পবিত্র আত্মা উচ্চ সেমিনারীর সুবর্ণ জয়ন্তী উৎসব উদযাপন
গত ১৯ এপিল ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বাংলাদেশ খ্রিস্টমণ্ডলীর হৃদয় বা প্রাণকেন্দ্র পবিত্র আত্মা উচ্চ সেমিনারীর ৫০তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদযাপন করা হয়।
“স্থানীয় মণ্ডলী বিনির্মাণে গৌরবময় ৫০বছর” এই মূরসুরকে সামনে রেখে উৎসব মুখর পরিবেশে উদযাপিত হলো এই প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী। এতে বাংলাদেশের কার্ডিনাল, আর্চবিশপগন, বিশপগন, ফাদারগন, ব্রাদারগন, সিস্টারগন, সেমিনারীয়ানগন এবং খ্রিস্টভক্তগন সহ প্রায় ৬০০জন অংশগ্রহনকারী অংশগ্রহন করেন।
জুবিলী বা জয়ন্তী উৎসব হলো মূলত আনন্দ, ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশের উৎসব। ৫০ বছরের পথযাত্রায় ইতিহাস-ঐতিহ্য, অর্জন-অবদান ও গৌরবের বিচিত্রময় অনুভূতির প্রকাশের এক মাহেন্দ্রক্ষণ এই সুবর্ণজয়ন্তী।
পবিত্র খ্রিস্টযাগ অর্পনের মধ্যদিয়ে পবিত্র আত্মা উচ্চ সেমিনারীর সুবর্ণ জয়ন্তী উৎসব উদযাপন অনুষ্ঠান শুরু হয়। পবিত্র খ্রিস্টযাগ উৎসর্গ করেন কার্ডিনাল প্যাট্রিক ডি’রোজারিও।
খ্রিস্টযাগের উপদেশ সহভাগিতায় কার্ডিনাল প্যাট্রিক ডি’রোজারিও বলেন, “সেমিনারী সুবর্ণ জয়ন্তীর এই দিনে আজ ঈশ্বরকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই কারন সেমিনারীর গোড়াপত্তনের এই ৫০ বছরে সেমিনারীটি ঈশ্বরের একটি মহান কীর্তি এবং পবিএ আত্মারই মহাদান। এই মহাদানের পঞ্চাশ বছরের যাত্রাকালে দেশের রূপ রঙ্গে গঠিত হয়েছে মণ্ডলীর অন্তর। পরিবেশিত করেছে আত্মার দানে। শাস্ত্রবাণী অনুসারে সমস্ত কিছু আত্মারই দান। তাই আত্মার এই কর্ম কীর্তিতে হৃদয় আজ আমাদের আনন্দে উচ্ছ্বসিত।”
“মঙ্গলবাণী অনুসারে আমি উত্তম মেষপালক। যীশুর এই বাণী ছিলো প্রানপ্রিয় সেমিনারীর বিরামহীন এবং চলমান ভাবনা। এই বাণী ছিলো মহাযাজকদের গঠন দেওয়ার আদর্শ। যীশুর এ বাণীকে নিজের করে নিতে গিয়ে মনে উপলব্দি করেছি তৃপ্তি”, বলেন কার্ডিনাল প্যাট্রিক।
তিনি আরো বলেন, “পঞ্চাশ বছর পূর্বে এই সেমিনারীর প্রতিষ্ঠার সূচনা লগ্নে মতামত ব্যক্ত হয়েছিল যে, প্রস্তাবিত সেমিনারীটি শুধু সেমিনারীয়ানদের জন্য নয়, বরং এখানে গঠন পাবে ভাবী যাাজকদের পাশাপাশি সন্ন্যাস ব্রতী ফাদার, ব্রাদার, সিস্টারগণ ও মণ্ডলীর ভক্তজনগন এবং আরো স্বপ্ন ছিলো সেমিনারী হবে স্থানীয় মন্ডলীর এবং ঐশ্ব ত্তাত্বিক চিন্তা ভাবনা ও আধ্যাত্মিকতা বিকাশের একটি কেন্দ্র আর এখান থেকেই উদ্ভাবিত হবে বাংলার খ্রীষ্টিয়ানদের সাক্ষ্যদান যা আজও প্রবাহমান।”
