৫৮তম বিশ্ব শান্তি দিবস উপলক্ষে পোপ ফ্রান্সিসের বাণী, “আমাদের পাপ ক্ষমা করো : তোমার শান্তি প্রদান করো”

৫৮তম বিশ্ব শান্তি দিবস উপলক্ষে পোপ ফ্রান্সিসের বাণী

আজ  জানুয়ারি ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ৫৮তম বিশ্ব শান্তি দিবস উপলক্ষে পোপ ফ্রান্সিসের বাণী “আমাদের পাপ ক্ষমা করো : তোমার শান্তি প্রদান করো”।

ক। বিপন্ন মানবতার অনুনয় শ্রবণ করো

১। নতুন বছরের প্রভাতেই স্বর্গীয় পিতা আশার প্রেরণায় দিয়েছেন জুবিলি বছর। আমি আমার অন্তর থেকে প্রত্যেক নারী-পুরুষকে শান্তির শুভ বার্তা জানাচ্ছি। যারা উৎপীড়িত, অতীতের ভুলের কারণে পরিশ্রান্ত, অন্যের বিচারে যারা নির্যাতিত এবং নিজের জীবনের জন্য নূন্যতম আশাবাদী হতে পারছে না- আমি বিশেষভাবে তাদের বিষয় ভাবছি। আমি তাদের প্রত্যেকের জন্য ঐকান্তিকভাবে যাচ্না করছি আশা ও শান্তি- এ অনুগ্রহের বছরে যার উৎস হলো মুক্তিদাতার হৃদয়।

২। এ গোটা বছর জুড়ে ক্যাথলিক চার্চ উদযাপন করবে জুবিলি- যে ঘটনা হৃদয়কে আশায় পরিপূর্ণ করবে। জুবিলি স্মরণ ক’রে দেয় প্রাচীন ইহুদিদের প্রথা, যখন প্রতি ৪৯ বছর পর- মেষের সিংগা বাজিয়ে ঘোষণা করা হতো ক্ষমা ও গোটা জাতির মুক্তির বছর  (লেভি ২৫:১০)। এ সমারোহপূর্ণ ঘোষণা বছরজুড়ে প্রতিধ্বনিত হতো  (লেভি ২৫:৯), ঈশ্বরের ন্যায় বিচার জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে পুন:স্থাপিত হতো। ভূমির অধিকার, বিষয়বস্তুর মালিকানা, অন্যের সঙ্গে সম্পর্ক, দরিদ্র ও অধিকারচূতদের অধিকার নিশ্চিত হতো। তুরীধ্বনি, স্মরণ করে দিতো গোটা জাতি, ধনী বা গরিব সবাই সমান- যেনো কেউ পৃথিবীতে নির্যাতিত নয়- যেনো সবাই একই পিতার ভাই-বোন, ছেলে-মেয়ে এবং ঈশ্বরের অভিপ্রায় অনুসারে মুক্তির জন্যই জন্মলাভ করেছে (লেভি ২৫:১৭, ২৫, ৪৩, ৪৬, ৫৫)।

৩। আমাদের সময়েও ন্যায্যতা এমন একটি বিষয় যা আমাদের অনুপ্রাণিত করে বিশ্বে ঈশ্বরের মুক্তিদায়ী ন্যায্যত স্থাপন করার জন্য। এ অনুগ্রহ বছরের শুরুতে মেষের সিংগাধ্বনির বদলে- আমরা শুনতে চাই “সাহায্যের হতাশাপূর্ণ অনুনয়” তা যেনো মনে হয় আবেলের রক্তের কান্না (আদি ৪:১০) যেনো ধ্বনিত হয় বিশ্বের বৃহৎ অংশজুড়ে- এমন অনুনয়- যেনো ঈশ্বর শুনতে ব্যর্থ না হোন। আমাদের দিক থেকে আমাদের বাধ্য হওয়া কান্না যেনো বিতাড়িত করে নানা রকমের পরিস্থিতি ও অবস্থা- যেগুলো পৃথিবী ও আমাদের প্রতিবেশীকে শোষণ করছে। এ অন্যায্যতাগুলো সাধু দ্বিতীয় জন পৌলের ভাষায় দৃষ্টিভূত হতে পারে “পাপ কাঠামো” হিসেবে, যা জেগে উঠতে পারে কেবলমাত্র কয়েকজনের কারণে নয় কিন্তু সম্মিালিত, জটিল দলগত পরিচালনায়।

