ঢাকা ক্রেডিটের ৬৪তম বার্ষিক সাধারণ সভা ও ডিভাইন মার্সি হাসপাতালের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান
গত ২৯ নভেম্বর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার মঠবাড়ীতে ডিভাইন মার্সি হাসপাতালের প্রঙ্গনে অনুষ্ঠিত হলো ঢাকা ক্রেডিটের ৬৪তম বার্ষিক সাধারণ সভা ও ডিভাইন মার্সি হাসপাতালের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান।
সদস্য সক্রিয় অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হলো দি খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লি:, ঢাকা (ঢাকা ক্রেডিট)-এর ৬৪তম বার্ষিক সাধারণ সভা এবং সেই সাথে উদ্বোধন করা হলো সমিতির স্বপ্নের মেঘা প্রকল্প ‘ডিভাইন মার্সি হাসপাতাল লি:।’
সমিতির প্রেসিডেন্ট ইগ্নাসিওস হেমন্ত কোড়াইয়ার সভাপতিত্বে এবং সেক্রেটারি মাইকেল জন গমেজের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহা ধর্মপ্রদেশের অবসরপ্রাপ্ত আর্চবিশপ কার্ডিনাল প্যাট্রিক ডি’রোজারিও সিএসসি।
গেস্ট অব অনার হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব জনাব মো. সাইদুর রহমান।
এ ছাড়াও বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সমবায় অধিদপ্তরের মহা পরিচালক ও নিবন্ধক শরিফুল ইসলাম, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের অন্যতম সভাপতি নির্মল রোজারিও, ঢাকা ক্রেডিটের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বাবু মার্কুজ গমেজ, দি কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লীগ অব বাংলাদেশ লি: (কাল্ব) এবং , দি মেট্রোপলিটান খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি লি:’র চেয়ারম্যান আগস্টি পিউরীফিকেশন।
এ ছাড়াও আরো উপস্থিত ছিলেন দি সেন্ট্রাল এসোসিয়েশন অব খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভস (কাককো) লি:’র চেয়াম্যান পংকজ গিলবার্ট কস্তা, মিশরের সেন্ট পল কপটিক মেডিকেল সার্ভিসের ডা. ইসাম হালিম আওয়াদ সমবায় অধিদপ্তরের উপনিবন্ধক (প্রশাসন) জনাব মোছা: নূর-ই-জান্নাত, কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার জনাব তনিমা আফ্রাদ, ঢাকা ক্রেডিটের ভাইস-প্রেসিডেন্ট পাপড়ী দেবী আরেং, ট্রেজারার সুকুমার লিনুস ক্রুশ ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যবৃন্দসহ সাধারণ সদস্যগ।
মঠবাড়ীর সেন্ট জেভিয়ার ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের প্রিন্সিপাল ফাদার প্রভাস পিউস রোজারিও এসজে’র প্রার্থনার পর কার্ডিনাল প্যাট্রিক পবিত্র জল সিঞ্চন করেন এবং সভাপতি ও অন্যান্য অতিথিবৃন্দকে নিয়ে নামফলক উন্মোচন করেন।
