চট্টগ্রাম আর্চডাইয়োসিসে অনুষ্ঠিত হল “জলবায়ু সংরক্ষণে ধর্মীয় সম্প্রীতি” শীর্ষক আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতি সেমিনার

চট্টগ্রাম নগরীর হোটেল সৈকতে অনুষ্ঠিত হল “জলবায়ু সংরক্ষণে ধর্মীয় সম্প্রীতি” শীর্ষক আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতি সেমিনার

গত ১২ জুন ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, চট্টগ্রাম নগরীর হোটেল সৈকতে অনুষ্ঠিত হল “জলবায়ু সংরক্ষণে ধর্মীয় সম্প্রীতি” শীর্ষক আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতি সেমিনার।

খ্রিস্টিয় ঐক্য ও আন্তঃধর্মীয় সংলাপ কমিশন, চট্টগ্রাম আর্চডাইয়োসিস এবং কর্ণফুলী এরিয়া প্রোগ্রাম, ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশের  যৌথ উদ্যোগে আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতি সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।

উক্ত সেমিনারের মূলসুর ছিল “জলবায়ু সংরক্ষণে ধর্মীয় সম্প্রীতি”। এতে বিভিন্ন ধর্মের প্রধানগণ উপস্থিত ছিলেন।

কর্ণফুলী এরিয়া প্রোগ্রাম, ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশের ম্যানেজার মি. জনি রোজারিও উক্ত সেমিনারের সভাপতিত্ব করেন। খ্রিস্টিয় ঐক্য ও আন্তঃধর্মীয় সংলাপ কমিশন, চট্টগ্রাম আর্চডাইয়োসিসের সমন্বয়কারী মি. এমরোজ গোমেজ স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন।

এসময় তিনি বলেন, “সৃষ্টিকর্তা আমাদের সৃষ্টি করে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে বলেছিলেন উত্তম হয়েছে। এরপর তিনি মানুষকে সমস্ত সৃষ্টির উপর কতৃর্ত্ব প্রদান করেন এবং সৃষ্টির যত্ন নিতে উপভোগ করতে বলেন। কিন্তু আমরা মানুষ সৃষ্টিকে উপভোগ করে যাচ্ছি। যত্নের কথা ভুলে গিয়েছি।”

সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম কাথলিক আর্চডাইয়োসিসের প্রধান ধর্মগুরু ও সংলাপ কমিশনের চেয়ারম্যান আর্চবিশপ লরেন্স সুব্রত হাওলাদার, সিএসসি।

প্রধান অতিথি আর্চবিশপ লরেন্স সুব্রত হাওলাদার, সিএসসি তার বক্তব্যে বলেন, “জলবায়ুর সংরক্ষণ করতে সৃষ্টিকর্তা, সৃষ্ট প্রকৃতি ও সৃষ্ট মানব সমাজের মধ্যে ত্রিমাত্রিক সম্পর্ক জোরদার করা প্রয়োজন। ধর্মীয় মূল্যবোধের অবক্ষয়ের কারণে এই সম্পর্কের মধ্যে যে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে তা ধর্মীয় সংলাপ ও সম্প্রীতির মাধ্যমে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা সম্ভব।”

সকল ধর্মের ধর্মীয় মূল্যবোধ এবং ধর্মীয় সাধু-সন্তদের জীবনাদর্শ থেকে সংযমী হওয়া, পারষ্পরিক মর্যাদা প্রদান করা এবং যেসব ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হয়েছে তার জন্যে বিনম্রতার সাথে অনুতপ্ত হয়ে ক্ষতিপূরণের মনোভাব গড়ে তোলা প্রয়োজন যাতে প্রকৃতির যত্নে সকলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত হতে পারে”, বলেন আর্চবিশপ লরেন্স। 

এছাড়া ‘জলবায়ু সংরক্ষণে ধর্মীয় সম্প্রীতি’ উপর সামগ্রিক আলোচনা করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্সটিউট অব ফরেস্ট্রি এন্ড এনভায়রনমেন্ট সায়েন্সেস বিভাগের প্রফেসর ড. মোহাম্মদ জসীমউদ্দীন।

তিনি তাঁর সহভাগিতায় বলেন, “বাংলাদেশে গত দুই দশক ধরে জলবায়ুর পরিবর্তনের প্রভাব সুস্পষ্ট। ভৌগলিক কারণে বাংলাদেশ দূর্যোগপ্রবণ দেশ, এর পাশাপাশি বৈশ্বিক উষ্ণায়ন দূর্যোগের তীব্রতা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। এমতাবস্থায় আমাদের সুন্দর পৃথিবী বিনির্মাণ করতে হলে আমাদের প্রয়োজন সম্মিলীত প্রচেষ্টা।”

এছাড়া মূলসুরের আলোকে স্ব স্ব ধর্মের শিক্ষার আলোকে যথাক্রমে, খ্রিস্টধর্মীয় শিক্ষার আলোকে ব্যবসা শিক্ষা বিভাগ, নটর ডেম কলেজ ঢাকা এর প্রভাষক ফাদার ড. লিটন হিউবার্ট গোমেজ সিএসসি, ইসলাম ধর্মের শিক্ষার আলোকে ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, সাউদার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ নুরুন্নবী আজহারী, সনাতন ধর্মের শিক্ষার আলোকে ইংরেজী বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগীয় প্রধান ড. সুকান্ত ভট্টাচার্য্য, বৌদ্ধ ধর্মের শিক্ষার আলোকে লতিফা সিদ্দীক ডিগ্রী কলেজ এর অধ্যক্ষ অধ্যাপক শিমুল বড়ুয়া প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। 

চার ধর্মীয় দৃষ্টিকোন থেকে উপস্থাপিত বক্তাগণের জ্ঞানগর্ভ বক্তব্যের আলোকে উপস্থিত সুধী সমাবেশ আলোচনায় অংশ নিয়ে মতামত প্রকাশ করেন ও অনুভূতি ব্যক্ত করেন।

অতঃপর উপস্থিত অংশগ্রহণকারী জলবায়ু সংরক্ষণের প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়ে জলবায়ু সংরক্ষণে একযোগে প্রধান অতিথি ঘোষনা পত্র পাঠ করেন। 

উক্ত সেমিনারে আরো উপস্থিত ছিলেন আয়োজক কমিটির সদস্য- তানভীর হোসাইন, দিলীপ বড়ুয়া, লায়ন ডা: বরুণ কুমার আচার্য, উইলিয়াম গমেজ, আরোফিন রিয়াদ, শ্যামল নন্দী, ইউজিন শুভ গোলদার, যোসেফ ডি’সিলভা, সি. মমতা পালমা এলএইচসি , ফ্লেভিয়ান ডি’কস্তা ও জুলিয়ান ডি’কস্তা । - ফ্লেভিয়ান ডি’কস্তা