রাঘবপুর সাধু যোসেফ ক্যাথলিক গীর্জায় পালন করা হল ভেলেঙ্কানি-রাণী আরোগ্যদায়িনী ধন্যা কুমারী মারীয়ার জন্ম পর্ব

বিগত ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, রাঘবপুর সাধু যোসেফ ক্যাথলিক গীর্জায় মহাসমারহে পালন করা হল ভেলেঙ্কানি মা মারীয়ার জন্ম পর্ব। খ্রিস্টীয় ক্যাথলিক মন্ডলীতে প্রতিবছর এই পর্ব পালন করা হয় ৮ ই সেপ্টেম্বর। এই পর্ব দিন উপলক্ষে রাঘবপুর ধর্মপল্লীতে নবাহ প্রার্থনার আয়োজন করা হয়। ৩০ আগস্ট থেকে ৭ ই সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রথমে জপমালা রোজারি প্রার্থনা ও পবিত্র খ্রীষ্টযাগের আয়োজন করা হয় । নয় দিনব্যাপী প্রার্থনার পর ৮ই সেপ্টেম্বর আরোগ্যদায়িনী মা মারীয়ার জন্ম পর্ব পালন করা হয় ।

নবাহ প্রার্থনার প্রথম দিনে ৩০শে আগস্ট বৈকাল ৪.৩০ মিনিটে ভেলেঙ্কানি মা মারীয়ার পতাকা উত্তোলন করা হয়। মায়ের প্রতিকৃতিতে মাল্যদান, আরতি করে নবাহ প্রার্থনার শুভ সূচনা করা হয় । পাল পুরোহিত ফাদার যোসেফ টোপ্প এস.জে মহাশয় পতাকা উত্তোলন করেন তারপর বাইবেল থেকে মঙ্গল সমাচার পাঠ করেন।

শোভাযাত্রার মাধ্যমে কীর্তন গান সহযোগে গির্জা প্রাঙ্গনে প্রবেশ করা হয়। প্রথমে জপমালা প্রার্থনা পরে পবিত্র খ্রীষ্টযাগ উৎসর্গ করা হয়। প্রথম দিন খ্রীষ্টযাগ উৎসর্গ করেন রাঘবপুরের মিশন সুপিরিয়র ফাদার জনসন পাদিয়ারা এস.জে এবং পাল পুরোহিত ফাদার যোসেফ টোপ্প এস.জে মহাশয়। এই ভাবে নয় দিন প্রার্থনা ও পবিত্র খ্রীষ্টযাগ উৎসর্গ করা হয় বিভিন্ন উদ্দেশ্য নিয়ে।

নয় দিনের রোজারি জপমালা প্রার্থনা পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয় মাগুরখালী ও গোবরাচক কনভেন্টের ডি.এস.এ সিস্টারগণ, সি.এল.সি, এস.ভি.পি, যুবদল, মহিলা কমিশন, সেবক দল, পালকীয় পরিষদের সদস্যদের

নয় দিনে আনন্দদায়িনী মারীয়ার নিকট নয়টি উদ্দেশ্যে রাখা হয়।

১.আনন্দদায়িনী মা মারীয়া,

২.ক্রুশের তলায় মা মারীয়া

৩.বিশ্ব রাণী মা মারীয়া

৪.স্বর্গের রাণী মা মারীয়া

৫.আরোগ্যদায়িনী মা মারীয়া

৬.শান্তিদায়িনী মা মারীয়া

৭.মানব পরিত্রাতা মা মারীয়া

৮.কৃতজ্ঞচিত্ত মা মারীয়া

৯.দর্শনদায়িনী মা মারীয়া

নয় দিন নবাহ প্রার্থনার পর দশম দিন ৮ সেপ্টেম্বর রবিবার আরোগ্য দায়িনী মা মারীয়ার জন্মদিন পালন করা হয়। বৈকাল ৪ ঘটিকায় রাঘবপুর সাধু যোসেফ ক্যাথলিক গীর্জার পাল পুরোহিত ফাদার যোসেফ টোপ্প এস.জে এবং ফাদার মাসলামণি এস.জে মহাশয়ের উপস্থিতিতে মা মারীয়ার পতাকা অবনমন করা হয়। তারপর পতাকায় মাল্যদান ও আরতি করা হয়।

রাঘবপুর গীর্জা থেকে শোভাযাত্রা কীর্তন সহযোগে সেন্ট পলস বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে পবিত্র খ্রিষ্টযাগের জন্য এগিয়ে যাওয়া হয়। খ্রীস্টযাগ আরম্ভের পূর্বে চারজন যুবতী নারীকে  খ্রীস্টভক্তদের সামনে মা মারীয়ার বিভিন্ন রূপে প্রদর্শিত করা হয়

১.লুর্দের রানী মা মারীয়া

২.আরোগ্য দায়িনী মা মারীয়া

৩.ব্যান্ডেল রানী মা মারীয়া

৪.সাহায্যকারীণী মা মারীয়া

পরবর্তীতে প্রবেশিকা নৃত্যের মধ্যে দিয়ে বারুইপুর ধর্মপ্রদেশের প্রাক্তন ধর্মপাল শ্রদ্ধেয় বিশপ সালভাতোর লোবো মহাশয় ও পুরোহিত বর্গকে স্বাগত জানানো হয়। উপাসনা বেদীর সামনে বিশপ ও পুরোহিত বর্গকে বরণ ও চন্দনের ফোঁটা দেওয়া হয়। তারপর মূল উপাসনার আরম্ভ হয়।

বিশপ মহাশয় তাঁর মূল্যবান উপদেশে তামিলনাড়ুর নাগাপাটটানাম গ্রামের ভেলেঙ্কানি মা মারীয়ার অপার করুণা ও অলৌকিক কাজের কথা উল্লেখ করেন। এই মায়ের কাছে প্রার্থনা করে কেউ কোনদিন নিরাশ হয়নি। তাই, আমাদের বিশ্বাস মায়ের প্রতি রাখা উচিত। এই বিশ্বাস আমাদের আছে বলেই আজ এই পবিত্র খ্রীষ্টযাগে আমরা সবাই উপস্থিত হয়েছি।

মা মারীয়া জন্ম দিন উপলক্ষে উপস্থিত প্রত্যেক পরিবার তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী কিছু খাবার দান করেন বেদের সামনে। খ্রীষ্টযাগ আরম্ভের মুহূর্তে সেই খাবার পুরোহিত আশীর্বাদ প্রদান করেন এবং খ্রীস্টযাগ শেষে সকলের মধ্যে তা বিতরণ করা হয়।

মা মারীয়ার পর্ব দিন উপলক্ষে বিশপ ও পুরোহিতবর্গ কেক কেটে পর্ব দিনের বিশেষ মুহূর্তটি আরসুন্দর ও মাধুর্যপূর্ণ করে তোলেন। পর্ব দিন উপলক্ষে সকল খ্রীস্টভক্তের জন্য মিষ্টিমুের আয়োজন করা হয়।- তন্ময় মন্ডল