৪. আমাদের প্রত্যেককেই কোনো না কোনোভাবে দায়িত্বশীল হতে হবে- বিশ্বের বিপর্যয়, আমাদের যৌথ বসতবাটি, যেগুলো অধিভূক্ত হয়ে আছে এবং সেসব কর্মকান্ড পরোক্ষভাবে সাদাসিদে হলেও, সংঘর্ষের রসদ জোগায় যা আজকাল মানব পরিবারে মহামারিরূপ ধারণ করেছে- সে সম্পর্কে। সুনিয়ত চ্যালেঞ্জসমূহ, সুস্পষ্টভাবে আন্ত:সংযোগ- বিশ্বের ক্ষয়ক্ষতি একযোগে তৈরি করেছে। আমি মনে করি, বিশেষ করে ভিন্নতার সব আচরণ- অভিবাসীদের প্রতি অমানবিক আচরণ, পরিবেশ বিপর্যয়, অবৈধ তথ্য প্রবাহ, যে কোনো প্রকার সংলাপে অংগ্রহণে ব্যর্থতা এবং যুদ্ধখাতে অধিক পরিমানে সম্পদের বিনাশ- এগুলো সচেতনভাবেই সৃষ্টি করা হয়েছে। এ সবকিছুকে একসঙ্গে জড়ো করলে তা হবে বিশ্ব মানবতার জন্য বড় হুমকিসরূপ। বছরের শুরুতেই তাই ইচ্ছা প্রকাশ ও অনুনয় করি- যেনো নির্যাতিত মানবতার দৃষ্টি আকর্ষিত হয়- সেটা সম্মিলিতভাবে বা ব্যক্তিগতভাবে বা যেভাবেই হোক না কেনো, যেনো তা অন্যায্যতার বন্ধন ভাঙতে পারে এবং যেনো ঈশ্বরের ন্যায্যতা প্রচারিত হতে পারে। খন্ডকালীন মানবপ্রেম যথেষ্ট নয়। সংস্কারীয় ও কাঠামোগত পরিবর্তন প্রয়োজন যেনো চিরকালীন পরিবর্তন আসতে পারে।

খ। সাংস্কৃতিক পরিবর্তন: আমরা সবাই ঋণি

৫. জুবিলি  উদযাপন আমাদের বেশকিছু পরিবর্তন আনার খোড়াক জোগায় যেনো আমরা বর্তমান যে অন্যায্যতা, অসমতা রযেছে সেগুলোর মোকাবেলা করি- যেগুলো আমাদের স্মরণ করে দেয় যে, বিশ্বের সমস্ত বস্তু কিছু সুবিধাবাদির জন্য নয়, কিন্তু সবার জন্য। আমরা স্মরণ করতে পারি সিজেরিয়ার সাধু বাসিলের কথা। তিনি বলেছেন, “আমাকে বলুন কোন্ জিনিসটি আপনার অধিকারভূক্ত? ওগুলোর মধ্যে কী রয়েছে যে, সেগুলো আপনার জীবনের অংশ হবে? আপনি কী আপনার মায়ের গর্ভ থেকে উলংগ হয়ে আসেননি? আপনি কী আবার উলংগ হয়ে ভূমিতে ফিরে যাবেন না? আপনার বিষয় সম্পত্তি কোত্থেকে এসেছে? আপনি যদি বলে থাকেন স্বাভাবিকভাবে ভাগ্যের কারণে আমার জিম্মায় এসেছে, তাহলে আপনি ঈশ্বরকে সৃষ্টিকর্তা হিসেবে স্বীকৃতি না দিয়ে, তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ না হয়ে তাঁকে একজন অনুগ্রহ দানকারী হিসেবে অস্বীকার করলেন। কৃতজ্ঞ হওয়া ছাড়া আমরা ঈশ্বরের দান নিরূপণ করতে ব্যর্থ হবো। ঈশ্বরের অসীম অনুগ্রহের কারণে তিনি পাপে পতিত মানবতাকে পরিত্যগ করেন না। বরং জীবনের জন্য দান এবং মুক্তিলক্ষ্যে ক্ষমাদান নিশ্চিত করেন- খ্রিস্টের মধ্যদিয়ে যা দেওয়া হয়েছে। সে জন্য “আমাদের পিতা” শিক্ষা দেয়- যেমনটি খ্রিস্ট বলেছেন, “আমাদের পাপ ক্ষমা করো” (মথি ৬:১২)।

