বিশপীয় সামাজিক যোগাযোগ কমিশনের সুবর্ণ জয়ন্তীর লগো উন্মোচন ও “রং তুলির জীবন” নাটক মঞ্চস্থ

বিশপীয় সামাজিক যোগাযোগ কমিশনের সুবর্ণ জয়ন্তীর লগো উন্মোচন ও “রং তুলির জীবন” নাটক মঞ্চস্থ

গত ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, বিশপীয় সামাজিক যোগাযোগ কমিশনের সুবর্ণ জয়ন্তীর লগো উন্মোচন এবং খ্রিস্টীয় যোগাযোগ কেন্দ্রের বাণীদীপ্তি নাট্যদলের পরিবেশনায় তেজগাঁও চার্চ কমিউনিটি সেন্টারে অনুষ্ঠিত হলো নাটক রং তুলির জীবন।

এইরং তুলির জীবননাটকটি রচনা নির্দেশনায় ছিলেন বিন্দু রোজারিও এবং প্রযোজনায় বালীদীপ্তি নাট্যদল। 

নাটক মঞ্চস্থ হওয়ার আগে খ্রিস্টীয় যোগাযোগ কেন্দ্রের পরিচালক ফাদার বুলবুল আগষ্টিন রিবেরু সকলকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, “আজ আপনাদের জন্য আরেকটি বিষয় জানাতে চাই, আর সেটা হলো বিশপীয় সামাজিক যোগাযোগ কমিশনের সুবর্ণ জয়ন্তীর কথা।

তিনি বলেন, “বিগত ৫০ বছর ধরে এই কমিশন সেবা দিয়ে যাচ্ছে। আর আমরা এই মহতী সময়ে এসে উপস্থিত হয়েছি এই সুবর্ণ জয়ন্তীর সময়ে। এই সুবর্ণ জয়ন্তীর মূলসুর হচ্ছে : সত্য প্রচারে সচেষ্ট সর্বদা।

একই সাথে তিনি এই কমিশনের সাথে যারা জড়িত ছিলেন এবং বর্তমানে জড়িত রয়েছেন তাদের সকলর প্রতি শ্রদ্ধা শুভেচ্ছা জানান।

নাটক রং তুলির জীবন মঞ্চস্থ

উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশে ১৯৭৪ সালে বিশপীয় সামাজিক যোগাযোগ কমিশন প্রতিষ্ঠিত হয়। এই কমিশনের লক্ষ্য উদ্দেশ্য হলো সামাজিক যোগাযোগ ব্যবহারের মাধ্যমে খ্রিস্টের সুসংবাদ চার্চের সামাজিক শিক্ষাকে উপস্থাপন প্রচার করা।

গণমাধ্যমের সাহায্যে সাধারণ মানুষের, বিশেষ করে খ্রিস্টানদের আধ্যাত্মিক, সামাজিক, নাগরিক অর্থনৈতিক চেতনা অবস্থার উদ্দীপনা সৃষ্টি, উন্নয়ন জাগ্রত করা; এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারে চার্চের কর্মীদের অনুপ্রাণিত প্রশিক্ষিত করা।

বিশপীয় সামাজিক যোগাযোগ কমিশনের সুবর্ণ জয়ন্তীর লগো উন্মোচন করেন ঢাকার আর্চবিশপ বাংলাদেশ কাথলিক বিশপ সম্মিলনীর সভাপতি আর্চবিশপ বিজয় এন. ডিক্রুজ, ওএমআই।

তিনি বলেন, “সামাজিক যোগাযোগ কমিশনের ৫০ বছরের এই যাত্রা গুরুত্ব বহন করে। যারা এখানে কমিশনের কাজগুলো করেছেন, সত্যকে বেগবান করেছেন, তাদের সবাইকে অভিনন্দন শুভেচ্ছা জানাই।

