“প্রভুর আলোয় চলা” র আহ্বান জানিয়ে আশার তীর্থযাত্রার সমাপ্তি

বিগত ৩০ নভেম্বর পেনাংয়ের দ্য লাইট হোটেলের বলরুমে অনুষ্ঠিত আশার মহাযাত্রার সমাপনী প্রার্থনা সভায় আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও নবউদ্দীপনার সাথে ৩২টি দেশের ৯০০–এরও বেশি প্রতিনিধি একত্রিত হন। এই উদযাপনটি ছিল এশিয়ার খ্রীষ্টমন্ডলীর কাছে প্রার্থনা, মনন, ও মহাদেশীয় সংলাপের জন্য পাঁচ দিনের এক অভিজ্ঞতা

পবিত্র খ্রীষ্টযাগ উৎসর্গ করেন গোয়া ও দমনের মহাধর্মপাল এবং এফএবিসি–র সভাপতি কার্ডিনাল ফিলিপ নেরি ফেরাও। তিনি তাঁর হৃদয়স্পর্শী ধর্মোপদেশে এশিয়ার মন্ডলীগুলিকে প্রভুর আলোর পথে চলা, বিশ্বাস রাখার প্রতিশ্রুতি গভীর করার এবং একাত্মতার অভিজ্ঞতা নিয়ে ঘরে ফেরার আহ্বান জানান।

“এসো, আমরা প্রভুর আলোয় চলি”

ইশাইয়া গ্রন্থ ২:১–৫ থেকে পাঠ করার সময়  কার্ডিনাল ফেরাও ভাববাদীদের সেই দর্শন তুলে ধরে বলেন—এক সুউচ্চ পর্বত, যা জাতিগুলোকে জয় করার জন্য নয়, বরং শিক্ষা ও আরোগ্যের জন্য আহ্বান জানায়।

তিনি বলেন “ইশাইয়া এমন এক জনগোষ্ঠীকে দেখেন যারা আর অস্ত্র ধার দেয় না বরং তা পরিত্যাগ করে- এটাই সুস্থ এশিয়ার স্বপ্ন।”

তিনি আরও বলেন, এই মহাযাত্রা নিজেই সেই আশাকে বাস্তবায়িত করেছে: “কার্ডিনাল, বিশপ, পুরোহিত, ধর্মব্রতী, সাধারণ মানুষ, যুবক–যুবতী, পরিবার, সংস্কৃতি, ভাষা ও ইতিহাস—সবকিছুই পাশাপাশি রয়েছে। আমরা একে অপরের ক্ষত দেখেছি ও আশার গল্প শুনেছি। শান্তি দূরে সরিয়ে রাখা কোনো আদর্শ নয় বরং; এটি একসাথে চলার ফল।”

কার্ডিনাল জোর দিয়ে বলেন, ইশাইয়ার আহ্বান—“এসো, আমরা প্রভুর আলোয় চলি”—এটি কোনো প্রস্তাব নয়, বরং সম্পৃক্ততার ডাক: সুবিধার বদলে সত্য, সন্দেহের বদলে সংলাপ, বিচ্ছিন্নতার বদলে একাত্মতা বেছে নেওয়া। তিনি সতর্ক করেন যাতে তীর্থযাত্রার পর কেউ উদাসীনতা বা বিভেদের পুরনো পথে ফিরে না যায়।

কৃতজ্ঞতার তীর্থযাত্রী, ঐক্যের রক্ষক

গীতসংহিতা ১২২ নিয়ে চিন্তা করতে গিয়ে কার্ডিনাল বলেন, তীর্থযাত্রার আধ্যাত্মিকতায় প্রবেশ করা যেমন  আনন্দের, তেমনি এতে দায়িত্বও আছে।

তিনি বলেন “গীতসংহিতা ১২২ আমাদের মনে করিয়ে দেয়, তীর্থযাত্রার ফল শুধুমাত্র স্মৃতিকে আঁকড়ে ধরে রাখা নয় বরং একে অপরের সেবা করা” ।

“ধর্মীয় উত্তেজনা, দারিদ্র্য, অভিবাসন, পরিবেশগত ঝুঁকি—এই প্রত্যেকটি হল আমাদের জীবনের কঠিন বাস্তবতা। তাই, আমাদের পরিবার, ধর্মপল্লী, ধর্মপ্রদেশ ও সমাজে আমাদের শান্তির কারিগর হতে হবে।”

তিনি বলেন, এক এশীয় পরিবার হিসেবে একত্রিত হওয়ার অভিজ্ঞতা অবশ্যই বিশ্বাসকে সহভাগীতা করা ও সহানুভূতিশীল হওয়ার নতুন অঙ্গীকার গ্রহণ করা

“সময় এসে গেছে… প্রভু যীশুতে বিলীন হওয়ার”

রোমীয় ১৩:১১–১৪ থেকে উদ্ধৃত করে কার্ডিনাল ফেরাও স্মরণ করিয়ে দেন যে আধ্যাত্মিক নবীকরণ যথেষ্ট নয়, যদি তা বাস্তব পরিবর্তনে না পৌঁছে।তিনি বলেন “সাধু পিতর আমাদের ঘুম থেকে জেগে ওঠার জন্য ডাকছেন” । “খ্রিস্টকে ধারণ করা মানে তাঁর করুণা, সরলতা, সাহস ও শোনার মন ধারণ করা।”