৬। যদি একবার আমরা ঈশ্বরের দৃষ্টি থেকে অদৃশ্য হয়ে যাই, তখন আমরা শুরু করি অন্যের সঙ্গে আমাদের মায়াবী সম্পর্ক- যা পরিচালিত হয় সত্যের ধারণায় স্বার্থ ও নিপীড়িতের যুক্তি দিয়ে। খ্রিস্টের সময়ে প্রতিপত্তিগণ, যারা গরিবদের নির্যাতন করে লাভবান হতেন- আজকে আমাদের আন্ত:সংযোগ বিশ্ব পল্লী, আন্তর্জাতিক প্রশাসন- যদি না অনুপ্রাণিত হয়, সহমর্মিতা ও আন্ত:নির্ভলশীলতার প্রেরণা দিয়ে- তাহলে উত্থান ঘটবে অন্যায্যতা, শোচণীয় দুর্ণীতি, যেগুলো গরিব দেশগুলোকে ফাঁদে ফেলে রাখবে। ঋণদাতাদের বিনাশী মানসিকতা হয়তো বর্তমানে ব্যাখ্যা প্রদান করে থাকে “ঋণ সংকট” যা দক্ষিণ গোলার্ধের কিছু দেশ ঋণের ওজন বহন করছে।

৭। আমি পুনরায় বলতে চাই যে, আজকে বিদেশী ঋণ হয়ে উঠেছে নিয়ন্ত্রণযোগ্য হাতিয়ার, যেখানে কিছু সরকার, ব্যক্তিকেন্দ্রিক অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান, বিবেকবর্জিত ধনী দেশ ভেদবুদ্ধিহীনভাবে মানবতাকে শোষণ করছে, শোষণ করছে গরিব দেশের সম্পদ- কেবলমাত্র তাদের বাজারের চাহিদা পূরণের জন্য। সে সঙ্গে অনেক মানুষ আন্তর্জাতিক ঋণের বোঝা বহন করছে এবং বাধ্য হচ্ছে ধনীদেশ কর্তৃক ডেকে আনা “পরিবেশদূষণগত ঋণ” বহন করতে। বিদেশী ঋণ এবং পরিবেশদূষণ একটি মুদ্রার উভয় দিক, উদাহরণসরূপ, শোষণ করার যে মানসিকতা তা ত্বড়ান্বিত করছে ঋণ সংকট। জুবিলি বছরের প্রেরণা নিয়ে আমি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে অনুনয় করছি- ঋণের বোঝা মওকুফ ক’রে দেওয়ার জন্য কাজ করতে- যা হবে উত্তর-দক্ষিণে বিদ্যমান পরিবেশদূষণ ঋণের স্বীকৃতিসরূপ। এটা সংহতির একটি আবেদন, কিন্তু সবকিছুর উর্ধ্বে হবে ন্যায্যতা।

৮। এ সংকট কাটিয়ে উফার জন্য সাংস্কৃতিক এবং কাঠামোগত সংস্কার প্রয়োজন- এবং সর্বশেষে যখন আমরা প্রত্যেকে একই পিতার পুত্র-কন্যা হিসেবে স্বীকার করবো এবং আমরা সবাই তাঁর কাছে ঋণি মনে করবো, তার পরেও আমাদের মধ্যে দায়িত্বের পার্থক্য থাকলেও- আমাদের একে অন্যকে প্রয়োজন পড়বে। তাহলেই আমরা সামর্থ হবো “পুন:আবিষ্কার করতে পারবো যে, আমাদের একে অপরের প্রয়োজন রয়েছে” এবং একে অপরের কাছে আমরা ঋণি।

