উদয়নী সোশ্যাল অ্যাকশন ফোরামের উদ্যোগে আন্তর্জাতিক নারী দিবস-২০২৫ পালন
গত ৭ মার্চ থেকে ১০ মার্চ ২০২৫, উদয়নী সোশ্যাল অ্যাকশন ফোরামের উদ্যোগে পাঁচটি স্থানীয় এনজিওর সহযোগিতায় আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদযাপন করা হয়।
প্রত্যেকটি ব্লকের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন উদয়নী সোশ্যাল অ্যাকশন ফোরামের পরিচালক ফাদার জন কের্কেটটা। এছাড়া বিষ্ণুপুর ১ ব্লকে ছিলেন ধর্মপল্লীর পাল পুরোহিত ফাদার জোসেফ টোপ্পো, সেন্ট পল'স হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষিকা শ্রীমতি সাধনা করালি, গ্রামীণ ব্যাঙ্ক ম্যানেজার: কল্প রায় চৌধুরী।
আন্তর্জাতিক নারী দিবস (IWD) প্রতি বছর নারীদের সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে অর্জিত সাফল্যকে স্বীকৃতি জানাতে পালিত হয়। এই দিনটি নারী অধিকারের পক্ষে সচেতনতা বৃদ্ধি ও সমতার দাবি তোলার একটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ। ২০২৫ সালে উদযাপন উপলক্ষে উদয়নী সোশ্যাল অ্যাকশন ফোরাম পাঁচটি স্থানীয় এনজিওর সহযোগিতায় অনুষ্ঠানের আয়োজন করে, যা এই উদ্যোগকে আরও প্রভাবশালী ও অন্তর্ভুক্তিমূলক করেছে।
নারী দিবসের উদযাপন বিভিন্ন ব্লকে বিভিন্ন দিনে অনুষ্ঠিত হয়, যাতে অধিক সংখ্যক মানুষের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা যায়— ৭ মার্চ কালনা-১ ও কালনা-২ ব্লক, ৮ মার্চ জামালপুর ও পাণ্ডুয়া ব্লক, ৯ মার্চ বিষ্ণুপুর ব্লক এবং ১০ মার্চ উদয়নীর প্রধান কার্যালয়ে এই দিনটি পালন করা হয়।
এবারের উদযাপনে নতুনত্ব আনা হয়েছিল, যেখানে অংশগ্রহণমূলক বিভিন্ন খেলা ও কার্যক্রম যুক্ত করা হয়, যা মানুষকে সরাসরি সম্পৃক্ত করে সামাজিক চিন্তাধারাকে চ্যালেঞ্জ করার সুযোগ দেয়। নারীরা তাঁদের গ্রামগুলিতে মিছিল করে, প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে নিজেদের অধিকারের দাবি জানায় এবং দৃঢ় কণ্ঠে নিজেদের মতামত প্রকাশ করে।
উদয়নীর প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানে এবছর প্রচলিত সাংস্কৃতিক পরিবেশনার পাশাপাশি ইন্টারঅ্যাক্টিভ গেম ও কার্যক্রমের ওপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। বিষ্ণুপুর ও কালনা-২-এর মধ্যে একটি বিতর্ক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়, এরপর কালনা-১, জামালপুর ও পাণ্ডুয়ার পক্ষ থেকে একটি উপস্থাপনা করা হয়। এই উপস্থাপনার মাধ্যমে সমাজে নারীদের বিভিন্ন ভূমিকা ও দায়িত্ব চিত্রিত করা হয়, যেখানে সংগীত, মৌখিক ও অ-মৌখিক যোগাযোগ এবং চার্ট ও পোস্টারের মাধ্যমে বার্তা তুলে ধরা হয়।
ব্লকভিত্তিক উদযাপনের বিভিন্ন কার্যক্রম ও খেলা ছিল নিম্নরূপ
১. শৃঙ্খল ভাঙার খেলা – চোখ বাঁধা অবস্থায় নারীরা মাটির হাঁড়ি ভাঙে, যেখানে সমাজের বিভিন্ন সমস্যা যেমন বাল্যবিবাহের মতো বিষয় লেখা ছিল। এটি প্রতীকীভাবে দেখায় যে তারা এইসব সামাজিক বাধা ভাঙতে প্রস্তুত।
২. ইচ্ছার গাছ – অংশগ্রহণকারীরা একটি “ইচ্ছার গাছ” তৈরি করে, যেখানে তারা মেয়েদের ও নারীদের সেই স্বপ্নগুলো লেখে, যা সাধারণত উপেক্ষিত হয়।
৩. ইচ্ছামতো পোশাক পরা – মেয়েরা ও নারীরা নিজেদের পছন্দের অনুপ্রেরণাদায়ী চরিত্রের মতো সাজে, যা লিঙ্গগত পূর্বধারণাকে চ্যালেঞ্জ করে।
৪. সামাজিক সমস্যার বিরুদ্ধে ডার্ট গেম – অংশগ্রহণকারীরা বাল্যবিবাহ ও গার্হস্থ্য সহিংসতার মতো সমস্যার ওপর চিহ্নিত লক্ষ্যে ডার্ট ছোঁড়ে, যা প্রতীকীভাবে এইসব সমস্যার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের বার্তা দেয়।
৫. বিতর্ক ও আলোচনা – গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক বিষয়গুলোর ওপর আলোচনা ও বিতর্কের মাধ্যমে অংশগ্রহণকারীদের সমালোচনামূলক চিন্তাভাবনা ও সংলাপে উৎসাহিত করা হয়।
২০২৫ সালের আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদযাপন উদয়নী সোশ্যাল অ্যাকশন ফোরামের উদ্যোগে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ ছিল, যা লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে সচেতনতা বৃদ্ধি ও পদক্ষেপ গ্রহণের বার্তা দেয়। বিভিন্ন ইন্টারঅ্যাক্টিভ কার্যক্রম, অংশগ্রহণমূলক খেলা ও চিন্তা-উদ্রেককারী আলোচনার মাধ্যমে এই অনুষ্ঠানটি সমাজের প্রচলিত ধ্যানধারণাকে প্রশ্ন করার ও আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক, সমতাভিত্তিক সমাজ গঠনের জন্য অনুপ্রাণিত করেছে। ব্যাপক অংশগ্রহণ ও ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া প্রমাণ করে যে ভবিষ্যতেও এই ধরনের উদ্যোগ অব্যাহত রাখা জরুরি।
প্রতিবেদক: পারোমিতা দত্ত