মুশরইল সাধু পিতরের ধর্মপল্লীতে অনুষ্ঠিত হলো নবান্ন উৎসব

সাধু পিতরের ধর্মপল্লীতে অনুষ্ঠিত হলো নবান্ন উৎসব

গত ৩০ নভেম্বর ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ,  রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের অন্তর্গত মুশরইল সাধু পিতরের ধর্মপল্লীতে অনুষ্ঠিত হলো নবান্ন উৎসব।

এতে ধর্মপল্লীর পালপুরোহিত ফাদার প্রশান্ত আইন্দ, সেমিনারির পরিচালক ফাদার বিশ্বনাথ মারান্ডী সহ ২জন সিস্টার,  সেমিনারিয়ান ও বিভিন্ন গ্রামের প্রায় ১৯৩ জন খ্রিষ্টভক্ত উপস্থিত ছিলেন।

খ্রিস্টভক্তগণ তাদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতার চিহ্নস্বরূপ নতুন ধানের নানা পিঠা ঈশ্বরকে দান করার উদ্দেশ্য গির্জায় নিয়ে আসে। নবান্ন উৎসব শুরু হয় খ্রিষ্টযাগের মধ্য দিয়ে। খ্রিস্টযাগে প্রধান পৌরোহিত্য করেন পালপুরোহিত ফাদার প্রশান্ত আইন্দ এবং সহার্পিত খ্রিস্টযাগে অংশ নেন ফাদার বিশ্বনাথ মারান্ডী।

খ্রিষ্টযাগের উপদেশ বাণীতে ফাদার প্রশান্ত আইন্দ বলেন, “আজ আমরা আমাদের ধর্মপল্লীতে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে নবান্ন উৎসব পালন করছি। যদিও এ পর্বটি খ্রিস্টরাজার পর্বদিনে পালন করা হয় তবে আমাদের ধর্মপ্রদেশে যাজকীয় অভিষেক ও অন্যান্য অনুষ্ঠান থাকায় আমরা আজকে করছি।”

মুশরইল সাধু পিতরের ধর্মপল্লীতে অনুষ্ঠিত হলো নবান্ন উৎসব

নবান্ন উৎসব হলো নব+ অন্ন অর্থাৎ নতুন ধানের উৎসব। সারাবছর ঈশ্বর আমাদের নানা আশীর্বাদে সহায়তা করেন তাই নবান্ন উৎসবের মধ্য দিয়ে আমরা ঈশ্বরের ধন্যবাদ ও মহিমা ঘোষণা করি,” বলেন ফাদার আইন্দ।

ফাদার আরো বলেন, “আমাদের যা আছে আমরা তা দিয়েই ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানাই ঈশ্বর এতেই খুশি হন। ঈশ্বর আমাদের সবাইকে ভালো রাখুন এবং সকল পরিবারকে আশীর্বাদ করুন আজকের দিনে আমরা সেই প্রার্থনাই করি।”

খ্রিস্টযাগের পরে খ্রিস্টভক্তদের নিয়ে আসা ভালোবাসার দানসামগ্রী আশীর্বাদ করা হয়। এসময় ফাদার বিশ্বনাথ মারান্ডী বলেন, “নবান্ন উৎসব আমাদের সকলকে একত্রিত করে যা একটি আনন্দোৎসবে রুপ নেয়। আসুন আমরা ঈশ্বরের শত আশীর্বাদ ও অনুগ্রহের জন্য আজকের দিনে তাকে ধন্যবাদ জানাই।”

ধর্মপল্লীর খ্রিস্টভক্ত প্রদীপ মুর্মু তার অনুভূতি প্রকাশ করে  বলেন, “আজকে আমি অনেক আনন্দিত কারণ অনেক বছর পর এভাবে আমরা নবান্ন উৎসব উদযাপন করছি। নতুন ধান কাটা, মরাই করা এবং ঈশ্বরের চরণে নিবেদন করতে পারা এটা সত্যিই আনন্দের।”

সাধু পিতরের ধর্মপল্লীতে অনুষ্ঠিত হলো নবান্ন উৎসব

নবান্ন উৎসব মূলত বাংলার অন্যতম প্রাচীন কৃষি-উৎসব। নতুন ধানের প্রথম ফলন ঘরে তোলার আনন্দকে কেন্দ্র করে এ উৎসবের জন্ম। প্রাচীন বাংলায় কৃষিজীবী মানুষ বিশ্বাস করত ধান শুধু খাদ্য নয়, জীবনের নিরাপত্তা ও সমৃদ্ধির প্রতীক।

তাই নতুন ধান ঘরে উঠলে তারা ঈশ্বরের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে, পরিবারের মঙ্গল কামনা করতে এবং গ্রামজুড়ে আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে বিশেষ আয়োজন করত। এ আয়োজনই ধীরে ধীরে “নবান্ন উৎসব” নামে পরিচিত হয়।

ইতিহাসবিদদের মতে, নবান্নের শিকড় অনেক পুরোনো  পাল ও সেন যুগের বাংলা-সহ উপমহাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ‘নবঙ্হ’ বা ‘নবঅন্ন’ উৎসবের উল্লেখ পাওয়া যায়।

নতুন অন্ন প্রথমে দেবতার উদ্দেশে নিবেদন করা, তারপর পরিবারের সবাইকে খাওয়ানো, এই নিয়মটি তখন থেকেই প্রচলিত ছিল।

খ্রিস্টধর্মাবল্ম্বীরা খ্রিস্টীয় উপাসনাবর্ষের শেষ রবিবার অর্থাৎ খ্রিস্টরাজার পর্বদিনে এ পর্বটি পালন করে। গারোরা যে উৎসবকে ওয়ানগালা বলে আখ্যায়িত করে। - ডানিয়েল লর্ড রোজারিও