ঠাকুরপুকুরের সেক্রেড হার্ট গির্জায় পরম পবিত্র শ্রীযীশু হৃদয়ের মহাপর্ব উদযাপন
গত ২৯শে জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, দক্ষিণ ২৪ পরগনার ঠাকুরপুকুরে অবস্থিত স্যাক্রেড হার্ট গির্জায় এক আধ্যাত্মিক পরিবেশে পালিত হলো পবিত্র যীশু হৃদয়ের মহোৎসব। এই পবিত্র পর্বের প্রস্তুতি শুরু হয়েছিল ২০ জুন থেকে, ৯ দিনব্যাপী নভেনা প্রার্থনার মাধ্যমে যা শেষ করা হয়।
উৎসবের দিনটি শুরু হয় এক অন্তর্মুখী প্রার্থনা পর্বের মাধ্যমে। সকালে মিসা শুরুর আগে ৩০ মিনিটের জন্য অনুষ্ঠিত হয় ভক্তিমূলক উপাসনা ও আরাধনা, যা পরিচালনা করেন ফাদার কনৌজ রায় ও গির্জার পালক পুরোহিত ফাদার তুষার আগস্টিন। এই সময়ে উপাসনালয় যেন ঈশ্বরীয় কৃপা ও উপস্থিতিতে পূর্ণ হয়ে ওঠে।
সকাল ৮:০০টায় শুরু হয় মহাপবিত্র খ্রীষ্টযাগ। উৎসবকে আরও ঐশ্বর্যময় করে তোলে হিন্দি গ্রুপের একটি প্রবেশিকা নৃত্য ও বাইবেল শোভাযাত্রা। গির্জার প্রধান দ্বার, অভ্যন্তর ও বেদী সযত্নে সাজানো হয় ফুল, বেলুন ও ধর্মীয় প্রতীক দিয়ে—যা এক প্রশান্তিময় ও উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি করে। এই সৌন্দর্যসাধনায় গির্জার যুবক-যুবতীদের অংশগ্রহণ ছিল উল্লেখযোগ্য।
পবিত্র মিসা উৎসর্গ করেন ফাদার কনৌজ রায়, ফাদার তুষার আগস্টিন ও ফাদার অমৃত এক্কা। ফাদার কনৌজ রয় তাঁর হৃদয়স্পর্শী উপদেশে ভালোবাসা, বিশ্বাস ও সেবার গুরুত্ব তুলে ধরেন, যা উপস্থিত ভক্তদের মনে গভীর অনুরণন সৃষ্টি করে। তিনি বলেন “প্রত্যেক মানুষের মধ্যে দুটি ধরনের মনোভাব থাকে — একটি মানবিক মনোভাব এবং একটি ঈশ্বরীয় মনোভাব।ঈশ্বরীয় মনোভাব আমাদের শেখায়: দাও, দাও এবং ভুলে যাও। অন্যদিকে মানবিক মনোভাব বলে: নাও, নাও এবং ভুলে যাও। তবে, আজ আমাদের ভাবতে হবে — আমরা কোন মনোভাব নিয়ে আমাদের জীবন কাটাচ্ছি?”।
খ্রীষ্টযাগ শেষে ধর্মপল্লীর পক্ষ থেকে উপস্থিত ভক্তদের জন্য পরিবেশন করা হয় খাবারের প্যাকেট। এই দিনটিতে ৫০০-রও বেশি ভক্ত অংশগ্রহণ করেন, যার ফলে গির্জা চত্বর ছিল প্রাণবন্ত ও প্রার্থনাময় পরিবেশে মুখরিত।
এই উৎসবের সফল আয়োজনের পেছনে ছিল গির্জার বিভিন্ন গ্রুপ—বিশেষত পালকীয় পরিষদ, যুবক দল, গানের দল ও স্বেচ্ছাসেবকদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ও আন্তরিকতা। তাদের সম্মিলিত উদ্যোগ এই দিনটিকে পরিণত করে এক ঐশ্বরিক মিলনের দিনে।
এই দিনটি ছিল ঈশ্বরের প্রেম, ঐক্য ও সেবার এক জীবন্ত উদাহরণ—যা সকল ভক্তের হৃদয়ে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
প্রতিবেদন - শুভম মিত্র