জেসুয়িট পুরোহিত আন্তে গ্যাব্রিচের যাজকীয় জীবনের উপর লেখা বইয়ের পর্যালোচনা
২৮শে ফেব্রুয়ারি ২০২৫ বারুইপুরের রোমান ক্যাথলিক ধর্মপ্রদেশের শ্রদ্ধেয় বিশপ শ্যামল বসু জেসুইট পুরোহিত আন্তে গ্যাব্রিচের (১৯১৫-১৯৮৮)সুদীর্ঘ যাজকীয় কর্মজীবনের উপর লেখা "দ্য অ্যাপোসেল্স অফ দ্য সুন্দরবন্স" (The Apostles of the Sunderbans - The Life and Mission of the Servant of God Fr Ante Gabrić SJ) বইটি প্রকাশ করেন।
দিনটি ছিল ফাদার আন্তে গ্যাব্রিচের ১১১তম জন্মদিন। ২৮শে ফেব্রুয়ারী ১৯১৫ তারিখে ক্রোয়েশিয়ার মেটকোভিচে (Metković) তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন। ১৭৬-পাতার ইংরেজিতে লেখা এই বইয়ের উপর আইজাক হ্যারল্ড গোমেস-এর একটি পর্যালোচনা ম্যাটার্স ইন্ডিয়া ডট কম mattersindia.com পত্রিকায় ৭ই মার্চে প্রকাশ করা হয়েছে।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার কুমরোখালির (মারিয়া পল্লী) লুর্দের মা মারিয়ার ধর্মপল্লীর ফাদার আন্তে গ্যাব্রিচের সমাধিস্থল প্রাঙ্গণে বইটি প্রকাশের সময় ছিলেন বারুইপুর ধর্মপল্লীর প্রাক্তন বিশপ শ্রদ্ধেয় সালভাদোর লোবো, বইটির লেখক ফাদার ইরুদয়া জ্যোতি এস জে, বারুইপুর ধর্মপ্রদেশের ফাদার প্রলয় বৈদ্য ও অন্যান্য পুরোহিতগণ, ফাদার আন্তে গ্যাব্রিচের জন্মভূমি ক্রোয়েশিয়া থেকে আগত বিশিষ্ট অতিথিবর্গ এবং মারিয়া পল্লীবাসীগণ।
ইতিমধ্যেই ক্রোয়েশিয়ার জাগ্রেব ধর্মপ্রদেশ তাঁকে `ঈশ্বরের মনোনীত’ বলে ঘোষণা করেছে এবং ভ্যাটিকান থেকে তাঁকে `ধন্য’ ঘোষণার প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। ক্রোয়েশিয়া এবং সুন্দরবনের ধর্মবিশ্বাসীরা ফাদার আন্তেকে ইতিমধ্যেই একজন সাধু মনে করে।
এই বইটিতে ফাদার আন্তে গ্যাব্রিচের পবিত্র এবং কৃচ্ছসাধনময় যাজকীয় জীবন তুলে ধরা হয়েছে। উল্লেখ্য, মাদার তেরেজা ফাদার আন্তেকে "যীশুর জীবন্ত প্রেমের নিদর্শন" বলতেন। মারিয়া পল্লী ধর্মপল্লী যা ফাদার আন্তে ২০ জানুযারী ১৯৭৫ সালে স্থাপন করেছিলেন, এখন একটি তীর্থস্থান হয়ে উঠেছে যেখানে সব ধর্মের মানুষ তাঁকে শ্রদ্ধা জানাতে ভিড় করেন।
ফাদার আন্তের সাথে মাদার তেরেসার হার্দিক সম্পর্ক ছিল। ১৯৭৮ সালে, মাদার তেরেসা মেটকোভিচে তাঁর ভাষণে ফাদার আন্তের প্রভূত প্রশংসা করে বলেছিলেন, "গ্যাব্রিচ পশ্চিমবাংলায় যা করেছেন তা আপনাদের নিজের চোখে দেখা উচিত। তাঁর অবদানের অপরিসীম গুরুত্ব ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। তিনি যীশু ও মা মারিয়াকে বাংলার অনেকের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন। তাঁরা এখন সুখে জীবনযাপন করছেন।"
উল্লেখ্য ফাদার আন্তে বাসন্তী, মরাপাই, গোসাবা, ক্যানিং অথবা কুমরোখালি যে প্যারিশেই যেতেন, সবাইকে সাধ্যমত সাহায্য করতেন। যীশুর শেখানো `মানব সেবাই শ্রেষ্ঠ ধর্ম’ এই উপদেশটি তিনি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতেন।
তিনি একাধারে ছিলেন সমাজ সংস্কারক ছিলেন। রাস্তাঘাট, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য হোস্টেল তৈরি করা, গির্জা নির্মাণ ও সংস্কার করা, ও সিস্টারদের জন্য কনভেন্ট নির্মাণে নেতৃত্ব দিতেন।
অন্যদিকে তিনি নিপীড়িতদের কল্যাণের জন্য সবরকম চেষ্টা করতেন। কলকাতা মহাধর্মপ্রদেশের ধর্মীয় পঞ্জিকা এবং বাংলা হেরাল্ড পত্রিকার সম্পাদক জেসুয়িট পুরোহিত তিমির সিংহ বলেন, "ফাদার আন্তে গ্যাব্রিচ, জাতি ধর্মনির্বিশেষে, তাঁর চারপাশের মানুষদের আধ্যাত্মিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নতি - সবকিছুতেই নজর দিতেন।"
বইটিতে সুন্দরবনের অসহায় মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য ফাদার গ্যাব্রিচের অনেকগুলি অগ্রণী উদ্যোগ চোখে পড়ে।
বইটির পরিশেষে ফাদার আন্তে গ্যাব্রিচের ঈশ্বর ও মানবসেবার উপর অনেকগুলি গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষ্য রয়েছে যা তাঁর ধন্য ও সাধু হওয়ার পথ মসৃণ করবে।
কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজের গোয়েথাল্স ইন্ডিয়ান লাইব্রেরি অ্যান্ড রিসার্চ সোসাইটি এই বইটির প্রকাশক। বাংলায় ও ভারতের অন্যান্য ভাষায় বইটি পুনর্মুদ্রণ করা হলে বহু পাঠক, বিশেষ ভাবে সন্ন্যাসব্রতে আগ্রহীরা, ফাদার আন্তে গ্যাব্রিচের জীবনাদর্শ পড়ে অনেক অনুপ্রেরণা লাভ করবেন।
প্রতিবদক: আইজাক হ্যারল্ড গোমেস