প্রধান বিচারপতি বলেন “আমাদের সব বিভেদের ঊর্ধ্বে উঠতে হবে”

বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি স্যার রেফাত আহমেদ শান্তিপূর্ণ, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সমৃদ্ধ দেশ গঠনের লক্ষ্যে ধর্ম, লিঙ্গ ও জাতিগত বিভাজনের ঊর্ধ্বে ওঠার আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, “আপনার ধর্ম, আপনার লিঙ্গ, আপনার জাতি, আপনার ভাষা বা আপনার গায়ের রঙ—এই কোনো কিছুই গুরুত্বপূর্ণ নয়। আমাদের সব বিভেদের ঊর্ধ্বে উঠতে হবে।”
তিনি গত সন্ধ্যায় রাজধানীর আর্চবিশপ হাউসে ভ্যাটিকান প্রতিনিধিদলের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা বলেন।
বাংলাদেশ ক্যাথলিক বিশপ সম্মেলন (CBCB) এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে কার্ডিনাল জর্জ জ্যাকব কোভাকাদ, ভ্যাটিকানের Interreligious Dialogue বিভাগের প্রিফেক্টকে স্বাগত জানাতে।
প্রতিনিধিদলে আরও ছিলেন মন্সিনিয়র ইন্দুনিল জনকরত্নে কোদিথুওক্কু কানকানামালাগে, বিভাগের সচিব, ফাদার জোসেফ ভিক্টর এডউইন, এসজে, এবং ফাদার মার্কাস সলো কেওটা, এসভিডি।
এই প্রতিনিধিদল আন্তঃধর্মীয় সংলাপকে উৎসাহিত করতে এক সপ্তাহের সফরে ঢাকায় এসেছে। তারা শিক্ষার্থী ও শিক্ষক, আন্তঃধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন, জাতীয় মসজিদ ও ইসলামিক ফাউন্ডেশন, বৌদ্ধ ও হিন্দু মন্দির এবং রাজধানীর ক্যাথলিক গির্জা পরিদর্শন করবেন।
সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে প্রধান বিচারপতি বলেন, “আজ আমরা এক মহান আদর্শের কথা বলেছি—যা অনেক সময় বাধা-বিপত্তির মুখে পড়ে। সেই আদর্শের পথে চলা থেমে যেতে পারে, কিন্তু তাতে আমাদের নিরুৎসাহিত হওয়া যাবে না।”
তিনি আরও বলেন, “আজকের আলোচনার মূল বার্তা হলো—আপনার ধর্ম, লিঙ্গ, জাতি, ভাষা বা গায়ের রঙ—কোনো কিছুই গুরুত্বপূর্ণ নয়। আমাদের সব বিভেদের ঊর্ধ্বে উঠতে হবে।”

সামাজিক ও রাজনৈতিক কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মতবিরোধ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমাদের একসঙ্গে বসে এসব ঘটনার মূল কারণ খুঁজে বের করতে হবে—কেন এগুলো ঘটে, কোথা থেকে এগুলোর উৎপত্তি।”
তিনি বলেন, “আমরা যেন নিরুৎসাহিত না হই, হতাশ না হই। আমাদের ‘Unity in Diversity’ গ্রহণ করতে হবে।”
প্রধান বিচারপতি বলেন, “আমাদের বোঝাপড়া গড়ে তুলতে হবে। আমাদের ধৈর্য ধরতে হবে এবং বাস্তববাদী হতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, “প্রত্যেক ধর্ম অন্য ধর্মের প্রতি সম্মান শেখায়। আমাদের সংবিধান ধর্মীয় স্বাধীনতার নীতিকে সমর্থন করে। পারস্পরিক সংলাপ ও সহাবস্থানের মাধ্যমে বাংলাদেশের সব ধর্মের মানুষ একটি ঐক্যবদ্ধ সমাজ গড়ে তুলতে পারে।”
কার্ডিনাল জর্জ কোভাকাদ বাংলাদেশের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের ঐতিহ্যের প্রশংসা করে বলেন, “বাংলাদেশ একটি উজ্জ্বল উদাহরণ, যেখানে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ও মুসলমানরা একসঙ্গে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করে। এই ঐক্য মানব মর্যাদা বৃদ্ধি করে।”
তিনি পোপ ফ্রান্সিস-এর উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, “পোপ ফ্রন্সিস তার সর্বজীন পত্রে ‘ফ্রাতেল্লী তুত্তি’ আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, এই বৈশ্বিক যুগে আমাদের চরম জাতীয়তাবাদী ও সাম্প্রদায়িক মনোভাবের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। এই মনোভাব শুধু নিজেদের স্বার্থকেই সহ্য করে এবং বাইরের সবকিছুকে হুমকি হিসেবে দেখে।”
কার্ডিনাল কোভাকাদ বলেন, “আন্তঃধর্মীয় সংলাপ কোনো রাজনৈতিক বিষয় নয়। এই সংলাপের ফলাফলই মানুষের মধ্যে গভীর ঐক্য আনতে পারে।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা বিশ্বাসের আলোকে বোঝাপড়ার জন্য সংলাপে অংশ নিই। এই বোঝাপড়ার মধ্য দিয়ে আমরা সৃষ্টিকর্তার ঐশী সত্যের সন্ধান করি।”
আর্চবিশপ বিজয় ডি’ক্রুজ, OMI, CBCB-এর চেয়ারম্যান, স্বাগত বক্তব্যে বলেন, “আমি কার্ডিনাল জর্জ কোভাকাদকে বাংলাদেশে আন্তরিকভাবে স্বাগত জানাই। আপনার উপস্থিতি ও দিকনির্দেশনা আমাদের দেশে বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে ঐক্য ও সম্প্রীতি গড়ে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।” - আরভিএ সংবাদ