈশ্বরের অনুগ্রহ লাভের সময়,” বলেন বিশপ রোজারিও।
খ্রিস্টযাগের উপদেশ বাণীতে আর্চবিশপ বিজয় এন. ডি’ক্রুজ বলেন, “আশা মানুষকে পথ দেখায়, মানুষের মধ্যে ইতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি করে, মনকে পরিবর্তন করে, ঈশ্বরের সাথে পুনর্মিলন ঘটায় ও ভালোবাসার নবায়ন ঘটায়।”
বাংলাদেশে সমাজ আশাবাদী না উল্লেখ করে আর্চবিশপ বলেন, “আমরা কোনো আলোচনায় বসলে অন্যের সমালোচনা বা পরচর্চা করতে পছন্দ করি যা নিজেকে ও যার সমালোচনা করি তাকে নিরাশ করে। কিন্তু আমরা যদি কাউকে স্বীকৃতি দেই তাহলে আশা বাড়ায়, হতাশা থাকলে তা দূরীভুত করে।”
“ঈশ্বর যেহেতু আশার উৎস তাই আমাদের ঈশ্বরের নিকট প্রার্থনা করার মাধ্যমে আশার শক্তি লাভ করতে হবে,” বলেন আর্চবিশপ ডি’ক্রুজ।
খিস্টযাগের পরে ভাটিকানের রাষ্ট্রদূত আর্চবিশপ কেভিন রান্ডাল ও কার্ডিনাল প্যাট্রিক ডি’ রোজারিও বক্তব্য রাখেন । পোপ ফ্রান্সিসের উদ্ধৃতি দিয়ে আর্চবিশপ কেভিন বলেন, “আশা হলো জুবিলীর কেন্দ্রীয় বিষয় যা খ্রিস্ট ভক্তদের আহ্বান জানায় আশার র্তীথযাত্রী হতে।”
কার্ডিনাল প্যাট্রিক ডি’রোজারিও বলেন, “আমাদের যে আশা দেওয়া হয়েছে তা হৃদয়ে উন্মুক্ত রাখতে হবে। বর্তমান সীমাহীন ও ক্রমবর্ধমান যুদ্ধের সময়ে এই মূলভাব অনেকটা প্রতীকি অর্থ বহন করে। আশা কখনো নিরাশ করে না কারণ আমরা আশায় পরিত্রাণ লাভ করি।”
জুবিলীতে অংশগ্রহণকারী রাফায়েল গমেজ তার মনের অনুভূতি ব্যক্ত করে বলেন, “আজ আমি সত্যিই অনেক আনন্দিত কারণ দীর্ঘদিন আধ্যাত্নিক প্রস্তুতির পর আজ সবার সাথে মিলিত হয়ে খ্রীষ্টের জন্ম জয়ন্তী উৎসব পালন করতে পারছি। এই বছরের জুবিলী আমার জীবনের জন্য আর্শিবাদের এবং কৃপার।
দিনব্যাপি এই অনুষ্ঠানের মধ্যে ছিলো প্রার্থনা অনুষ্ঠান, শুভেচ্ছা বক্তব্য, জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন ও জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং সম্মানপ্রদর্শণ, কৃষ্টি সংস্কৃতির আলোকে দলীয় বরণ নৃত্য, শান্তির পায়রা অবমুক্তকরণ, উদ্বোধনী বেলুন উড়ানো এবং জুবিলী বর্ষের একটি ভিডিও তথ্যচিত্র প্রদর্শন।
উল্লেখ যে, ২০২৪ সালের ২৪ ডিসেম্বর ভাটিকানের সেন্ট পিটারস ব্যাসেলিকার দরজা খোলার মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে খ্রীষ্ট জন্ম জয়ন্তী ২০২৫ এর উদ্বোধন করা হয় এবং এই জুবিলী আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হবে ২০২৬ সালের ৬ জানুয়ারী প্রভুর আত্মপ্রকাশের মহাপর্বের দিনে ব্যাসেলিকার দরজা বন্ধের মাধ্যমে।- আরভিএ সংবাদ