গ। আশার যাত্রা: তিনটি প্রস্তাব 

৯। যদি আমরা হৃদয় দিয়ে ধারণ করি যে, আমূল পরিবর্তন দরকার- তাহলে এ জুবিলি বছরের অনুগ্রহ আমাদের প্রত্যেককে নবীকরণের জন্যে আশার যাত্রাপথে পরিচালিত করতে পারে- যা ঈশ্বরের অসীম অনুগ্রহ থেকে সৃষ্টি হয়েছে।

ঈশ্বর কারো কাছে কোনো কিছু ঋণি নয়- তার পরেও তিনি অনবরত তাঁর অনুগ্রহ এবং দয়া সবার উপর বর্ষিত করছেন। নিনেভে’র সপ্তম শতাব্দির প্রাচ্য মণ্ডলীর সাধু আইজেক তাঁর এক প্রার্থনায় বলেছেন, “তোমার ভালোবাসা, প্রভু, আমার পাপ থেকে অনেক বড়। আমার সর্বপ্রকার পাপের কাছে সমুদ্রের ঢেউ কিছুই নয়। কিন্তু পরিমাণ করলে- তোমার ভালোবাসার কাছে এসব তুচ্ছ ধুলিকণা। ঈশ্বর আমাদের মন্দতাকে পরিমাপ করতে চান না, বরং তিনি পূর্ণভাবে, “করুণানিধান পরমেশ্বর এমনই গভীর প্রেমে আমাদের ভালোবেসেছেন” (এফেসীয় ২:৪)। তার পরেও তিনি গরিবের অনুনয় এবং ধরিত্রীর কান্না শ্রবণ করেন। আমরা এ বছরের শুরতেই উত্তমরূপে কিছুক্ষণের জন্য থেমে  চিন্তা করতে পারি তিনি তাঁর অনুগ্রহ দিয়ে অনবরত আমাদের পাপ ক্ষমা করছেন, ক্ষমা করছেন আমাদের যতো ঋণ- যাতে করে আমাদের হৃদয় থেকে ছাপিয়ে প্রবাহিত হতে পারে আশা ও শান্তি।

১০। আমাদের “প্রভুর প্রার্থনা” শিক্ষার শুরুতেই খ্রিস্ট প্রভু পিতার কাছে আবেদন করে বলেছেন, আমাদের পাপ ক্ষমা করো, কিন্তু পরেই আসে দৃঢ়প্রত্যয়ের বাক্য “আমরা যেমন অপরধীকে ক্ষমা করি” (মথি ৬:১২)। অন্যের অপরাধ ক্ষমা করা এবং আশান্বিত করার পূর্বে আমাদের জীবনে একই আশায় পরিপূর্ণ হতে হবে- যা হলো ঈশ্বরের অনুগ্রহের সঙ্গে আমাদের অভিজ্ঞতা। আশা মহানুভবতায় প্রবাহিত, যার পরিমাপ সম্ভব নয় এবং যার কোনো গোপন চাহিদা নেই, লাভের সঙ্গে আপোষ নেই, কিন্তু একমাত্র উদ্দেশ্য হলো: পতিতজনকে উত্তলোন করা, ভেঙ্গে যাওয়া হৃদয় সুস্থ করে তোলা এবং সর্বপ্রকার দাসত্ব থেকে মুক্ত করে তোলা।

১১। ফলসরূপ, এ অনুগ্রহ বছরের শুরুতে- সব মানুষের মর্যাদা পুণ:স্থাপন এবং সামর্থ জোগানো, যেনো নতুন আশা নিয়ে সবাই যাত্রা করতে পারেন- সে জন্য তিনটি প্রস্তাব রাখতে চাই। এভাবে যেনো ঋণ সংকট মোচিত হয় এবং আমরা সবাই অনুধাবন করতে পারি যে, আমরা সবাই ঋণি ছিলাম এবং আমাদের ঋণ মোচন করা হয়েছে।

