কৃষ্ণনগর ধর্মপ্রদেশের রানাঘাট ধর্মপল্লীতে প্রয়াত বিশপ যোসেফ সুরেন গোমস্-এর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী পালন

কৃষ্ণনগর ধর্মপ্রদেশের রানাঘাট ধর্মপল্লীতে প্রয়াত বিশপ যোসেফ সুরেন গোমস্-এর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী পালন

বিগত ১৮ মে ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ, কৃষ্ণনগর ধর্মপ্রদেশের প্রয়াত বিশপ যোসেফ সুরেন গোমস্-এর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ১৮ই মে, রবিবার, রানাঘাট ধর্মপল্লীতে অনুষ্ঠিত হল এক স্মরণীয় ও আধ্যাত্মিক সন্ধ্যা।

সন্ধ্যায় রানাঘাট ক্যাথলিক মণ্ডলীর কবরস্থানে প্রয়াত বিশপ মহাশয়ের সমাধিস্থলে গিয়ে ফুল ও আলো জ্বালিয়ে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করা হয়। প্রার্থনার মধ্য দিয়ে শুরু হয় স্মরণ পর্ব।

পরে ধর্মপল্লীর প্রধান গির্জায় অনুষ্ঠিত হয় পবিত্র খ্রীষ্টযাগ, যেখানে খ্রীষ্টযাগ উৎসর্গকারীর ভূমিকায় ছিলেন কৃষ্ণনগর ধর্মপ্রদেশের ভিকার জেনারেল ফাদার আশীষ। তাঁর ধর্মোপদেশে উঠে আসে প্রয়াত বিশপ যোসেফ সুরেন গোমস্-এর চারিত্রিক মহত্ব, ধর্মজীবনের সংগ্রাম এবং বাংলার ক্যাথলিক সমাজের প্রতি তাঁর অকুণ্ঠ ভালোবাসা ও সেবার কথা। তিনি বলেন, “বিশপ সুরেন ছিলেন একজন প্রকৃত মেষপালক, যিনি তাঁর মেষপালের প্রতিটি সদস্যকে ভালোবেসেছেন হৃদয় দিয়ে।”

বিশেষভাবে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন ফাদার টি. জে. আব্রাহাম, যিনি দীর্ঘদিন প্রয়াত বিশপ যোসেফ সুরেন গোমস্-এর অধীনে তার পৌরহিত্য জীবনের অনেকটা সময় অতিবাহিত করেছেন। আবেগাপ্লুত কণ্ঠে তিনি বলেন,“আমি আমার ধর্মজীবনের একটা বড় সময় বিশপ সুরেন গোমসের সঙ্গে কাটিয়েছি। তিনি শুধু একজন বিশপ নন, ছিলেন একজন পথপ্রদর্শক, একান্ত আপনজন। তাঁর নেতৃত্বে আমরা যেমন শিখেছি কীভাবে সেবা করতে হয়, তেমনি শিখেছি বিনয়ের সঙ্গে চলতে। আজ তিনি আমাদের মধ্যে নেই, কিন্তু তাঁর প্রত্যেকটি শিক্ষা, তাঁর হাসি, তাঁর চিন্তা—সবকিছু আজও আমাদের সাথে আছে”

এই স্মরণ অনুষ্ঠানে খ্রীষ্টীয় কীর্তন, সঙ্গীত এবং মোমবাতি প্রজ্বলনের মাধ্যমে পরিবেশটি হয়ে ওঠে এক আবেগঘন আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতা। গানের মাধ্যমে প্রার্থনা এবং প্রেরণার বার্তা ছড়িয়ে পড়ে সমগ্র গির্জাজুড়ে।

ধর্মপল্লীর প্রায় ৫০০-রও বেশি খ্রীষ্টভক্ত এই অনুষ্ঠানে অংশ নেন। ছোট-বড় সবার অংশগ্রহণে এই অনুষ্ঠান হয়ে ওঠে প্রয়াত বিশপের প্রতি এক হৃদয়স্পর্শী শ্রদ্ধার্ঘ্য।

অনুষ্ঠানের শেষে পালক পুরোহিত ফাদার স্বপন মন্ডল উপস্থিত সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, “আমরা আজ শুধু একজন বিশপকে নয়, একজন পিতার মতো অভিভাবককে স্মরণ করছি, যিনি আমাদের বিশ্বাসে দৃঢ়তা এনেছেন।” তিনি উপস্থিত সবাইকে জলযোগ গ্রহণের জন্য আহ্বান জানান।

এই অনুষ্ঠানটি প্রমাণ করে দিল—বিশপ যোসেফ সুরেন গোমস্ আর কেবল একটি নাম নয়, তিনি চিরজাগরূক এক অনুপ্রেরণা, যিনি এখনও বিশ্বাসীদের হৃদয়ে বেঁচে আছেন। এই স্মরণসভা সকলের মধ্যে প্রয়াত বিশপের প্রতি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার বহিঃপ্রকাশ ছিল—একটি অন্তরঙ্গ, আধ্যাত্মিক ও স্মৃতিময় সন্ধ্যা।

 

সৈকত মন্ডল।

মালিয়াপোতা ধর্মপল্লী