আর্চবিশপ মহোদয় বাণীদীপ্তি নাট্যদলের প্রশংসা করে বলেন, “মঞ্চ নাটক বাস্তবতাকে সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলে এবং গভীরভাবে শিক্ষা দেয়। যারা নাটক মঞ্চস্থ করার উদ্যোগ নিয়েছেন, তাদের এই উদ্যোগকে অনুপ্রাণিত করি। আশা করি এই নাটক প্রদর্শনের মধ্য দিয়ে আমাদের জীবনের সুন্দর মূল্যবোধ, ভালোবাসা, সেবা, ন্যায্যাতা পাস্পরিক সম্পর্ক বৃদ্ধি পাবে- যেগুলো বর্তমান যুগে খুবই প্রয়োজন।

তেজগাঁও চার্চ কমিউনিটি সেন্টারে অনুষ্ঠিত হলো নাটক রং তুলির জীবন

আরও বক্তব্য রাখেন কারিতাস এশিয়ার প্রেসিডেন্ট কারিতাস বাংলাদেশের সাবেক নির্বাহী পরিচালক . বেনেডিক্ট আলো ডিরোজারিও।

তিনি বলেন, “আমি মনে করি সংস্কৃতির মধ্যে উল্লেখযোগ্য উপাদান হলো নাটক। নাটকের সংস্কৃতি আমাদের মধ্যে আরও জোরদার হবে, সংস্কৃতির মাধ্যমে আমরা আরও ভালো মানবিক মানুষ হওয়ার চেষ্টা চালাবো।

মঞ্চ নাটকের অভিনেতাগণ তাদের মনোমুগ্ধকর অভিনয়ের মধ্য দিয়ে দর্শক ধরে রাখেন দুই ঘন্টার বেশি সময়। সকলের অভিনয়ই ছিল চোখে পড়ার মতো।

এই নাটকে মদ পানের অপকারিতা, জমির দলিল সম্পর্কে অজ্ঞতার কারণে পরিণতি এবং অবৈধভাবে টাকার আয় করার মধ্য দিয়ে যে ভালো কিছু লাভ করা যায় না সেটাই মঞ্চে অভিনয়, লাইট শব্দের মধ্য দিয়ে বিন্দু রোজারিও তার অভিনেতাগণ সুচারুভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন।

এই নাটকটির রচনাকার বিন্দু রোজারিও বলেন, “এই নাটকটি গ্রাম বাংলার সাধারণ একটি জনপদের গল্প। একই জনপদের দুটি ভিন্ন রূপ, পঁচিশ বছর আগে এবং পঁচিশ বছর পরে, অনুন্নত এবং উন্নয়নশীল।

তেজগাঁও চার্চ কমিউনিটি সেন্টারে অনুষ্ঠিত হলো নাটক রং তুলির জীবন

তিনি আরও বলেন, “সমাজ এবং মানুষের জীবন নিত্য পরিবর্তনশীল। পরিবর্তনের টানাপোড়েন জীবনছোঁয়া অনুভূতিগুলো রং তুলি দিয়ে আঁকা ছবির মতই বর্ণিল আনন্দময়, আবার কখনও ফ্যাকাশে বিষাদময়। মানুষের জীবন সমাজ যেন রং তুলিরই ক্যানভাস, অথবা এক কথায় রং তুলির জীবন।

রং তুলি আমাদের হাতেই আছে। চাইলেই জীবনটাকে রাঙিয়ে বর্ণিল, আনন্দময় অর্থপূর্ণ করে তুলতে পারি আমরা, অথবা ফ্যাকাশে বিষাদময়! আবার কখনো বা রং তুলি থাকে অন্য কারো হাতে, তখন আমাদের কিছুই করার থাকেনা,” বলেন রোজারিও।

তিনি আরো বলেন, “এটি একটি কাল্পনিক কাহিনী। কিন্তু বাস্তবে যখন এরকম ঘটনার মুখোমুখি হই আমরা, তখন কি স্বাভাবিক থাকতে পারি? পারিনা। তাহলে এটুকু চেতনার ছাপ কিন্তু থাকলো আমাদের মস্তিস্কে। আর এটিই আমাদের নাটকের সার্থকতা।

দর্শকগণ আশা করছেন এই ধারা অব্যাহত থাকবে, প্রতি বছরই তারা নতুন নতুন নাটক উপভোগ করতে পারবেন। - আরভিএ সংবাদ