তিনি জোর দিয়ে বলেন, এশিয়ার মন্ডলীগুলির ভবিষ্যৎ কেবল পরিকল্পনা বা গঠনের উপর নির্ভর করতে পারে না—এটি শুরু হবে পরিবর্তিত হৃদয়ের মানুষগুলিকে নিয়ে।

“এশিয়াতে ঈশ্বরকে লাভ করার ইচ্ছা প্রবল, ন্যায় বিচারের আশা যথাযথ এবং তরুণদের মধ্যে অর্থ লাভের আশা অত্যন্ত তীব্র।”

“জাগ্রত থাকো… প্রস্তুত হও”

আগমন কালের প্রথম রবিবারের সুসমাচার (মথি ২৪:৩৭–৪৪) প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “যথার্থ শিষ্য হতে গেলে আমাদের সজাগ থাকতে হবে কারণ ঈশ্বর প্রায়ই অপ্রত্যাশিত স্থানে তাঁর কাজ করে চলেন।“

 

“আশার তীর্থযাত্রা আমাদের শিখিয়েছে অভিবাসী, শরণার্থী, আন্তঃধর্মীয় বন্ধুত্ব, যুবদের স্বপ্ন, দরিদ্রদের অধ্যবসায়, বিভক্ত পৃথিবীর ক্ষত এবং আমাদের দৈনন্দিন দায়িত্বের মধ্যেও ঈশ্বরকে খুঁজে পেতে।”

তিন পণ্ডিতদের মতো—যারা “অন্য পথে” বাড়ি ফিরে গিয়েছিল—এশিয়ার খ্রিষ্টানদেরও নতুন দৃষ্টিভঙ্গি, নতুন উদ্দীপনা ও কাজের গুরুত্বকে বোঝার দক্ষতাগুলি  নিয়ে ফিরতে হবে।

এক তীর্থযাত্রা যা এশিয়াকে এগিয়ে নিয়ে যায়

সমগ্র সমাবেশজুড়ে অংশগ্রহণকারীরা যুদ্ধাহত জাতিগুলোর জন্য প্রার্থনা করেন, পালকীয় প্রতিবন্ধকতাগুলি সহভাগীতা  করেন এবং এশিয়ার সাংস্কৃতিক ও আধ্যাত্মিক বৈচিত্র্যগুলিকে উদযাপন করেন।

কার্ডিনাল ফেরাও বলেন “যদি এই দিনগুলো শুধুই স্মৃতি হয়ে থাকে, তবে আমরা ব্যর্থ” ।

“কিন্তু যদি এগুলো হৃদয় পরিবর্তন, কর্ম সম্পাদন ও একাত্মতার দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়—তবে এই তীর্থযাত্রা এশিয়ার সুন্দর ভবিষ্যৎ তৈরীর জন্য উপযুক্ত বীজ হয়ে উঠবে।”

তিনি প্রতিনিধিদের আহ্বান জানান—

* নতুন বিনয়ের সাথে, মানুষ ও পরস্পরের কাছ থেকে শেখার প্রস্তুতি নিতে

* নতুন উদ্দীপনা, কোমলতা ও আনন্দের সঙ্গে খ্রীষ্টকে সকলের কাছে পৌঁছে দিতে

* নতুনভাবে দরিদ্র, অভিবাসী, নারী, যুবক–যুবতী সকলকে ঈশ্বরের কাছে নিয়ে আসতে

* আমাদের বিশ্বাস ও আশার মধ্যে দিয়েই সর্বশক্তিমান ঈশ্বর এশিয়াকে আবার নতুনভাবে গড়ে তুলবেন

অন্য পথে ঘরে পাঠানো

সমাপনী ধর্মোপদেশে তিনি বলেন, প্রভু এখন প্রতিটি তীর্থযাত্রীকে অন্য পথে—সিনডালিটি, সংলাপ, শান্তি গঠন, শ্রবণ ও সহচর্যের পথে—ঘরে ও কাজের স্থানে পাঠাচ্ছেন।

তিনি বলেন—“এটাই হোক আমাদের প্রতিশ্রুতি,”

* একসাথে পথচলা।

* মনোযোগ সহকারে শোনা।

* উদারভাবে সেবা করা।

* আনন্দের সাথে সাক্ষ্য দেওয়া।

* এবং ‘অন্য পথ’, খ্রীষ্টের পথ বেছে নেওয়া।

তিনি প্রতিনিধিদের মা মারিয়ার কাছে সমর্পণ করেন এবং প্রার্থনা করেন যেন পবিত্র আত্মা তাঁদের জাগ্রত রাখেন এবং পিতা সমগ্র এশিয়ার মানুষকে তাঁর শান্তির আলোয় পরিচালিত করেন।

শেষে কার্ডিনাল ঘোষণা করেন—

“এগিয়ে যান। তোমাদের তীর্থযাত্রা এখন এক আহ্বানে পরিণত হয়েছে, সেটি হল—আশার আহ্বান।”