জাতীয় যুব কমিশনের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হলো ৩১তম খ্রিস্টান লেখক কর্মশালা
গত ১৮ থেকে ২০ এপ্রিল ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, এপিসকপাল যুব কমিশন ও খ্রিস্টিয় যোগাযোগ কেন্দ্রের আয়োজনে সিবিসিবি সেন্টারে অনুষ্ঠিত হলো তিনদিন ব্যাপী ৩১তম জাতীয় খ্রিস্টান লেখক কর্মশালা।
উক্ত কর্মশালার মূলসুর ছিল, “পবিত্র আত্মার প্রেরণাপূর্ণ বাণীই লেখকের রচনা”। এই লেখক কর্মশালায় বাংলাদেশের ৮টি ধর্মপ্রদেশ এবং ঢাকা শহরের বিভিন্ন গঠনগৃহ ও সেমিনারি থেকে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের ২৬ জন যুবক ও ২০ জন যুবতীসহ মোট ৪৬ জন যুবক-যুবতী অংশগ্রহণ করে।
লেখক কর্মশালার শুরুতেই ফাদার বিকাশ জেমস রিবেরু, সিএসসি নির্বাহী সচিব ও জাতীয় যুব সমন্বয়কারী, এপিসকপাল যুব কমিশন শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন এবং কোর্স পরিচিতি ও নিয়মাবলী, প্রাক-প্রশিক্ষণ ধারণা ও প্রত্যাশা বিষয়ে সহভাগিতা করেন।
এই তিন দিনের কর্মশালায় প্রথম অধিবেশনে “খ্রিস্টীয় সাহিত্য ও খ্রিস্টীয় অনুবাদ সাহিত্যঃ বাইবেলীয় পুস্তক লেখার ধরণ ও উদ্দেশ্য” এর উপর উপস্থাপনা করেন ফাদার প্যাট্রিক শিমন গমেজ। তিনি পবিত্র বাইবেলের বাংলা অনুবাদ ও বাইবেল কিভাবে লিখা হয়েছিলো এই বিষয়ে সহভাগিতা করেন।
আর্চবিশপ বিজয় এন. ডি’ ক্রুশ, ওএমআই পবিত্র খ্রিস্টযাগ উৎসর্গ করেন ও তার শিক্ষক ফাদার ফিলিপ ক্রিল উপদেশ বাণী রাখেন। তিনি বলেন, “খ্রিস্টান লেখক হিসাবে চিন্তায়-অনুভূতিতে থাকবে ঈশ্বর, হৃদয়ে থাকবে যীশু ও কন্ঠে থাকবে পবিত্র আত্মা।”
প্রথম ও দ্বিতীয় অধিবেশনে “খবর, রিপোর্ট, স্পট রিপোর্ট ও ফিচার লেখা, হাতে-কলমে খবর লিখন, ফিচার/রিপোর্ট/ সংবাদ উপস্থাপনা ও মূল্যায়ন” এ বিষয়ে উপস্থাপনা করেন মি: পরিমল পালমা, সিনিয়র সাংবাদিক, ডেইলী স্টার দৈনিক পত্রিকা এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একই বিষয়ে উপস্থাপন করেন মি: প্যাট্রিক কস্তা, সিনিয়র রিপোর্টার, মাই টেলিভিশন, বাংলাদেশ।
তারা তাদেরর সহভাগিতায় কোনটা খবর আর কি ভাবে স্টপ রিপট ও ফিচার লিখতে হবে এই বিষয়ে কিছু নমনা তুলে ধরেন এবং অংশগ্রহণকারিদের রিপট তৈরী করতে মাঠ পরিদর্শনে পাঠানো হয়।
