সেন্ট গ্রেগরী হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজে অনুষ্ঠিত হল পোপের বিশ্বব্যাপী প্রার্থনা নেটওয়ার্ক (PWPN) এর জাতীয় সম্মেলন

গত ১৬ থেকে ১৭ মার্চ ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, পুরান ঢাকার লক্ষ্মীবাজার সেন্ট গ্রেগরী হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজে অনুষ্ঠিত হলো পোপের বিশ্বব্যাপী প্রার্থনা নেটওয়ার্ক (PWPN) এর দ্বিতীয় জাতীয় সম্মেলন।
এই জাতীয় সম্মেলনের মূলসুর ছিল, “পোপের বিশ্বব্যাপী প্রার্থনা নেটওয়াক: তীর্থযাত্রার আশার আলো”। এতে বাংলাদেশের আটটি ধর্মপ্রদেশ থেকে আগত ফাদার, সিস্টার এবং খ্রিস্টভক্তসহ প্রায় ১৮০জন অংশগ্রহন করেন।
পোপের বিশ্বব্যাপী প্রার্থনা নেটওয়ার্ক এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলো বেশি সংখ্যক লোককে পোপের সাথে প্রার্থনা করার জন্য আমন্ত্রণ জানানো যেন মাসিক প্রার্থনায় আগত বর্তমান সময়ের চ্যালেঞ্জ গুলি নিরসন হয়।
পোপের উদ্দেশ্য গুলির সাথে প্রার্থনা করার সময়, আমরা আমাদের দৃষ্টি সমগ্র বিশ্বের দিকে প্রসারিত করি এবং ব্যক্তিগতভাবে সর্বত্র আমাদের ভাই-বোনদের আনন্দ ও আশা, বেদনা এবং কষ্টের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করি।

ব্রাদার সুবল রোজারিও, সিএসসি পোপের বিশ্বব্যাপী প্রার্থনা নেটওয়ার্ক এর বাংলাদেশের পরিচালক মূল বিষয়ের উপর সহভাগিতা করে বলেন, “প্রতি মাসে পোপ মহোদয়ের দেওয়া খ্রীষ্টযাগের উদ্দেশ্যগুলোকে নিয়ে এ আন্দোলন প্রচারনা ও কাজ করে থাকে। এর যাত্রা শুরু হয়েছিল ফ্রান্স দেশে একটি জেজুইট সেমিনারীতে ১৯৪৪ সালে। তবে ২০১৯ সাল থেকে বাংলাদেশে এর যাত্রা শুরু হয়।”
“বিশ্বে মোট ৯০ টি দেশে দেড় কোটি সদস্য এ কার্যক্রম চালিয় যাচ্ছে। ব্যক্তিগত প্রার্থনা, সংঘবদ্ধ জীবনে,পরিবারে, বিভিন্ন সংঘ সমিতিতে, ধর্মপল্লী ও ধর্মপ্রদেশ পর্যায়ে এর কার্যক্রম সংঘটিত হয়”, বলেন ব্রাদার রোজারিও, সিএসসি ।
বিশপ সুব্রত বনিফাস গমেজ খ্রীষ্টযাগ বিষয়ে সহভাগিতা করতে গিয়ে বলেন, “খ্রীষ্টযাগ হলো খ্রীষ্ট বিশ্বাসীর জীবনে উপাসনার উৎস ও চুড়া। খ্রীষ্টযাগকে প্রধানত ৩ ভাগে ভাগ করা যায় যথা, ১. অনুতাপ- যার মাধ্যমে খ্রীষ্টযাগের শুরুতে আমরা শুচী হই; ২. ঐশ বাণী- যা শ্রবনে আমরা যীশুর স্বাক্ষ্য বহন করার শক্তি লাভ করি এবং ৩. উৎসর্গ- যেখানে আমরা খ্রীষ্ট প্রভুর সাথে মিলিত হয়ে তাঁরই মত হয়ে উঠার প্রয়াস পাই।”
“আমরা যেন খ্রীষ্টযাগকে জীবনের যে কোন কিছুর চেয়ে বেশী গুরুত্ব দেই যাতে আমরা যীশুর সাথে আরো বেশী করে যুক্ত থাকতে পারি”, বলেন বিশপ গমেজ ।
এই জাতীয় সম্মেলন অংশগ্রহণকারী একজন তাঁর মনের অনুভূতি ব্যক্ত করে বলেন, “বিশ্বব্যাপী প্রার্থনা নেটওয়ার্ক এর জাতীয় সম্মেলনে অংশগ্রহণ করতে পেরে আমি সত্যিই অনেক ভাগ্যবান বলে নিজেকে মনে করছি। এই সেমিনারে যোগদান করে আমি আমার ব্যক্তি জীবনে প্রার্থনা ও খ্রীষ্টযাগের গুরুত্ব সম্পর্কে অনুধাবন করতে পেরেছি।”
তবে ১৮৬৬ খ্রীষ্টাব্দে পোপ ৯ম পিউস এর মাধ্যমে এই অ্যাসোসিয়েশন আইনীভাবে অনুমোদন লাভ করেন। পরবর্তীতে ১৮৯৬ খ্রীষ্টাব্দে পোপ ত্রয়োদশ লিও সংস্থাটির আইন সংশোধন ও অনুমোদন করে সংস্থাটিকে তার মাসিক উদ্দেশ্যের দায়িত্ব অর্পণ করেন।