এরপর তারা বেলুন উড়িয়ে এবং কবুতর অবমুক্ত করে হাসপাতালের উদ্বোধন ঘোষণা করেন। পরবর্তীতে অতিথিবৃন্দ ফিতা কেটে হাসপাতালে প্রবেশ করেন। এ সময় তারা স্মৃতি রক্ষার্থে একটি বৃক্ষ রোপন করেন।
হাসপাতাল উদ্বোধনের পর শুরু হয় ৬৪তম বার্ষিক সাধারণ সভার কার্যক্রম। অনুষ্ঠান সূচি অনুসারে জাতীয় সঙ্গীতের সাথে জাতীয় পতাকা, সমবায় পতাকা এবং ঢাকা ক্রেডিট পতাকা উত্তোলন, কোরাম ঘোষণা, পবিত্র বাইবেল পাঠ ও প্রার্থনা ও মৃত সদস্যদের আত্মার কল্যাণে প্রার্থনা করা হয়।
এ দিন সভাপতি ইগ্নাসিওস হেমন্ত কোড়াইয়া ঢাকা ক্রেডিটের চলমান উন্নয়ন, কার্যক্রম এবং দিকনিদের্শনামূলক বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, ‘ঢাকা ক্রেডিট আজ সমিতির মেঘা প্রকল্প ডিভাইন মার্সি হাসপাতালের শুভ উদ্বোধন হয়েছে।
এই বছরই ৩১ জানুয়ারি, আশির্বাদ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে হাসপাতালের চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু হয়। প্রতি মাসেই হাসপাতালের আয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। আশা করি, শিঘ্রই নিজস্ব আয় দিয়ে হাসপাতালের ব্যয় নির্বাহ হবে। সমবায়ীদের স্বাস্থ্যসেবায় অন্তর্ভূক্ত করতে আমরা প্রায় ৬০টি প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়েছি, আরো অনেক প্রতিষ্ঠান চুক্তিবদ্ধ হওয়ার প্রক্রিয়ায় রয়েছে। এই হাসপাতাল আমাদের সকলের হাসপাতাল, আশা করি সবাই এই হাসপাতালে সেবা নিবেন।
“বর্তমানে ঢাকা ক্রেডিটের প্রকল্পগুলো থেকে আয় আসছে। বর্তমান বোর্ড নিরলস পরিশ্রম করে সমিতির জন্য কাজ করছে। এ ছাড়াও ঋণখেলাপীদের নিয়েও সমিতি কাজ করছে এবং ঋণখেলাপীর হার কমেছে। আপনাদের সহযোগিতায় আমরা বিগত একটি বছর সুন্দর ও সফলভাবে শেষ করেছি। আশা করি, বরাবরের মতো আগামীতেও আপনারা সহযোগিতা দিয়ে সমিতির উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করবেন”, বলেন সভাপতি কোড়াইয়া।
গেস্ট অব অনার বলেন, “আজকে আপনাদের এই সার্থক দিনের জন্য শুভেচ্ছা জানাই। কোভিডের সময় সবকিছু বন্ধ ছিল, শুধু হাসপাতাল খোলা ছিল। তখন মনে হতো, এটা খুবই জরুরী। হাসপাতাল নিয়ে আমাদের অনেক অভজারভেশন আছে মান নিয়ে। কিন্তু তারপরও আমাদের সেখানে যেতে হয়।”
তিনি আরো বলেন, “আজ ঢাকা ক্রেডিটের নির্মিত ডিভাইন মার্সি হাসপাতাল নতুন আশা নিয়ে উদ্বোধন হলো। আশা করি এই হাসপাতাল একটি ভাল সেবার প্রতিষ্ঠান হবে। আপনাদের নিকট অনুরোধ আপনারা আপনাদের হাসপাতালের মান অক্ষুন্ন রাখবেন।”
প্রধান অতিথি কার্ডিনাল প্যাট্রিক বলেন, “আপনাদের সবাইকে অভিনন্দন। অভিনন্দন বলছি এই কারণে, আমাদের হলি ফ্যামিলি হাসপাতাল বিলুপ্ত হয়ে গেল। পরে যখন শুনলাম ঢাকা ক্রেডিট হাসপাতাল করবে, তখন ভেবেছিলাম কি সাহস তাদের। পরে তাদের বলেছিলাম, আপনাদের জনবল আছে, আপনাদের সামার্থ আছে। কিন্তু মন্ডলীর কাছ থেকে একটা বিষয় নিতে হবে, তা হলো প্রজ্ঞাবল, প্রজ্ঞাবল হলো জ্ঞান।”
