আন্ধারকোঠা ধর্মপল্লীতে গাব্রিয়েল সম্প্রদায়ের ব্রাদারদের আগমন

গত ০৯ মার্চ ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের অন্তর্গত আন্ধারকোঠা নিত্য সাহায্যকারীনি মা মারীয়া ধর্মপল্লীতে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেওয়া লক্ষ্য নিয়ে গাব্রিয়েল সম্প্রদায়ের ব্রাদাররা বাংলাদেশে আগমন করেন।
বিগত ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ থেকে তাদের এ লক্ষ্য পূরণের জন্য ব্রাদারগণ বেশ কয়েকবার বাংলাদেশে তথা রাজশাহী ধর্মপ্রদেশে এসেছিলেন। তারই ধারাবাহিকতায় দু’জন ব্রাদার ভারত থেকে আসেন ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের কাজ শুরু করার জন্য।
তাদের আগমনকে ঘিরে ধর্মপল্লীর পক্ষ থেকে খ্রিস্টভক্তগণ মাল-পাহাড়িয়া কৃষ্টিকে ‘চুমানো’, পা ধোয়ানো, মাল্যদান ও বাদ্য-বাজনার মাধ্যমে উপস্থিত রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের ধর্মপাল বিশপ জের্ভার রোজারিও ও ব্রাদারদের বরণ করে নেয়।
এরপর ‘বারা মালের নিমু, গোটেরি বারা’ গানের তালে তালে নৃত্যের মাধ্যমে সকলকে নিয়ে যাওয়া হয় নিত্য সাহায্যকারীনি মা মারীয়ার গির্জায় এবং সকলে একসাথে খ্রিস্টযাগে যোগদান করে।
খ্রিস্টযাগ উৎসর্গ করেন বিশপ জের্ভাস রোজারিও, তিনি তার উপদেশে বাণীতে বলেন, “দীক্ষাস্নানের মাধ্যমে আমরা যে বিশ্বাস লাভ করেছি তা যেন আমরা ভুলে না যায়, যদি আমরা ভুলে যায় তাহলে আমরা প্রকৃত খ্রিস্টান হতে পারবো না।”
বিশপ রোজারিও আরো বলেন, “এই প্রায়শ্চিত্তকালে আমাদের তিনটি বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে আর তা হলো প্রার্থনায় ব্যাস্ত থাকা, উপবাস করে নিজেকে সংযত রাখা এবং নিজের ক্রুশ নিজে বহন করে যীশুর সহযাত্রী হওয়া এবং দান করা ও গরীব দুঃখী মানুষের পাশে দাঁড়ানো।”
“আমরা যখন ঈশ্বরের অবাদ্ধ হয়ে পাপ করি তখন আমরা শয়তানের পূজা করি”, বলেন বিশপ রোজারিও ।

খ্রিস্টযাগের পরে, সকলের উদ্দেশ্যে বিশপ বলেন, আমরা এখানে আমাদের খ্রিস্টভক্তের জন্য একটি সুযোগ সৃষ্টি করছি যেন আমাদের জনগন সে সুযোগ কাজে লাগিয়ে জীবনে উন্নতি করতে পারে।
একজন ব্রাদার তার অনুভূতি ব্যক্ত করে বলেন, “এইভাবে স্বগতম জানানোর জন্য সবাইকে অনেক ধন্যবাদ জানাই। আমি সবাইকে একটাই কথা বলতে চাই, অন্ধকার দুর করার উত্তম পন্থা হলো শিক্ষা। শিক্ষার অনুপস্থিতিতে আমাদের মনের মধ্যে একটা অদৃশ্য ভয়ের সৃষ্টি হয় যা আমাদের সামনের পথে এগিয়ে যেতে বিশাল পাহাড় সমান বাধার তৈরী করে আর এই বাধার পাহাড় ভাঙ্গতে শিক্ষা খুবই প্রয়োজন।”
ব্রাদার আরো বলেন, “তোমাদের প্রত্যেকের মধ্যে কোনো না কোনো সম্ভাবনা আছে, তা কাজে লাগাতে হবে, আমি পারবো, আমাকে পারতেই হবে শুধু তবেই আমরা জীবনে অর্জন লাভ করতে পারবো।”
ধর্মপল্লীর পাল-পুরোহিত ফাদার প্রেমু রোজারিও উপস্থিত সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, “প্রতিনিয়তই ঈশ্বর বিভিন্ন ভাবে তাঁর ভালোবাসর প্রকাশ করে যাচ্ছেন, আর সেটার উদাহারণস্বরূপ আজকে আমরা আমাদের ধর্মপল্লীতে ব্রাদারদের পেয়েছি।”
“ব্রাদারদের সম্প্রদায় এ পর্যন্ত বিশ্বের ৫৫ টি দেশে তাদের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। আমাদের দেশ হলো তাদের ৫৬তম দেশ; তাই বলবো আমাদের ধর্মপ্রদেশ তথা আমাদের এ আন্ধারকোঠা ধর্মপল্লীর মানুষ অনেক ভাগ্যবান যে বাংলাদেশে প্রথম সেবাকেন্দ্র হিসেবে ব্রাদারগন আমাদের বেছে নিয়েছেন আমরা সত্যিই এ জন্য ভীষণ কৃতজ্ঞ”, বলেন ফাদার রোজারিও। - বেনেডিক্ট তুষার বিশ্বাস