পোপের বিশ্বব্যাপী প্রার্থনা নেটওয়ার্ক (PWPN) বর্তমানে মণ্ডলীতে পোপ কর্তৃক প্রদত্ত মাসিক উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য প্রার্থনা করে। এটি সাম্প্রতিক দশকগুলিতে অস্থির সাংস্কৃতিক পরিবর্তিত বিশ্বের জন্য প্রার্থনা করতে বদ্ধপরিকর। এটি বিশ্বের মানবতার কথা বলে। যেখানে অন্যায়, যুদ্ধ এবং নিপীড়ন বিদ্যমান সেখানে যেন ন্যায়বিচার, শান্তি ও আনন্দ প্রতিষ্ঠিত হয়।
এই নেটওয়ার্ক হলো মঙ্গলসমাচার, খ্রীষ্টযাগ ও প্রেরণকাজের উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত একটি আধ্যাত্মিক যাত্রা যেখানে প্রার্থনা জীবনের গভীরতা রয়েছে। এটি প্রার্থনা জীবনের একটি দৈনন্দিন অনুশীলন। এটি যীশুর হৃদয়ের প্রতি বিশেষ ভক্তি প্রদর্শনের আহ্বান করে যার মাধ্যমে যীশু ও স্বর্গীয় পিতার কাছে যাই। এটি পোপের সাথে একাত্ম হয়ে লক্ষ লক্ষ কাথলিকের একটি দৈনিক প্রার্থনা।
পোপের বিশ্বব্যাপী প্রার্থনা নেটওয়ার্ক এর প্রেরণকর্ম (Mission) হলো “হৃদয়ের পথ” নামক একটি আধ্যাত্মিক পথের মাধ্যমে বিশ্বের প্রতি ভালবাসার প্রেরণকর্ম যা আমাদের খ্রীষ্টের প্রেরণকর্মের সেবায় রত থাকার পথকে রূপান্তরিত করে।
এই মহৎ আন্দোলনটি যেন সকল পর্যায়ের মানুষের সাথে, বিশেষ করে শিশু ও যুবাদের সাথে ঘনিষ্টভাবে কাজ করতে পারে এর জন্য প্রয়োজন সহায়তা। এই সহায়তা বাংলা ভাষায় সাহিত্য, লিফলেট, স্যুভেনির প্রকাশে সাহায্য করবে। সর্বোপরি এই আন্দোলনের সদস্যদের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করবে।
পোপের বিশ্বব্যাপী প্রার্থনা সম্প্রচার ব্যবস্থা আন্দোলটি বাংলাদেশে নতুন। ২০১৯ খ্রীষ্টাব্দে ভারতীয় ও দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় সমন্বয়ক ফাদার জগদীশ পারমার, এসজে বাংলাদেশে আসেন এবং সকল বিশপ এবং উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষদের সাথে দেখা ও যোগাযোগ করেন।
বিশপগণের সহায়তায় তিনি ধর্মপ্রদেশীয় প্রতিনিধিদের সাথেও যোগাযোগ করেছিলেন এবং আন্দোলনটি শুরু করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে ছিলেন। তিনি বাংলাদেশ কনফারেন্স অব রিলিজিয়াস (বিসিআর) এর সহায়তায় ঢাকার তেঁজগাও জপমালা রাণীর গীর্জায় অর্ধদিবস ব্যাপী একটি সেমিনারেরও আয়োজন করতে সমর্থ হয়েছিলেন যেখানে ঢাকা শহরে অবস্থিত বিভিন্ন ধর্মসংঘ থেকে দুইশত জনের বেশি ফাদার, ব্রাদার, সিস্টার, সেমিনারীয়ান, নবিস ও প্রার্থী ভাই-বোনেরা উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে কোভিড মহামারী এবং অন্যান্য যোগাযোগ ও তথ্যের অভাবে আন্দোলনটির যাত্রা চলমান রাখা সম্ভব হয়নি।
পরবর্তীতে ২০২৪ খ্রীষ্টাব্দে, ফাদার জগদীশ পারমার, এসজে বাংলাদেশ কনফারেন্স অব রিলিজিয়াস (বিসিআর) এর তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ব্রাদার সুবল এল. রোজারিও, সিএসসি’র সাথে যোগাযোগ করেন এবং আন্দোলনটি শুরু করার জন্য তার সহায়তা কামনা করেন এবং তাকে বাংলাদেশের জাতিয় পরিচালক এর দায়িত্ব গ্রহণের প্রস্তাব করেন।
ব্রাদার সুবল প্রস্তাবে আগ্রহ প্রকাশ করলে তাকে কাথলিক বিশপস্ কনফারেন্স অব বাংলাদেশ (CBCB) অনুমোদনে রোম থেকে PWPN এর আন্তর্জাতিক পরিচালক কর্তৃক নিয়োগ প্রদান করা হয়। এভাবে পোপের বিশ্বব্যাপী প্রার্থনা নেটওয়ার্ক আন্দোলন বাংলাদেশে যাত্রা শুরু করে। - আরভিএ সংবাদ