মালয়েশিয়ার কার্ডিনাল ও অস্ট্রেলিয়ান আর্চবিশপের আহ্বান: আমাদের পরিবার প্রয়োজন, আমাদের সন্তান প্রয়োজন
পেনাং-এ অনুষ্ঠিত ‘গ্রেট পিলগ্রিমেজ অফ হোপ’-এর সময় এক সংবাদ সম্মেলনে পেনাংয়ের বিশপ ও অনুষ্ঠানের আয়োজক কার্ডিনাল সেবাস্তিয়ান ফ্রান্সিসকে ২০২৭ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার সিউলে অনুষ্ঠিত বিশ্ব যুব দিবস নিয়ে তাঁর প্রত্যাশা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন যে এই সমাবেশ হবে এশিয়ার মন্ডলী গুলিতে শিশুদের স্বাগত জানানোর মূল্য ও গুরুত্বকে নতুন করে আবিষ্কারের একটি বিশেষ মুহূর্ত।
কার্ডিনাল সেবাস্তিয়ান ফ্রান্সিস যখন কথা বলেন, তাঁর কথায় সতর্কবার্তাও ছিল, আবার আশীর্বাদও ছিল। তিনি বলেন, “আমাদের শিশুদের প্রয়োজন, কারণ তারাই হলো আমাদের আগামী।”
তিনি বলেন, শিশুরা কখনোই শুধুমাত্র পরিসংখ্যান নয়; তারা উপস্থিতির পবিত্র চিহ্ন। প্রতিটি জন্ম যেন নীরব সুসমাচার—ঈশ্বর ছোট্ট, কোমল প্রাণ হয়ে মানুষের কোলে আগমন করেন। তারা জীবন্ত চিহ্ন যে মন্ডলী এখনো তরুণ, শক্তিশালী এবং নিজেকে নতুন করে গড়ে তোলার ক্ষমতাসম্পন্ন—যদিও এই পৃথিবীতে সব কিছুই নশ্বর।
কার্ডিনাল এমন এক জনসংখ্যাগত বাস্তবতার দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন যা প্রায়ই উপেক্ষিত থাকে: পূর্ব এশিয়ার অনেক দেশ—দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, সিঙ্গাপুর, হংকং এবং চীন প্রমুখ দেশগুলিতে জন্মহার কমে যাওয়ার কঠিন সংকটে ভুগছে।
তিনি বলেন, “কোরিয়া ও জাপানের জন্মহার ক্রমাগত কমছে। তবুও বৈপরীত্য হলো, এই দেশগুলোই আবার হাজার হাজার তরুণ তীর্থযাত্রীদের বিশ্ব যুব দিবসের মতো আন্তর্জাতিক সমাবেশে পাঠায় বা আয়োজন করে।“
তিনি আরও বলেন, “কোরিয়ায় লক্ষ লক্ষ তরুণের উপস্থিতি হবে শক্তিশালী সাক্ষ্য, তরুণদের উপস্থিতি জীবন, শক্তি ও আশার প্রতীক।“
যখন কোনো জাতির বার্ধক্য এবং জন্মহার হলো ঝরাপাতার মতন—তখন কার্ডিনাল যেন শীতের শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে বসন্তের ডাক দেন। তাঁর বার্তা ছিল আধ্যাত্মিক ও নৈতিক উভয়ই: শিশুহীন মন্ডলী মানে ভবিষ্যতহীন এক মন্ডলী; যে সমাজ নতুন জীবনকে স্বাগত জানাতে ভুলে যায়, সেই সমাজ ঈশ্বরকেও ভুলে যায়।
প্রতিটি শিশু ধারাবাহিকতা, সাহস ও আশার প্রতিরূপ। যে পরিবার প্রার্থনা করে, শিশুদের লালন-পালন করে এবং ঈশ্বরের গল্প পরবর্তী প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেয়—তারা ভবিষ্যৎ মন্ডলী গঠনের বাহক। এশিয়াজুড়ে জনসংখ্যা কমলেও পরিবার ও যুবকদের সাক্ষ্য বিশ্বকে বলে—জীবন, বিশ্বাস এবং ঈশ্বরের রাজ্যের প্রতিশ্রুতি এখনো টিকে আছে।
আর্চবিশপ প্রাউজ: এশিয়ার পরিবারগুলি এবং শিশুদের প্রতি ভালোবাসাই হলো প্রকৃত শক্তি