প্রথমতঃ  সাধু দ্বিতীয় জন পৌল ২০০০ খ্রিস্টাব্দে জুবিলি উপলক্ষে “আন্তর্জাতিক ঋণ যা মারাত্মক আকারে বহু দেশের জন্য হুমকি হয়ে আছে তা পুরোপুরিভাবে বাতিল না করলেও বাস্তব মাত্রায় কমিয়ে আনার আবেদন করেছিলেন- আমি তা পুর্ণব্যক্ত করতে চাই।” তাদের পরিবেশদূষণকৃত ঋণের স্বীকৃতিসরূপ সমৃদ্ধশালী দেশগুলো যেনো তাদের সর্ব সম্ভাবনা নিয়ে ঐসব দেশের ঋণ মওকুফ ক’রে দেয়- যাদের পক্ষে গ্রহণীয় আর্থিক ঋণ পরিশোধ করা সম্ভব নয়। স্বাভাবিকভাবে এটা দয়ার ন্যূনতম এবং বিচ্ছিন্ন গঠনা যা পুর্ণবার এবং অধিকন্তু লাভকে  আর্থিকভাবে কলুষিত ও ঋণগ্রস্ত করতে পারে। সুতরাং বিশ্বব্যাপী মানুষের মধ্যে সংহতি এবং সমতার মধ্যদিয়ে একটি নয়া আর্থিক কাঠামো অবশ্যই গড়ে তুলতে হবে।

আমি নিশ্চিতভাবেই মানুষের জীবন মর্যাদার স্বাভাবিক মৃত্যু ধারণা শ্রদ্ধা করতে চাই, কারণ প্রত্যেক ব্যক্তি তাদের জীবন সযত্নে লালন করতে চায় যেনো নিজেদের এবং সন্তানদের ভবিষ্যত স্বচ্ছলতা ও সুখী জীবন আশা করতে পারে। ভবিষ্যতের আশা ছাড়া, যুবসম্প্রদায়ের জন্য কঠিন হবে বিশ্বে নতুন প্রাণ আনতে এবং সামনে এগিয়ে যেতে । এখানে আমি আবারো প্রস্তাব করতে চাই একটি সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ যা জীবন সংস্কৃতি লালন করবে, যেমন- সকল জাতির মধ্যে মৃত্যুদন্ড বাতিল করবে। এ মৃত্যুদন্ড শুধু জীবনের পবিত্রতাই বিনাশ করে না- কিন্তু দূরে সরিয়ে দেয় প্রত্যেক মানুষের ক্ষমার আশা এবং পুর্নবাসন।

সাধু ৬ষ্ঠ পৌল এবং সাধু ষোড়ষ বেনেডিক্টের পদানুসরণ করে বলতে চাই- আমার মধ্যে কোনো দ্বিধা নেই ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য আর একটি আবেদন তুলে ধরতে। যুদ্ধের এই সময়কালে, আমরা কিছু অর্থ আলাদা করে রাখি- একটি স্থায়ী আন্তর্জাতিক তহবিল গঠনের জন্যে, যেনো দরিদ্র দেশগুলোর ক্ষুধা নির্মূল ক’রে শিক্ষার লক্ষ্য নিয়ে টেকসই উন্নয়ন ও পরিবেশদূষণ রক্ষা করতে পারি। যে সমস্ত পূর্ববিষয় যুব সম্প্রদায়কে ভবিষ্যত আশাহীন করে তোলে এবং রক্ত ঝরাতে প্রতিশোধের স্পৃহা জাগিয়ে তোলে- আমাদের কাজ করতে হবে সেসব বিষয় নিয়ে। ভবিষ্যত হলো একটি উপহার- যা আমাদের সামর্থ জোগাতে পারে অতীতের ব্যর্থতা পাড়ি দিয়ে একটি নতুন শান্তির পথ তৈরি করতে।

ঘ। শান্তির লক্ষ্য

১২। যারা এ সমস্ত প্রস্তাবনা সঙ্গে নিয়ে আশার যাত্রা শুরু করে তারা অবশ্যই এক নজর দেখতে পারবে প্রত্যাশিত শান্তি। সামসংগীতে লেখা আছে, “করুণা ও বিশ্বস্ততার হবে সম্মিলন, ধর্মময়তা ও শান্তি বাঁধা পড়বে ওষ্ঠবন্ধনে” (সাম ৮৫:১০)। আমি যখন উদ্যোগ নেই এবং আস্থার ঢাল হয়ে আমার একজন ভাই বোনের আশার পথ পুন:স্থাপন করি, আমি বিশ্বে ঈশ্বরের ন্যায্যতা স্থাপনে সহায়তা করি এবং সে ব্যক্তির সঙ্গে আমি শান্তির যাত্রায় অগ্রসর হই। সাধু ২৩শ জন বলেছেন, “সত্যিকার শান্তি হৃদয় থেকে জন্মলাভ করে এবং বিতাড়িত করে মনোকষ্ট এবং যুদ্ধের ভয়।

