ঢাকা ক্রেডিটের প্রতিষ্ঠাতা ফাদার চার্লস জে. ইয়াং সিএসসি’র ৩৭তম মৃত্যুবার্ষিকী পালন

ঢাকা ক্রেডিটের প্রতিষ্ঠাতা ফাদার চার্লস জে. ইয়াং সিএসসি’র ৩৭তম মৃত্যুবার্ষিকী পালন

গত ১৪ নভেম্বর ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, তেজগাঁও হলি রোজারি চার্চের কবরাস্থানে ফাদার চার্লস জে. ইয়াং এর সমাধীতে পুষ্পস্তবক অর্পন এবং প্রার্থনার মাধ্যমে ফাদার ইয়াংকে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।

ফাদার চার্লস জে. ইয়াং সিএসসি হলেন বাংলাদেশের ক্রেডিট ইউনিয়নের জনক ঢাকা ক্রেডিটের প্রতিষ্ঠাতা। 

ঢাকা ক্রেডিটের বিকে গুড কনফারেন্স হলে খ্রিষ্টাযাগ এবং এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। খ্রিষ্টাযাগ উৎসর্গ করেন জন ভিয়ানী হাসপাতালের নির্বাহী পরিচালক ফাদার লিন্টু সি. কস্তা।

সময় ঢাকা ক্রেডিটের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশ খ্রীষ্টান এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট নির্মল রোজারিও, প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বাবু মার্কুজ গমেজ, বাংলাদেশ ন্যাশনাল ওয়াইএমসিএ প্রেসিডেন্ট মার্সিয়া মিলি গমেজ, ঢাকা ক্রেডিটের বোর্ড অব ডিরেক্টর, ক্রেডিট সুপারভাইজরি কমিটির সদস্যবৃন্দ, ঢাকা ক্রেডিটের কর্মী এবং সদস্যবৃন্দরা উপস্থিত ছিলেন।

দিন ঢাকা ক্রেডিটের প্রেসিডেন্ট মাইকেল জন গমেজ বলেন, “আজকে আমরা বাংলাদেশে ক্রেডিট ইউনিয়নের জনক ঢাকা ক্রেডিটের প্রতিষ্ঠাতা ফাদার চার্লস জে. ইয়াং-এর ৩৭তম মৃত্যুবার্ষিকী পালন করছি। সুদূর আমেরিকা থেকে এসে তিনি বাংলাদেশের মানুষের কথা ভেবেছেন।

আমরা যদি ফাদার ইয়াং-এর কাজ এবং আদর্শ ধারণ এবং বহন করি, তাহলে আমরা অনেক দূর যেতে পারবো। আজ আমরা ফাদার ইয়াং-এর অবদান কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করি, সেই সাথে বিশ্বাস করি তিনি পরলোকে ঈশ্বরের কাছে চিরশান্তিতে রয়েছেন,” বলেন জন গমেজ।

তেজগাঁও হলি রোজারি চার্চের কবরাস্থানে ফাদার চার্লস জে. ইয়াং এর সমাধীতে পুষ্পস্তবক অর্পন

প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট নির্মল রোজারিও বলেন, “আমরা ফাদার চার্লস জে. ইয়াং-এর উপর কৃতজ্ঞ। বাংলাদেশ জন্মের শুরুতে আমাদের খ্রিষ্টান সমাজের অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। তখন কাবুলীয়ালা মহাজনরা চড়া সুদে দরিদ্র মানুষদের টাকা দিত। এতে তারা ঋণের জালে জর্জরিত হয়ে পড়েছিল। বিষয়টি তখন তৎকালীন আর্চবিশপ লরেন্স এল. গ্রেণার অনুধাবন করে ফাদার ইয়াংকে ক্রেডিট ইউনিয়ন নিয়ে পড়াশোনার জন্য কানাডায় প্রেরণ করেন।

ফাদার ইয়াং কানাডায় পড়াশোনা করে দেশে এসে ১৯৫৫ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকা ক্রেডিট প্রতিষ্ঠা করেন। তার সেই আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে দেশে আজ অসংখ্য ক্রেডিট ইউনিয়ন গড়ে উঠেছে, আর খ্রিষ্টান সমাজসহ জাতি-ধর্ম-বর্ণ অসংখ্য মানুষ নিজেদের উন্নয়ন ঘটিয়ে যাচ্ছে,” বলেন রোজারিও।

তিনি আরো বলেন, “ক্রেডিট ইউনিয়ন মানুষের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য প্রতিষ্ঠা হয়েছে, আমরা যেন ঋণ নিয়ে নিজেদের উন্নয় করি, যেন ঋণখেলাপী না হই। আমাদের আর্থিক সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে হবে। আমাদের সমাজে যারা নেতৃত্ব দেন, তারাও যেন সততার সাথে নেতৃত্ব দেন। আর যারা পেশাজীবী আছেন, তারা যেন ভালো করে ক্রেডিট নিয়ন নিয়ে জানতে পারেন, তাহলেই ভাল সেবা দিতে পারবে।

প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বাবু মার্কুজ গমেজ বলেন, “বাংলাদেশের ফাদার ইয়াং একজন মিশনারী হয়ে বাণী প্রচার করতে এই দেশে এসেছিলেন। শুধু খ্রিষ্টযাগ দিয়েই বাণী প্রচার হয় না, দুঃখক্লিষ্ট মানুষের সেবা দিয়েও খ্রিষ্টের আদর্শ প্রতিষ্ঠা করা যায়। ফাদার ইয়াং এই দেশের দুঃখক্লিষ্ট মানুষদের অভাব দারিদ্রতা থেকে মুক্ত করতে ঢাকা ক্রেডিট প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

ছাড়াও শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন প্রতিষ্ঠানের সিইও জোনাস গমেজ। এদিন ঢাকা ক্রেডিট এমপ্লয়ীজ ওয়েলফেয়ার ফাদার ইয়াং-এর সমাধীতে শ্রদ্ধা নিবেদন করে।

ফাদার চার্লস জে. ইয়াং ১৯০৪ খ্রিষ্টাব্দের মে, আমেরিকাতে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৯৫৫ সালে ঢাকা ঢাকার লক্ষ্মীবাজারে (বর্তমানে তেজগাঁও) দি খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লি:, ঢাকা বা ঢাকা ক্রেডিট প্রতিষ্ঠা করেন।

মাত্র ৫০ জন সদস্য ২৫ টাকা মূলধন নিয়ে প্রতিষ্ঠা করা প্রতিষ্ঠানটি আজ ৪৭ হাজার সদস্যের প্রায় ১৫শ কোটি টাকার মূলধনের প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। এই মহান ব্যক্তি ১৪ নভেম্বর, ১৯৮৮ সালে ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক মর্মান্তিক সড়ক দূর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করেন। - ডিসিনিউজ