তিনি আরো বলেন, “আজ ঢাকা ক্রেডিট শতভাগ চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে হাসপাতাল করেছে। তাই আপনাদের অভিনন্দন। এবং আমি আজ আপনাদের মধ্যে এসেছি ডিভাইন মার্সি হাসপাতাল উদ্বোধন করতে। আমি প্রার্থনা করি আপনাদের এই সেবার মনোভাব যেন ডিভাইন মার্সিকে এগিয়ে নিয়ে যায়।”
এদিন অন্যান্য অতিথিবৃন্দগণ ঢাকা ক্রেডিটের হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার জন্য ধন্যবাদ জানান। পাশাপাশি ঢাকা ক্রেডিটের কার্যক্রম এবং চলমান উন্নয়ন নিয়ে প্রশংসা করেন।
বক্তব্য পর্বের পর সাধারণ সভার কার্যসূচি অনুসারে ব্যবস্থাপনা কমিটির প্রতিবেদন পেশ ও অনুমোদন, বার্ষিক হিসাব বিবরণী পেশ ও অনুমোদন, নিরীক্ষা প্রতিবেদন পর্যালোচনা ও অনুমোদন, প্রস্তাবিত বাজেট পর্যালোচনা ও অনুমোদন, ক্রেডিট কমিটির প্রতিবেদন পেশ ও অনুমোদন, সুপারভাইজরি কমিটির প্রতিবেদন পেশ ও অনুমোদন, নতুন প্রস্তাবনা পেশ ও অনুমোদন, উপ-আইন সংশোধনী পেশ ও অনুমোদন এবং বিবিধ বিষয়ে আলোচনা করা হয়।
উল্লেখ্য, ১৯৫৫ খ্রিষ্টাব্দে মাত্র ২৫ জন সদস্যের ৫০ টাকা মূলধন ফাদার চার্লস জে. ইয়াং সিএসসি ঢাকা ক্রেডিট প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে ঢাকা ক্রেডিটের প্রায় ৪৭ হাজার সদস্য এবং পরিসম্পদ ১৪শ কোটি টাকা।
ঢাকা ক্রেডিট বিভিন্ন সামাজিক প্রকল্প নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। ‘ডিভাইন মার্সি হাসপাতাল লি:’ ঢাকা ক্রেডিটের সবচেয়ে বড়ো প্রকল্প। দৃষ্টিনন্দন পরিবেশে স্থাপিত আন্তর্জাতিকমানের হাসপাতালে রয়েছে সকল সুবিধাসম্বলিত সর্বাধুনিক প্যাথোলজি, ১২৮ স্লাইস সিটি স্ক্যান, ইসিজি, ইকো, ইটিটি, আল্ট্রাসনোগ্রাম, ডিজিটাল এক্সরে, অপারেশন থিয়েটার, জেনারেল মেডিসিন।
এ ছাড়াও রয়েছে রেসপিরেটরি মেডিসিন, নিউরো মেডিসিন, ফিজিক্যাল মেডিসিন, হৃদরোগ, এন্ডোস্কোপি ও কোলনোস্কোপিসহ গাস্ট্রোএন্টারোলোজি, নেফ্রোলোজি, হেমাটোলোজি, ডারমাটোলোজি, অবস এন্ড গাইনী, পেডিয়াট্রিক্স, অপথালমোলোজি, পেডিয়াট্রিক্স কারডিওলজি, জেনারেল এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি।
আরো রয়েছে নিউরো সার্জারি, পেডিয়াট্রিক্ নিউরো সার্জারি, ল্যাপরোস্কোপি সার্জারি, অর্থপেডিক, ইএনটি, ইউরোলোজি, ডেন্টাল কেয়ার, ডায়াবেটিক সেন্টার, ডায়োলজিস সেন্টার, ফিজিওথেরাপী সেন্টার, আইসিইউ, এনআইসিইউ, পিআইসিইউ, এইচডিইউ, ব্লাড ব্যাংক, ভ্যাক্সিনেশন সেন্টার, ২৪ ঘন্টা এ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস, মর্গ এবং ফার্মেসী সেবাসহ যাবতীয় আধুনিক সেবা। - ডিসিনিউজ