৩০ নভেম্বর, পেনাং-এ অনুষ্ঠিত ‘আশার তীর্থযাত্রা (গ্রেট পিলগ্রিমেজ অফ হোপ)’-এর সমাপনী দিনে অস্ট্রেলিয়ার ক্যানবেরা-গুলবার্নের আর্চবিশপ ক্রিস্টোফার প্রাউজ “/ এগিয়ে চলো” বিষয় নিয়ে হৃদয়স্পর্শী বার্তা দেন।
তিনি বলেন, “আমরা যখন এশিয়া নিয়ে কথা বলি, তখন আমি আপনাদের ধন্যবাদ জানাতে চাই। আমি এশিয়ার বাইরে থেকে এসেছি, কিন্তু গত কয়েক দিনে দেখেছি—আপনারা খ্রিষ্টের মধ্যে সত্যিকার অর্থেই ‘এগিয়ে চলো’ মনোভাবকে গ্রহণ করেছেন।”
তিনি জানান, এশিয়ার মন্ডলীগুলির গভীর বিশ্বাস, প্রার্থনাময় জীবন ও উদারতা তাকে গভীরভাবে স্পর্শ করেছে।
এরপর তিনি তিনটি বিষয়ে তাঁর আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানান—যা কার্ডিনাল সেবাস্তিয়ানের পরিবার ও শিশুদের মূল্যায়নের আহ্বানকে আরও শক্তিশালী করে।
প্রথমত, তিনি এশিয়ার বিবাহ, পরিবার ও শিশু-আশীর্বাদে গভীর বিশ্বাসের প্রশংসা করেন।
তিনি বলেন, “ধন্যবাদ, এশিয়ান—পরিবারগুলিকে মূল্য দেওয়ার জন্য, বিবাহে বিশ্বাস রাখার জন্য, এবং শিশুদের আশীর্বাদ হিসেবে দেখার জন্য। এই বিশ্বাস আপনারা কখনো হারাবেন না।”
বিশ্বের অনেক দেশে জন্মহার কমে যাচ্ছে, পরিবার ভেঙে যাচ্ছে—সেখানে এশিয়ার এই সাক্ষ্য শুধু সাংস্কৃতিক নয়, গভীরভাবে সুসমাচারের সাক্ষ্য বহন করে।
দ্বিতীয়ত, তিনি এশিয়ার পারিবারিক বিশ্বাস—যা বাবা-মা থেকে সন্তানদের মধ্যে প্রবাহিত —তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, “আপনাদের গল্প ও সাক্ষ্য আমার নিজের বিশ্বাসকে শক্তিশালী করে, এবং উল্লেখ করেন, পশ্চিমা বিশ্বের অনেক অংশে এমন ধারাবাহিক বিশ্বাস এখন প্রায় বিরল।“
তৃতীয়ত, তিনি এশিয়ার প্রাণবন্ত ধর্মপল্লীগুলি ও নতুন ধর্মীয় আন্দোলনগুলোর প্রশংসা করেন—যেখানে পরিবার বেড়ে ওঠে, শিশুরা বড় হয়, এবং সুসমাচার নতুন জীবন খুঁজে পায়।
এরপর তিনি ক্যানবেরার একটি মজার ঘটনা সকলের সাথে সহভাগিতা করে বলেন: এক দম্পতিকে দেখে তিনি ভাবলেন যে মহিলাটি হয়তো সন্তানসম্ভবা কিন্তু পরে তিনি বুঝতে পারলেন যে, ভিতরে একটি কুকুর রয়েছে!
এই মজার ঘটনাটি তিনি ব্যবহার করেন একটি গভীর উদ্বেগের কথা বোঝাতে—যেখানে সমাজে শিশু হার কমছে, পরিবার ছোট হচ্ছে, আর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে উঠছে।
এই প্রেক্ষাপটে তিনি বলেন, এশিয়ার পরিবারগুলি—নতুন দেশে গিয়ে জীবন গড়ে তোলা, সন্তান লালন-পালন, কমিউনিটি তৈরি ও বিশ্বাস বহন করে নিয়ে যাওয়া—একটি শক্তিশালী আশার আলো।
শেষে আর্চবিশপ প্রাউজ বলেন—তাদের উপস্থিতি বিশ্বকে দেখায় যে জীবন প্রতিমুহূর্তে গ্রহণীয়, বিশ্বাস সব সময় প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে হস্তান্তরিত হতে পারে, আর মন্ডলীর ভবিষ্যৎ এখনো পরিবারগুলোর স্নেহে লালন করা যায়।
প্রতিবেদন – রেডিও ভেরিতাস এশিয়া
অনুলিখন – তেরেসা রোজারিও