আজ বিশ্বব্যাপী পালিত হচ্ছে “বিশ্ব মা দিবস”

বিশ্ব মা দিবস

আজ ১১ মে ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, বিশ্বব্যাপী পালিত হচ্ছেবিশ্ব মা দিবস প্রতি বছর মে মাসের দ্বিতীয় রোববার সারা বিশ্বে দিনটিবিশ্ব মা দিবসহিসেবে পালন করা হয়।  

বিশ্ব মা দিবস পালনের মূল উদ্দেশ্য হলো পরিবারে মা-দের ভূমিকার স্বীকৃতিদান। মা শুধু পরিবারে একজন ব্যক্তি নন, পরিবারে ২৪ ঘন্টাব্যাপী একজন দ্বাররক্ষক।

এই পৃথিবীর সবচেয়ে পবিত্র মধুর শব্দের নামমা কেননা সন্তান মায়ের যে সম্পর্ক, এতো দৃঢ় আর কোনও সম্পর্ক এই পৃথিবীতে নেই।

তাই এই দিবসটি এমন একটি বিশেষ দিন, যে দিন সব মায়েদের এবং যারা মায়েদের মতো, তাদেরকে পরিবার থেকে রাষ্ট্র পর্যন্ত সকল স্তরে সম্মান জানানো হয়।

ইতিহাস থেকে জানা যায় যে, প্রাচীন রোম নগরী গ্রীস দেশে মা মাতৃত্ব দিবস পালন করার রীতি প্রচলিত ছিল। একটি বিশেষ দিনে তারা দেবীদের দেবীমাতা রেহেয়া সাইবেল দেবীর পূজা করতেন। রোমীয়রা আবার আলাদাভাবে হিলারিয়া দেবী মাতার পূজা করতেন।

তবে এমন নজিরও আছে যে, আধুনিক দিনের শুরুতে খ্রিস্টানরা মা দিবস পালন করতেন যাকে বলা হতমায়ের গির্জা রবিবার।অর্থাৎ, কোন অঞ্চলের প্রথম এবং প্রধান গির্জার স্মরণে পলিত হত মা গির্জা রবিবার।

এক সময় যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপে তপস্যাকালের ৪র্থ রোববার মা গির্জা দিবস পালিত হত। সেদিন খ্রিস্টভক্তরা মাতৃমন্ডলিতে গিয়ে বিশেষ প্রার্থনা অনুষ্ঠানে যোগ দিতেন।

জুলিয়া ওয়ার্ড হোয়ে নামে একজন নারী ১৮৭০ খ্রিস্টাব্দেমা দিবসের ঘোষণাধারণা নিয়ে- বিশ্বে শান্তি স্থাপনের জন্য নারীদের আহ্বান জানান।

পরে ১৮৭৩ খ্রিস্টাব্দে হোয়ে প্রচারনা চালান- প্রতিবছর দুই জুন দিবসটি পালন করার জন্য। ১৮৭০ খ্রিস্টাব্দে মিসিগান অঙ্গরাজ্যের জুলিয়েট ক্যালহোন ব্ল্যাকলি নামে একজন নারীবাদী  স্থানীয়ভাবে মা দিবস পালনের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। পরে তার সাথে আরও কয়েকজন যোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু তেমন কোন প্রভাব ফেলতে পারেনি।

উনবিংশ শতাব্দিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গৃহযুদ্ধের ঠিক পূর্বে, ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ার এ্যান রেভেস জার্ভিস নামে এক ভদ্রমহিলামা দিবস কর্ম সমিতিনামে একটি  সংঘ গঠন করেন।

এই সংঘটনের মূল লক্ষ্য ছিল নারীদের শিক্ষা দেওয়ার জন্য যে, নিজ নিজ পরিবারে কীভাবে সন্তানদের প্রতিপালন করতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রে গৃহযুদ্ধের সময় নানা বর্ণের মানুষের মধ্যে মতভেদ থাকা সত্বেও মা কর্ম সমিতির প্রতি তাদের আস্থা ছিল।

এই বিষয়টি লক্ষ্য করে, পাশাপাশি, ১৮৬৮ খ্রিস্টাব্দে এ্যান জার্ভিসমা বন্ধু দিবসসংঘ স্থাপন করেন, যেখানে গৃহযুদ্ধরত উভয় পক্ষের মায়েরা সমবেত হতেন পুর্নমিলন স্থাপনের প্রচেষ্টা নিয়ে

এ্যান রেভেস জার্ভিস ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে মৃত্যুবরণ করার পর তার মেয়ে আন্না জার্ভিস ব্যাপকভাবে মা দিবস পালনের দায়িত্ব হাতে নেন। তার চেষ্টায় আজকের যে মা দিবসের কার্যক্রম সেটা শুরু হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দে।

সে বছর আন্না জার্ভিস তার মা এ্যান জার্ভিসের আত্মার স্মরণে মে মাসে ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ার সেন্ট এন্ডু ম্যাথডিস্ট চার্চে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন।

সেই স্মরণ দিবস আয়োজনের মধ্যদিয়ে তিনি মা-দের দায়িত্ব সর্ম্পকে সজাক করে তোলেন। এখানে উল্লেখ্য যে, পরবর্তীকালে এই চার্চেই নির্মাণ করা হয়েছে আর্ন্তজাতিক মা দিবসের স্মৃতিস্তম্ভ।

মায়ের অসমাপ্ত কাজ শেষ করার জন্য আন্না জার্ভিস তার উদ্যোগ চালিয়ে যান এবং সেই সাথে দিনটির স্বীকৃতি এবং সরকারি ছুটির দাবি জানান। তার প্রচারণার মূল বিষয় ছিল, “মা এমন ব্যক্তি, যে তোমার জন্য যা করেছে, আর কেউ তা করেনি।

পরবর্তীতে আন্না জার্ভিসের চেষ্টায় ১৯১১ খ্রিস্টাব্দে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিটি অঙ্গরাজ্যে মা দিবস পালন শুরু হয় এবং ওয়েস্ট ভার্জিনিয়াসহ কয়েকটি অঙ্গরাজ্যে এই দিবসে স্থানীয়ভাবে ছুটিও ঘোষণা করা হয়।

১৯১২ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে আমেরিকার প্রায় সব রাজ্যে, শহরে এবং চার্চে মা দিবস বাৎসরিক ছুটি হিসেবে পালন শুরু হয়।  পরে ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দে প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন তার এক  ঘোষণায় প্রতি বছর মে মাসের দ্বিতীয় রবিবার সরকারি ছুটি হিসেবে মা দিবস পালনের বিলে সাক্ষরদান করেন।

আসুন আমরা মা মারীয়ার মধ্যস্থতায় বিশ্ব মা-দের জন্য প্রার্থনা করি, তাদের অবদানের কথা স্বীকার করি এবং তাদের ভালোবাসতে শিখি। ঈশ্বর মা-দের আর্শীবাদ করুন। - আরভিএ