ফাদার এন. টি. স্কারিয়া ভূষিত হলেন কারাগার সংস্কারে অসামান্য অবদানের জন্য লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ডে

বিগত ১০ই ডিসেম্বর ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ, অল ইন্ডিয়া কাউন্সিল অব হিউম্যান রাইটস, লিবার্টিজ অ্যান্ড সোশ্যাল জাস্টিস (AICHLS) এর উদ্যোগের আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসে নয়াদিল্লির ইন্ডিয়া ইসলামিক কালচারাল সেন্টারে অনুষ্ঠিত ১৫তম আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সম্মেলন ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে ‘কারাগার সংস্কারে সহানুভূতিশীল অবদানের জন্য লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড’ এ ভূষিত হলেন ফাদার এন. টি. স্কারিয়া (নেদুমাট্টাথিল) এসডিবি।

গ্লোবাল জুরিগণ ফাদার স্কারিয়ার বিশ্বাসনির্ভর, রূপান্তরমূলক বন্দিদের প্রতি-সেবা ও ভারতের বিচার ব্যবস্থা ও পুনর্বাসন ব্যবস্থায় তাঁর অবদানের জন্য তাঁর উচ্চ প্রশংসা করে। ১৯৯৫ সালে বহরমপুর সেন্ট্রাল সংশোধনাগার হোমে তাঁর যুগান্তকারী সফর থেকে পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খণ্ড ও বিহার জুড়ে একটি প্রভাবশালী কারা-সংস্কার আন্দোলনে তাঁর কাজ বিস্তৃত হয়। তাঁর উদ্যোগে কারাগারে পেশাগত প্রশিক্ষণ, আইনি সহায়তা, পারিবারিক কাউন্সেলিং, মুক্তির পর সহায়তা এবং বিশ্বের প্রথম কারাগারের অভ্যন্তরে স্বীকৃত মোটর ড্রাইভিং স্কুল প্রতিষ্ঠা করা হয়।

ফাদার স্কারিয়ার নেতৃত্বে ডন বোস্কো প্রিজন মিনিস্ট্রি (DBPM) ভারতের অন্যতম সেরা পুনর্বাসনমূলক উদ্যোগের মডেল হয়ে ওঠে। তাঁর কার্যক্রমের ফলে হাজার হাজার বন্দি মুক্তির পথ, মর্যাদা, সমাজে পুনর্মিলন এবং জীবনের নতুন উদ্দেশ্য খুঁজে পান। দক্ষতা প্রশিক্ষণ, আধ্যাত্মিক সহায়তা এবং মানবসম্পদ উন্নয়ন সমন্বয়ে তাঁর সামগ্রিক পদ্ধতি কারা-জীবনের ধারণাকেই বদলে দেয়।

স্মৃতিচারণে ফাদার স্কারিয়া বলেন “আমি কোনও পরিকল্পনা নিয়ে এই কাজ শুরু করিনি, কিন্তু একটি দৃঢ় বিশ্বাস নিয়ে ফিরে এসেছিলাম—যে এই পুরুষ ও নারীরা, বন্দি হলেও, এখনও তারা ঈশ্বরের সন্তান”। বিচারাধীন, দরিদ্র ও আইনি সহায়তাহীন বহু তরুণ বন্দির সঙ্গে প্রথম সাক্ষাৎ থেকেই তাঁর মধ্যে সহানুভূতিশীল কাজের সূচনা হয়। এরপরই সেলাই, মেকানিক্স, ইলেকট্রনিক্স এবং ডিজিটাল সাক্ষরতার প্রশিক্ষণ প্রকল্প শুরু হয়, যা শেষ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠিত মোটর ড্রাইভিং স্কুলের মাধ্যমে বন্দিদের কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা আরও বেশি করে বাড়িয়ে দেয়।

জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (সাবেক) মনোজ পান্ত, যিনি DBPM-এর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত ছিলেন, তিনি বলেন, “পাঁচ বছরের মধ্যেই ফাদার স্কারিয়া ও তাঁর দল এই জেলাকে বন্দিবান্ধব করে তুলতে সফল হন। আজীবন দণ্ডপ্রাপ্ত বন্দিরাও ডন বোস্কো থেকে আগত সুদক্ষ প্রশিক্ষকদের প্রশিক্ষণের পর এখন জেলের গাড়িগুলি তারাই চালাচ্ছেন।”

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাঁর কাজ স্বীকৃতি ও সম্মান পেতে থাকে। ২০০৬ সালে ন্যাশনাল লিগ্যাল সার্ভিসেস অথরিটি তাঁকে বন্দি-অধিকার রক্ষার জন্য সম্মান জানায় এবং মন্ডলী নেতৃত্বে যুগান্তকারী উদ্যোগের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১২ সালে তিনি পাস্কুয়াল চাভেজ অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন। তাঁর কাজ সংগীত, নাটক, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক কর্মসূচির মাধ্যমে বন্দিদের মানসিক ভারসাম্য ও কমিউনিটি পুনর্গঠনের ক্ষেত্রও বিস্তার লাভ করে। পরিবার-সহায়তা ব্যবস্থা, শিক্ষাগত দক্ষতা ও কাউন্সেলিং বন্দিদের প্রজন্মগত চক্র ভাঙতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ২০২২ সালে সেলসিয়ান প্রভিন্স অব কলকাতা “Joy Behind Bar” নামে একটি ডকুমেন্টারি প্রকাশ করে, যা সমাজে বন্দিদের সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গি বদলে দেয়।

এখন আশির কোঠায় পৌঁছে ফাদার স্কারিয়া এই সম্মানকে মিশনের সম্মিলিত অবদান বলে মনে করেন। তিনি বলেন, “এটি আমার একার কাজ নয়। এটি ঈশ্বরের কাজ— যা, অনেকের হাতের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়েছে।” তাঁর সহকর্মীদের মধ্যে রয়েছেন সেলসিয়ান ফাদারগণ, স্বেচ্ছাসেবক এবং মুক্তিপ্রাপ্ত প্রাক্তন বন্দিরা, যারা এখন পুনর্বাসন কর্মসূচিতে পরামর্শদাতা হিসাবে কাজ করেন।

তাঁর পথচলার মূল্যায়নে সহকর্মী ফাদার কে. কে. সেবাস্টিয়ান বলেন, “এটি কোনও পিএইচডি ডিগ্রির ফল নয়, বরং এক সত্যিকারের এসডিবি ডিগ্রি—যা, দরিদ্র ও প্রান্তিক মানুষের প্রতি প্রেম ও সহানুভূতির এক যথার্থ পরিচয়।”

পুরস্কার গ্রহণের সময় ফাদার স্কারিয়া তাঁর আহ্বানের মূল কথাটি পুনর্ব্যক্ত করেন: “কারা-সেবা”ই সেলসিয়ানদের প্রেরিত কাজের অবিচ্ছেদ্য অংশ হওয়া উচিত। এটি হাজারো সমস্যাগ্রস্ত ও অসহায় তরুণ ও অপরাধীদের জীবনে গভীর প্রভাব ফেলে—এটাই সাধু ডন বোস্কো চেয়েছিলেন।”

মূল প্রতিবেদন ফাদার সি এম পল

অনুলেখন তেরেসা রোজারিও