ঢাকার লক্ষ্মীবাজার চার্চে অনুষ্ঠিত হল আন্তঃধর্মীয় সংলাপ ও সম্প্রীতি সভা
গত ৮ জুন ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, আন্তঃধর্মীয় সংলাপ কমিশন ঢাকা মহাধর্মপ্রদেশের আয়োজনে লক্ষ্মীবাজার চার্চে অনুষ্ঠিত হল আন্তঃধর্মীয় সংলাপ ও সম্প্রীতি সভা।
এই আন্তঃধর্মীয় সংলাপ সভার মূলসুর ছিল “শান্তি ও সম্প্রীতি স্থাপনে বিভিন্ন ধর্মের ভূমিকা”। এতে চার ধর্মের চারজন বিশিষ্ট ব্যক্তি এবং সমাজের বিভিন্ন স্তরের পেশাদার ব্যক্তি যেমন শিক্ষক, আইনজীবী, ব্যাংকার, ব্যবসায়ী, প্রকৌশলী, সরকারী পরিচালক জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয়, ও শিক্ষার্থীরা মিলে প্রায় ৬৫ জন অংশগ্রহন করেন।
এছাড়াও উক্ত সভায় আরও অংশগ্রহন করেন আন্তঃধর্মীয় সংলাপ কমিশন ঢাকা মহাধর্মপ্রদেশ এর কো-অর্ডিনেটর ফাদার লুক কাকন কোড়াইয়া এবং সিস্টার রেবা ভেরোনিকা ডি কস্তা, আর.এন.ডি.এম, কো-কোঅর্ডিনেটর আন্তঃধর্মীয় সংলাপ কমিশন ঢাকা মহাধর্মপ্রদেশ।
মূলসুরের উপর প্রথমেই বক্তব্য রাখেন মহামান্য আর্চবিশপ বিজয় এন. ডি’ ক্রুশ, ও.এম.আই, ঢাকা মহাধর্মপ্রদেশ। তিনি খ্রীষ্টধর্মের আলোকে শান্তি ও সম্প্রীতি স্থাপনে যিশু খ্রীষ্টের মহামূল্যবান বাণী এবং ইহুদীদের প্রতি যিশুর সহমর্মিতা ও বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণের উদাহরণ উপস্থাপন করেন। আধুনিক সমাজ ব্যবস্থায় সমাজের প্রতি তাঁদের দায়িত্ব ও কর্তব্য কী হবে তার দিকনির্দেশনা দেন।
লক্ষ্মীবাজার শাহী মসজিদের ইমাম ও খতিব, জনাব হাফেজ মুফতি মোঃ সিদ্দিক আহমেদ বলেন, “ইসলাম ধর্মের আলোকে শান্তি ও সম্প্রীতি রক্ষায় হযরত মুহম্মদ (সঃ) তাঁর ভক্তদের যেই নির্দেশনা দেন তা অত্যন্ত শ্রুতিমধুর কন্ঠে উপস্থাপন করেন। ইহুদী ধর্মের মানুষের মৃত্যুতেও মহানবী দাঁড়িয়ে সম্মান জানাতেন। সেই উদাহরণ তুলে ধরেন। আধুনিক সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠায় ইসলাম সর্বদাই আন্তরিক ভূমিকা পালন করে বলে তিনি জানান।”
সনাতন ধর্মের আলোকে বক্তব্য রাখেন রুপানগ গৌর দাস ব্রহ্মাচারী, সাধারণ সম্পাদক, ইসকন ফুড ফর লাইফ। তিনি সনাতন ধর্মের দর্শন ও বিশ্বাস সম্পর্কে তাঁর মূল্যবান বক্তব্য তুলে ধরেন। সমাজে শান্তি ও সম্প্রীতি স্থাপনে সনাতন ধর্মের উদারতার কথা ব্যক্ত করেন এবং এ ধরণের আলোচনা সভার বিশেষ প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেন। সকল ধর্মের মূল উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য যে এক, সেই উপলব্ধি তিনি তাঁর শান্ত ও সুন্দর বাচনভঙ্গিতে উপস্থাপন করেন।
বৌদ্ধ ধর্মের আলোকে বক্তব্য রাখেন অধ্যক্ষ সত্যপ্রিয় থের, বাংলাবাজার বৌদ্ধ মন্দির, ঢাকা। তিনি unity, peace and friendship এর উপর গুরুত্বের কথা আলোচনা করেন।
তিনি সমাজের সকল ধর্মের, বর্ণের মানুষের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের সাথে উন্নয়নের কথা ব্যক্ত করেন। তিনি আরো বলেছেন, প্রত্যেক মা যেমন তাঁর সন্তানকে সমানভাবে খাদ্য বিতরণ ও যত্ন নেন, তেমনি ঈশ্বরও তাঁর প্রত্যেক সন্তানকে বা ভক্তকে সমানভাবে ভালবাসেন। তিনি মহাঅবতার গৌতম বুদ্ধের বাণীর আলোকে ‘মানবধর্মের’ প্রতি গুরুত্বআরোপ করেন।
তিনি সমাজে শান্তি ও সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠায় মায়ের ভূমিকার কথা বলেছেন। কেননা একজন সুচিন্তিত মা-ই পারেন সমাজে সুসন্তান তৈরী করতে, যারা সমাজকে সুন্দর ও আলোকিত করবে এবং শান্তি প্রতিষ্ঠায় শ্রদ্ধাশীল হবে।
দিনব্যাপি এই আন্তঃধর্মীয় সংলাপ ও সম্প্রীতি সভার কর্মসূচির মধ্যে ছিল মুক্ত আলোচনা ও প্রশ্নোত্তর পর্ব সহভাগিতা এবং নিজেদের মধ্যে ভাব ও কুশলাদি বিনিময়।
প্রত্যেক পেশাজীবীর মানুষ সমাজে শান্তি ও ঐক্য সৃষ্টির লক্ষ্যে করণীয় বিষয়গুলো নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন উত্থাপন করেন এবং আমন্ত্রিত বক্তাগন যথাযথ উত্তর দিয়ে আলোচনা সভা কক্ষে প্রাণবন্ত পরিবেশ সৃষ্টি করেন।
পরিশেষে আর্চবিশপ বিজয় এন. ডি’ ক্রুশ এর সমাপনী বক্তব্য ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন এর মাধ্যমে সভার সমাপ্তি ঘোষনা করা হয়। - প্রভাষক শিল্পী রায়, ঢাকা মহানগর মহিলা কলেজ