নওগাঁ জেলার সাপাহারে শিক্ষার নতুন দিগন্ত: বিশ্বমানের “সেন্ট জেভিয়ার্স ইন্টারন্যাশনাল স্কুল” এর আনুষ্ঠানিক যাত্রা
নওগাঁর সীমান্তবর্তী উপজেলা সাপাহারে শুরু হলো শিক্ষা নিয়ে নতুন এক সম্ভাবনাময় অধ্যায়। দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা পূরণ করে এবং বিশ্বমানের শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে আত্মপ্রকাশ করেছে “সেন্ট জেভিয়ার্স ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, সাপাহার”।
আগামী ২০২৬ শিক্ষাবর্ষ থেকে পূর্ণাঙ্গ পাঠদান শুরু করার উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠানটি ইতোমধ্যেই তাদের কার্যক্রম শুরু করেছে।
এটি শুধু একটি সাধারণ স্কুল নয়, বরং ১৫৪০ সালে স্পেনের লয়োলার সেন্ট ইগনাশিয়াস অব লয়োলা কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত এবং বিশ্বজুড়ে সম্মানিত “সোসাইটি অব জিজাস” (জেসুইট) সম্প্রদায় দ্বারা পরিচালিত একটি প্রতিষ্ঠান।
প্রায় পাঁচ শতাব্দীর ঐতিহ্যবাহী জেসুইটরা বর্তমানে বিশ্বের ৯৬টি দেশে ৪,০০০-এরও বেশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছেন, যার মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫টি এবং ভারতের ৬৫টি খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজ।
বাংলাদেশেও মিশনারীদের দ্বারা পরিচালিত নটর ডেম কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়, হলিক্রস স্কুল অ্যান্ড কলেজ, সেন্ট যোসেফ স্কুল ও কলেজ, সেন্ট ফিলিপস স্কুলসহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের সুনাম রয়েছে। এই সফলতার ধারাবাহিকতায় সাপাহারে যাত্রা শুরু করল জেসুইট দের সেন্ট জেভিয়ার্স ইন্টারন্যাশনাল স্কুল।
স্কুল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য অনুযায়ী, এটি কোনো “ইংলিশ ভার্সন” নয়; বরং ব্রিটেনের ক্যামব্রিজ কারিকুলাম ভিত্তিক একটি পুরোদস্তুর ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল। শিক্ষার্থীদের বই ও সিলেবাস নির্ধারণ করা হবে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসারে- ক্যামব্রিজ কারিকুলামে ।
প্রতিষ্ঠানটির মূল শিক্ষা দর্শন হলো “কুরা পারসোনালিস”, অর্থাৎ প্রতিটি শিক্ষার্থীর প্রতি ব্যক্তিগত এবং যত্নশীল নজর দেওয়া। পাশাপাশি জেসুইট শিক্ষার মূলনীতি “ম্যাজিস” অর্থাৎ উৎকর্ষের পথে অগ্রসর হওয়া এর আলোকে শিক্ষার্থীদের মেধা, ব্যক্তিত্ব, মূল্যবোধ ও নেতৃত্বের গুণাবলি বিকশিত করতে কাজ করবে এই প্রতিষ্ঠান।
এখানে মুখস্থবিদ্যার পরিবর্তে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে বিশ্লেষণমূলক চিন্তাভাবনা ও সৃজনশীল শিক্ষার প্রতি।
স্কুলটির অধ্যক্ষ ড. ফাদার মিল্টন কস্তা, এস.জে. বলেন, “আমাদের উদ্দেশ্য কেবল পরীক্ষায় ভালো ফল করানো নয়, বরং শিক্ষার্থীদের সৎ, মানবিক ও নৈতিকভাবে দৃঢ় চরিত্রের মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা। আমাদের পাঠদান ব্যবস্থা এমনভাবে সাজানো হবে যে, শিক্ষার্থীদের বাইরে কোনো প্রাইভেট বা কোচিংয়ের প্রয়োজন হবে না। ক্লাসরুমেই পূর্ণাঙ্গ শিক্ষা নিশ্চিত করা হবে।”
প্রথম পর্যায়ে নার্সারি ও কেজি-১ শ্রেণি দিয়ে যাত্রা শুরু করবে স্কুলটি। পরবর্তী সময়ে ধাপে ধাপে চালু হবে ‘ও’ লেভেল (এসএসসি সমমান) এবং ‘এ’ লেভেল (এইচএসসি সমমান)। ভবিষ্যতে শিক্ষার্থীরা যেন বাংলাদেশসহ বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে স্কলারশিপ নিয়ে পড়াশোনার সুযোগ পায় সেই লক্ষ্যেই প্রণয়ন করা হচ্ছে শিক্ষা কাঠামো।
স্কুলটি সাপাহারের জয়পুর এলাকার পোরশা রোডে, ডাঃ মো. শহিদুল ইসলামের ক্লিনিকের বিপরীত পাশে অবস্থিত। প্রায় এক একর জায়গার ওপর নির্মিত মনোরম ও শিক্ষাবান্ধব ক্যাম্পাসে আধুনিক ক্লাসরুম, পর্যাপ্ত আলো-বাতাস, আলাদা ডেক্সসহ শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে অনুকূল ও নিরাপদ অবকাঠামো।
২০২৬ সালের জানুয়ারি সেশনের জন্য ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আগ্রহী অভিভাবকরা এখন থেকেই স্কুল অফিস থেকে ভর্তি ফরম সংগ্রহ করতে পারবেন।
১ ডিসেম্বর ২০২৫ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হবে এবং ১১ জানুয়ারি ২০২৬ থেকে ক্লাস চালু হবে। ধর্ম, বর্ণ ও জাতি নির্বিশেষে সকল শিক্ষার্থীর জন্য উন্মুক্ত থাকবে এই বিদ্যালয়।
সাপাহারের একজন শিক্ষানুরাগী মোস্তাক আহমেদ জানান, “মফস্বল এলাকায় এমন একটি আন্তর্জাতিক মানের স্কুল প্রতিষ্ঠা হওয়ায় স্থানীয় জনগণ, বিশেষ করে অভিভাবকদের মধ্যে প্রচণ্ড আগ্রহ ও আশার সঞ্চার হয়েছে। এটি জেলার শিক্ষাঙ্গনে নতুন উদ্দীপনা নিয়ে আসবে।” - ফাদার মিল্টন কস্তা, এস.জে