১৩। ২০২৫ খ্রিস্টবর্ষ হোক একটি শান্তি বিকশিত হওয়ার বছর, একটি সত্যিকার ও স্থায়ী শান্তি যা কথার যুক্তি না দেখিয়ে মানুষে মধ্যে তৈরি করবে বিস্তারিত শান্তি চুক্তি এবং মানবিক আপোষ। আসুন আমরা সত্যিকার শান্তি খুঁজি- যা ঈশ্বর আমাদের দিয়েছেন হৃদয়কে অস্ত্রমুক্ত করতে: সে হৃদয় নয়, যে হৃদয় পরিমাপ করে এটা আমার এবং ওটা তোমার, হৃদয় যা স্বার্থত্যাগ ক’রে প্রস্তুত থাকে অন্যের সংস্পর্শে আসতে, হৃদয় যেনো দেখতে পায় ঈশ্বরের কাছে ঋণি। তাই প্রস্তুত থাকে অন্যের ঋণ মুওকুফ করতে, হৃদয় যা ভবিষ্যতের আশা জাগিয়ে মনোকষ্ট দূর করে- যেনো প্রত্যেক ব্যক্তি হয়ে ওঠে নতুন বিশ্ব গড়ে তোলার লক্ষ্যে এক একটি সম্পদ।

১৪। হৃদয় নিরস্ত্র করা প্রত্যেকের দায়িত্ব, সে বড় হোক, ছোটো হোক, ধনী বা গরিব হোক। কোনো সময় ছোটো কিছু করে দেখানো যায়, যেমন- “একটি হাসি- বন্ধুত্বের ছোট্র একটি নিদর্শন, একটি দয়ার সাক্ষাত, ভালো কিছু শোনার জন্য প্রস্তুত থাকা।” এসব আনুষ্ঠানিকতার মধ্যদিয়ে আমরা শান্তির লক্ষ্যে অগ্রসর হই। আমরা তড়িত গতিতে পৌঁছাবো যদি আমাদের ভাই বোনদের সঙ্গে একত্রে যাত্রা করি- এবং তাহলে দেখবো যে আমাদের প্রথম অবস্থার যাত্রা থেকে এখন  অনেক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। শুধু যুদ্ধ থেমে গেলেই শান্তি ফিরে আসবে তা নয়- কিন্তু বিশ্বে নতুন ভোরের উদয় হবে- যখন আমরা বুঝতে পারবো আলাদা হলেও গভীরভাবে ভ্রাতৃত্ব বন্ধনে আবদ্ধ- যা আগে আমরা ভাবতে পারিনি।

১৫। প্রভু, আমাদের শান্তি দান করো- এটা ঈশ্বরের কাছে আমার প্রার্থনা- কারণ আমি এখন নববর্ষের শুভেচ্ছা বার্তা দিতে চাই, রাষ্ট্র প্রধান এবং সরকারকে, আন্তর্জাতিক সংগঠনের প্রধানদের, সকল ধর্মীয় নেতাদের এবং প্রত্যেক শুভ ইচ্ছার ব্যক্তিকে।

প্রভু, আমাদের পাপ ক্ষমা করো,

যারা আমাদের বিরুদ্ধে পাপ করেছে- তাদের ক্ষমা করি।

এ ক্ষমাদানের চক্রে, তোমার শান্তি প্রদান করো।

যে শান্তি কেবলমাত্র তুমিই দিতে পারো-

শুধু তাদের- যাদের হৃদয় নিরস্ত্র করেছে,

যারা আশায় বেছে নিয়েছে ভাই-বোনদের ঋণ মওকুফ করতে,

যারা তোমার কাছে ঋণি স্বীকার করতে ভয় করে না,

এবং হৃদয়-কর্ণ বন্ধ রাখে না- গরিবের ক্রন্দন শুনতে।

পোপ ফ্রান্সিস, ভাটিকান সিটি, ৮ ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টবর্ষ। (অনুবাদক : ফাদার সুনীল ডানিয়েল রোজারিও)