সিলেট প্রতাপপুর খাসিয়া পুঞ্জিতে প্রায় ৩০০০ পান গাছ কেটে ফেলেছে দৃর্বৃত্তরা, আতঙ্কে খাসিয়া আদিবাসীরা

গত ২৮ জুলাই ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, সিলেট জেলার প্রতাপপুর পুঞ্জিতে দুর্বৃত্তরা খাসিয়া আদিবাসীদের প্রায় ৩০০০ পান গাছ কেটে ফেলেছে, এতে পুঞ্জির বসবাসরত প্রায় ৭০ টি আদিবাসী পরিবার উচ্ছেদ আতঙ্কে রয়েছে।
সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলার পশ্চিম জাফলং ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের প্রতাপপুর পুঞ্জিতে (প্রতাপপুর সীমান্ত বিজিবি ক্যাম্প সংলগ্ন) লামা পুন্জির হেডম্যান রিসন কংওয়ান ও প্রতাপপুর পুঞ্জির অধিবাসী পরমা দিখারের পান জুমে হামলার ঘটনা ঘটে।
এই ঘটনাটি এমন এক সময়ে ঘটেছে যার প্রায় সপ্তাহ দুয়েক পরেই আদিবাসী দিবস। আদিবাসীরা যখন তাদের দাবি দাওয়ার জন্য আন্দোলন করবে ঠিক তার আগেই এই হামলার ঘটনা ঘটেছে। পুঞ্জিতে বসবাসরত খাসিয়া আদিবাসীদের মধ্যে ৭০ শতাংশ খ্রীষ্টান এবং ৩০ শতাংশ সনাতন ধর্মাবলম্বী।
পুঞ্জিবাসী বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত পানের গাছগুলো এই মাসেই উত্তোলনের উপযোগী ছিল এবং প্রতিটি গাছে গড়ে ৫৫০ টাকার পান ছিল, যার মোট বাজারমূল্য প্রায় ১৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা।
জানা যায়, বছরে পাঁচ থেকে ছয়বার পান সংগ্রহ করা গেলেও একটি জুম উৎপাদনে উপযোগী হতে প্রায় দুই বছর সময় লাগে। প্রতিটি জুমে ১৫-২০ জন কর্মী নিয়মিতভাবে কাজ করে এবং উৎপাদিত পানের আয় থেকে প্রায় ৭৫% অর্থ ব্যয় হয় এই শ্রমিক ও চাষ ব্যবস্থাপনার পেছনে।
প্রতাপপুর পুঞ্জিতে প্রায় ২৫টি পরিবার এবং লামা পুঞ্জিতে ৪৭টি পরিবার বসবাস করে। দুই পুঞ্জিতে মোট জনসংখ্যা প্রায় ৪১০ জন, যাদের প্রধান জীবিকা পান ও সুপারি চাষ। এই আঘাত কেবল আর্থিক ক্ষতিই নয়, বরং একটি জাতিগত সম্প্রদায়ের জীবিকা, সংস্কৃতি এবং নিরাপত্তার উপর সরাসরি আঘাত।
এলাকার হেডম্যানদের ভাষ্যমতে, “আগেও বিচ্ছিন্নভাবে কেউ কেউ ১-২টি গাছ কেটে ফেলেছে, কিন্তু এ ধরনের পরিকল্পিত ও বৃহৎ আকারের হামলা এবারই প্রথম। এতে বোঝা যায়, এটা নিছক সন্ত্রাস নয় বরং উদ্দেশ্যমূলক একটি ষড়যন্ত্র।”
তারা আরও জানান, সাম্প্রতিক সময়ে দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং প্রশাসনিক নজরদারির শিথিলতাকে কাজে লাগিয়ে বহিরাগত কিছু চক্র পুঞ্জি এলাকায় প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছে।
খাসিয়া সমাজের ঐক্য, সম্প্রীতি এবং সাংগঠনিক শক্তির কারণে এসব চক্র কোনোভাবেই আধিপত্য বিস্তার করতে পারছিল না, যার ফলে ক্ষোভ ও প্রতিহিংসা থেকেই এ ধরনের সহিংসতা ঘটানো হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
স্থানীয়দের আশঙ্কা, দুবৃত্তদের উদ্দেশ্য হলো খাসিয়া জনগোষ্ঠীর মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে তাদের আর্থিকভাবে দুর্বল করে এলাকা ছেড়ে দিতে বাধ্য করা। এতে তারা সহজেই প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ এই এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিতে পারবে।
খাসিয়া পুঞ্জির মানুষজন ইতোমধ্যে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছেন। তারা দ্রুত তদন্ত করে দোষীদের চিহ্নিত ও শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন।
এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার না হলে খাসিয়া জনগোষ্ঠীর অস্তিত্ব এবং তাদের ঐতিহ্যবাহী পান চাষের ভবিষ্যৎ মারাত্মক হুমকির মুখে পড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন পুঞ্জির প্রবীণরা। - চন্দন রোজারিও (ডিসিনিউজ)