পবিত্র আত্মা উচ্চ সেমিনারীর পরিচালক ফাদার পল গমেজ বলেন, “জুবিলী উৎসব হলো মূল্যায়ন, নবায়ন ও মিলনের আনন্দোৎসব। সেমিনারী, তার পথ চলার পঞ্চাশ বছরে ঈশ্বরের শত-সহস্র অনুগ্রহদানে ধন্য হয়েছে। প্রভুর মহা অনুগ্রহের প্রতি নত মস্তকে প্রণাম করি। অতীতের ভুল-ভ্রান্তি সকল শুধরে নিয়ে আসুন আমরা মিলন বন্ধনে আবদ্ধ হই এবং একসাথে এগিয়ে যাই প্রভুর দ্রাক্ষাক্ষেত্রে এক নিষ্ঠাবান কর্মী হিসাবে।”
১৯৭৩ খ্রিস্টাব্দের ২৩ আগস্ট, বাংলাদেশে পুণ্যপিতা পোপের প্রতিনিধি মহামান্য আর্জবিশপ এডুয়ার্ড ক্যাসিডি রমনা ক্যাথিড্রাল গির্জায় সহার্পিত খ্রিস্টযাগের মধ্যদিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় উচ্চ সেমিনারীর শুভ উদ্বোধন করেন।
পবিত্র আত্মা উচ্চ সেমিনারী হল বাংলাদেশ ক্যাথলিক মণ্ডলীর প্রাণ ও বাতিঘর। এই গঠনগৃহ থেকে খ্রীষ্টয় আদর্শে শিক্ষা ও গঠন প্রাপ্ত প্রার্থী আলোর বাহক হয়ে অন্ধকার ও ছায়াছন্ন পথে যারা চলেছে তাদের জন্য হয়ে উঠেছে আলোকবর্তিকা।
বর্তমান বাংলাদেশ কাথলিক মণ্ডলীর অনেক বিশপ, যাজক ও সন্ন্যাসব্রতী নর-নারী যাঁরা এই সেমিনারী থেকে শিক্ষালাভ করেছেন তাঁরা বর্তমানে খ্রীষ্টভক্তদের আধ্যাত্মিক, মানবিক ও নৈতিক গঠনে নিজেদেরকে নিয়োজিত রেখেছেন।
দেশ, সমাজ ও মণ্ডলীর জন্য এ সেমিনারীর নানা অবদান স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। সত্যিকার অর্থে পবিত্র আত্মা সেমিনারীর মাধ্যমেই বাংলাদেশ মণ্ডলী সক্রিয়, স্বাবলম্বী ও দেশীয় হতে শুরু করেছে।
ধর্মের নানা ক্ষেত্রে অগ্রযাত্রা ও পরিবর্তন এর মাধ্যমেই শুরু হয়েছে। ফাদারদের শিক্ষাসহ গঠন দিয়ে, ব্রাদার ও সিস্টারদের শিক্ষা দিয়ে এ সেমিনারী স্থানীয় মণ্ডলী গঠন, পরিচালনা ও সেবায় এক অভূতপূর্ব অবদান রাখছে।
উল্লেখ্য যে, দীর্ঘ ৫০ বছরের এই যাত্রায় মোট ৯৮৭জন শিক্ষার্থী পবিত্র আত্মা সেমিনারীতে পড়াশুনা করেছেন। এদের মধ্যে ৯জন বিশপ সহ যাজক হয়েছেন ৪৪৫জন। এছাড়াও ৮৩ জন ব্রাদার ও ১১ জন সিস্টার সেমিনারীর শিক্ষায় আলোকিত হয়েছেন। আলো বিকিরণের এ কাজে সরাসরি জড়িত ছিলেন ও আছেন মোট ১০৩জনের অধ্যাপকমণ্ডলী।
পবিত্র আত্মা উচ্চ সেমিনারীর শিক্ষায় প্রশিক্ষিত হয়ে অনেক যাজক, ব্রতধারী ও ব্রতধারিণী আজ দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আমেরিকা, কানাডা, ব্রাজিল, ইতালি, অস্ট্রিয়া, ফ্রান্সসহ পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে সেবাদায়িত্ব পালন করে পবিত্র আত্মা উচ্চ সেমিনারীর সৌরভ ছড়াচ্ছেন।
দিনব্যাপী এই অনুষ্ঠানের মধ্যে ছিল জাতীয় পতাকা উত্তোলন, মুরাল উন্মোচন, পবিত্র খ্রিস্টযাগ, প্রদীপ প্রজ্জ্বলন এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। - আরভিএ সংবাদ