সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন করেছে কটক-ভুবনেশ্বরের আর্চডায়োসিস

ওড়িশার দারিংবাড়িতে আওয়ার লেডি অফ দ্য রোজারি প্যারিশে তার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন।

ভারতের ওড়িশার কটক-ভুবনেশ্বর আর্চডায়োসিস ৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ তারিখে কান্ধামাল জেলার দারিংবাড়িতে আওয়ার লেডি অফ দ্য রোজারি প্যারিশ মাঠে তার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন করেছে।

কান্ধামাল জেলার দারিংবাড়িতে আওয়ার লেডি অফ দ্য রোজারি প্যারিশ মাঠে এক  গুরু-গম্ভীর মহা খ্রীষ্টযাগ উদযাপনের মাধ্যমে তার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপনের সমাপ্তি ঘটায়।

ওড়িষ্যায়আয়োজিত পবিত্র খ্রীষ্টযাগের প্রধান উদযাপনকারী ছিলেন কটক-ভুবনেশ্বরের আর্চবিশপ জন বারওয়া। অন্যান্য সহযোগী পুরোহিত ছিলেন ভারতের ক্যাথলিক বিশপ সম্মেলনের (সিসিবিআই) সহ-সভাপতি আর্চবিশপ পিটার মাচাডো, আগ্রার আর্চবিশপ রাফি মাঞ্জলি ।এছাড়াও আরও ২৫ জন বিশপ, ৫০০ জনেরও বেশি পুরোহিত এবং ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব সম্মিলিত  ভাবে খ্রীষ্টযাগ উদযাপন করছিলেন।

কটক-ভুবনেশ্বরের আর্চডায়োসিস এবং ওড়িশার আরও পাঁচটি ডায়োসিস থেকে ২০,০০০ এরও বেশি ভক্তবৃন্দ এই স্মরণীয় অনুষ্ঠানে জড়ো হয়েছিলেন।

খ্রীষ্টযাগের সময় একটি ঐতিহাসিক ঘোষণা করা হয়।  আর্চবিশপ বারওয়া কান্তেশ্বর দিগল এবং কান্ধামালের আরও ৩৫ জন শহীদের সম্মাননা এবং সন্তত্ব প্রদানের প্রক্রিয়া শুরু করার আনুষ্ঠানিক ডিক্রি/ ঘোষণা পাঠ করেন, যা ২০২৩ সালে ভ্যাটিকান কর্তৃক অনুমোদিত হয়।

এই শহীদরা ২০০৮ সালের ২৪শে আগস্ট চার মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা খ্রিস্টান-বিরোধী সহিংসতায় ভুক্তভোগীদের অন্যতম ছিলেন।এই সহিংসতায় ১০০ জনেরও বেশি মানুষের প্রাণ নিয়েছিল, শত শত আহত এবং ৫৬,০০০ এরও বেশি লোককে বাস্তুচ্যুত করেছিল।

আর্চবিশপ মাচাডো সিসিবিআই-এর সভাপতি কার্ডিনাল ফিলিপ নেরি ফেরোর পাঠানো একটি বার্তা পড়ে শোনান।

২০০৮ সালের নিপীড়নের সময় বিশ্বাসীদের আত্মত্যাগের কথা স্বীকার করে কার্ডিনাল বলেন, "খ্রিস্টীয় নিপীড়নের সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং সময়ে খ্রিস্টের সাক্ষ্যদানকারী অগণিত বিশ্বাসীদের আত্মত্যাগ আমরা ভুলতে পারি না। তাদের অবিচল বিশ্বাস এবং সাহস ভারত এবং তার বাইরেও খ্রীষ্টমণ্ডলীকে অনুপ্রাণিত করে চলেছে।"

তিনি কটক-ভুবনেশ্বরের আর্চডায়োসিসকে "বিশ্বাসের স্থায়ী শক্তির এক উজ্জ্বল সাক্ষ্য" হিসেবে বর্ণনা করেন এবং কান্ধমালকে "পুণ্যভূমি" (শহীদদের ভূমি) বলে অভিহিত করেন।

তিনি ভারতের খ্রীষ্টমণ্ডলীর সংহতি, ভালবাসা এবং আধ্যাত্মিক ঘনিষ্ঠতার আশ্বাস দিয়েছিলেন।

আর্চবিশপ বারওয়ার নেতৃত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ, আর্চবিশপ মাচাডো, CCBI কর্মকর্তা ফাদার স্টিফেন আলাথারা, ফাদার ক্রিস্টোফার বিমলরাজ, ফাদার বিজ্ঞান দাস এবং সিনিয়র লিডউইন ফার্নান্দেসকে সাথে নিয়ে, CCBI-এর পক্ষ থেকে তাকে একটি ভারতীয় শাল দিয়ে সম্মানিত করেন।

জয়ন্তীর কথা স্মরণ করে আর্চবিশপ বারওয়া বলেন, "এই সুবর্ণ জয়ন্তী ঈশ্বরের অগাধ অনুগ্রহ এবং আমাদের জনগণের অবিচল বিশ্বাসের প্রমাণ। আমরা যখন আমাদের অতীত উদযাপন করি, তখন আমরা ভালোবাসা, করুণা এবং ঐক্যের সাথে ওড়িশার সেবা করার জন্য নতুন করে নিবেদনের সাথে ভবিষ্যৎকে আলিঙ্গন করি।"

কটক-ভুবনেশ্বরের আর্চডায়োসিসের সূচনা ১৮৪৫ সালে, যখন এটি বিশাখাপত্তনমের ডায়োসিসের অংশ ছিল। মিশনারিজ অফ সেন্ট ফ্রান্সিস ডি স্যালেসিয়ান (এমএসএফএস) প্যারিশ প্রতিষ্ঠা করে এবং বিশ্বাসীদের সেবা করত।

১৯২২ সালে, মিশনের মণ্ডলী (সিএম) থেকে চারজন স্প্যানিশ ভিনসেন্টিয়ান পুরোহিত ওড়িশায় আসেন, এমএসএফএস মিশনারিদের উত্তরসূরী হন।

১৯২৮ সালে, পোপ পিয়ুস একাদশ কটকের মিশনকে "মিসিও সুই জুরিস"-এ উন্নীত করেন, এবং ভগবানের  সেবক ভ্যালেরিয়ান গুয়েমস, সিএম-কে এর প্রশাসক এবং পরে ধর্মীয় উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হিসেবে নিযুক্ত করেন। ১৯৩৭ সালে মিশনটিকে একটি ডায়োসিসের মর্যাদায় উন্নীত করা হয় এবং ১৯৩৮ সালে মিসেস ফ্লোরেনসিও সানজ এস্পেরানজা, সিএম-কে কটকের প্রথম বিশপ হিসেবে নিযুক্ত করা হয়।

১৯৭৪ সালে, এই ডায়োসিসকে একটি আর্চডায়োসিসে উন্নীত করা হয়, যার নামকরণ করা  হয় কটক-ভুবনেশ্বর। ২ এপ্রিল, আর্চডায়োসিস যখন অনুগ্রহ, বিশ্বাস এবং স্থিতিস্থাপকতার ৫০ বছর উদযাপন করছে, তখন এই অনুষ্ঠানটি ওড়িশার খ্রীষ্টমণ্ডলীর অটল প্রতিশ্রুতির এক গভীর প্রমাণ হিসেবে সাক্ষ্য বহন করছে। - আরভিএ – ইংরেজি ওয়েবসাইট থেকে অনুলিখনে চন্দনা রোজারিও।

Tags