তুমিলিয়া ধর্মপল্লীর অন্তর্গত চড়াখোলা গ্রামে অনুষ্ঠিত হলো অমর একুশে বই মেলা
গত ২১ ফেব্রুয়ারী ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, তুমিলিয়া ধর্মপল্লীর অন্তর্গত চড়াখোলা গ্রামে অনুষ্ঠিত হলো অমর একুশে বই মেলা।
চড়াখোলা গ্রামের “বইয়ের ডাক” শিরোনামে বিশিষ্ট লেখকদের আয়োজনে ফাদার উইস্ স্মৃতি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হলো অমর একুশে বই মেলা।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই পবিত্র খিস্টযাগ উৎসর্গ করেন তুমিলিয়া ধর্মপল্লীর সহকারী পুরোহিত ঝলক আন্তনী দেশাই এবং উপদেশ বাণী রাখেন পাল-পুরোহিত ফাদার যাকোব গমেজ। আরো উপস্থিত ছিলেন খ্রিষ্টীয় যোগাযোগ কেন্দ্রের পরিচালক ফাদার বুলবুল আগষ্টিন রিবেরু।
ফাদার যাকোব তার উপদেশ বাণীতে বলেন যে, “ঈশ্বর আমাদের জীবন দিয়েছেন এবং অভিব্যক্তি প্রকাশ করার জন্য ভাষা দিয়েছেন, বাক শক্তি দিয়েছেন যেন আমরা ভাষার সঠিক ব্যবহার করি।”
তিনি আরো বলেন, “আজ আমরা পালন করছি মহান একুশে ফেব্রুয়ারি তাই সকল শহীদের প্রতি জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা। গোটা বিশ্বের সাথে একাত্ন হয়ে জাতির জন্য যারা প্রাণ দিয়েছেন তাদের আত্নার মঙ্গল কামনা করি।”
“সকল লেখক লেখিকাগণ যেন বই লেখার মধ্য দিয়ে ভাষার সুন্দর ও সঠিক পরিচর্য়ার অনুশীলনে অন্যকে আরও অন্রপ্রাণিত করতে পারে”, বলেন ফাদার যাকোব।
খ্রিস্টযাগের শেষে বই মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা রির্চাড গমেজ, সন্তোষ রড্রিক্স, বার্ণাড রিবেরু, ছাড়াও বই সেবক ও পৃষ্ঠপোষক মি: দিলীপ টমাস রোজিারিও, ফাদার বুলবুল আগষ্টিন রিবেরু, ফাদার যাকোব স্বপন গমেজ, ফাদার ঝলক আন্তনী দেশাই, সিস্টার মেরী সাধনা এবং আবু বক্কর বাক্কু চেয়ারম্যান কালীগন্জ উপজেলা।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন ফাদার বুলবুল আগষ্টিন রিবেরু তিনি বলেন, “আমাদের নিজের ভাষা নিজের সংস্কৃতি নিজের কৃষ্টির মাহাত্ন্য আমরা ছাড়া আর কেউ গুরুত্ব দিবে না যদি না আমরা নিজেরা আগে এর সঠিক পরিচর্য়া না করি। চড়োখোলা গ্রামে অনেক সম্পদ, প্রাচুর্য রয়েছে যা দিয়ে এই গ্রাম অনেক উন্নত। এই প্রাচুর্য রক্ষা করার দায়িত্ব আপনাদের সবার। সবার সহোযোগিতা দরকার।”
মুক্তিযোদ্ধা সন্তোষ রড্রিক্স, মুক্তিযুদ্ধের অভিজ্ঞতা ব্যক্ত করে বলেন, “নটর ডেম কলেজে থাকাকালীন সময়ে আমি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছি। তখন আমি ঢাকা থেকে লুকিয়ে গ্রামে চলে আসি এবং পার্শবর্তী কয়েকজন বন্ধু মার্চের শেষের দিকে চলে যাই ভারতে সেখানে আমাদের যুদ্ধের ইন্টার্ভিউ হয়। সেখানে আব্দুর রফ ইউনিভর্সিটির ছাত্র নেতা আমাদের খ্রিষ্টান নাম শোনার পর তিনি অনেক অবাক হয়ে বলেন যে তোমরা যুদ্ধ করতে এসেছ ? তখন আমরা বললাম আমরা খ্রিষ্টান হলেও বাংঙ্গালী । তখন তিনি অঅমাদের জড়িয়ে ধরলেন। তার কাছ থেকে এমন ব্যবহার পেয়ে আমি সত্যিই নিজেকে ধন্য মনে করছি যে ভাষার জন্য নিজে যুদ্ধ করতে পেরেছি।”
বই মেলায় অংশগ্রহণকারী মিনু গরেট্টি বলেন, “আজ একুশে বই মেলায় আসতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি। যারা এই মেলা আয়োজ করেছেন তাদের প্রত্যেককে আমি সাধুবাদ জানাই। আমি মনে করি বইয়ের নেশায় যদি কাউকে ভরিয়ে দেওয়া যায় তবে অন্য কোন খারাপ নেশা তাকে আর র্স্পশ করবে না। বই পড়ে আমরা অলোকিত হই। আমরা চাই প্রত্যেকের হাতে একটি করে বই থাকে। এই বইয়ের ডাক যেন আরো সমৃদ্ধি লাভ করে।”
পরিশেষে সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে “বইয়ের ডাক” বই মেলার সমাপ্ত হয়। - সিস্টার লাইলি রোজারিও