তৃতীয় অধিবেশনে “আবৃতি, উপস্থাপনা ও শুদ্ধ বাংলা উচ্চারণের কৌশল” এই বিষয়ে সুন্দর ও বাস্তবধর্মী আলোকপাত করেন মি: দিলীপ গমেজ, লেখক ও আবৃতিকার । পরে চতুর্থ অধিবেশনে “গান লেখা ও সুর করার কৌশল” সম্বন্ধে অত্যন্ত সহজ-সরলভাবে কৌশল তুলে ধরেন সুপরিচিত ও স্বনামধন্য গীতিকার ও সুরকার মি: লিটন অধিকারী রিংকু।
তিন দিনব্যাপী কর্মশালায় তৃতীয় দিনে অংশগ্রহণকারীরা খ্রীষ্টীয় যোগাযোগ কেন্দ্র পরিদর্শন করেন। সেখানে প্রথমে প্রুফ রিডিং সম্বন্ধে সুন্দরভাবে ধারণা প্রদান করেন সুনিল পেরেরা। পরে মানসম্মত ছবি তোলা বিষয়ে ধারণা দেন রিপন টলেন্টিনু এবং শর্ট ফিল্ম ও মৌবাইল রিপোর্ট তৈরি করার কৌশল বিষয়ে সংক্ষিপ্ত ধারণা প্রদান করেন ফাদার নিখিল গমেজ, কো-অর্ডিনেটর, রেডিও ভেরিতাস বাংলা বিভাগ।
পরবর্তীতে “খ্রীষ্টীয় যোগাযোগ কেন্দ্রের কার্যক্রম, কর্ম পরিধি ও দায়বদ্ধতা” বিশেষ করে খ্রীষ্টীয় যোগাযোগ কেন্দ্রের বিভিন্ন সেক্টর যথা: সাপ্তাহিক প্রতিবেশী, জেরি প্রিন্টিং প্রেস, প্রতিবেশী প্রকাশনী, জ্যোতি কমিউনিকেশন বাণীদীপ্তি ও রেডিও ভেরিতাস এশিয়ার কার্যক্রম পরিদর্শন করা হয় ও ধারণা দেওয়া হয় এবং এর উপর সহভাগিতা করেন ফাদার বুলবুল আগষ্টিন রিবেরু, পরিচালক, খ্রীষ্টীয় যোগাযোগ কেন্দ্র।
উপরিউক্ত অধিবেশন ছাড়াও জাতীয় খ্রিস্টান লেখক কর্মশালায় ছিল নিয়মিত প্রার্থনা ও খ্রিষ্টযাগ, দলীয় কাজ ও সহভাগিতা, বিভিন্ন প্রতিবেদন এবং মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
পরে কর্মশালায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে সনদপত্র বিতরণ করা হয়। সনদপত্র বিতরণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন এপিসকপাল যুব কমিশনের চেয়ারম্যান আর্চবিশপ সুব্রত লরেন্স হাওলাদার, সিএসসি ও ফাদার বিকাশ জেমস রিবেরু, সিএসসি।
এপিসকপাল যুব কমিশনের চেয়ারম্যান আর্চবিশপ সুব্রত লরেন্স হাওলাদার অংশগ্রহণকারীদের উদ্দেশ্যে বলেন “একজন লেখকের কী কী গুণাবলী, আদর্শ ও মূল্যবোধ থাকা আবশ্যক” সে ব্যপারে অনুপ্রেরণামূলক কিছু কথা বলে তাদের হাতে সনদপত্র তুলে দেন।
পরিশেষে ফাদার বিকাশ রিবেরু, সিএসসি সবার উদ্দেশ্যে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে বলেন, “সর্বশক্তিমান ঈশ্বর ব্যক্তি বিশেষে যে অনুগ্রহ দিয়েছেন সেই অনুগ্রহের স্রোতধারায় আমরা যেন নিজেদের জীবন সিক্ত করি এবং অন্যদের সাথে তা সহভাগিতা করি” এই বলে খ্রিস্টান লেখক কর্মশালার সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়। - রিপোর্ট: জাতীয় যুব কমিশন