নাগরী ধর্মপল্লীর অধীনস্থ পানজোরা গ্রামে অনুষ্ঠিত হল মহান সাধু আন্তনীর তীর্থোৎসব

গত ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, প্রতি বছরের ন্যায় এবারও বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনায় ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যতায় অনুষ্ঠিত হলো নাগরী ধর্মপল্লীর অধীনস্থ পানজোরাতে মহান সাধু আন্তনীর তীর্থোৎসব।
নয় দিনব্যাপী নভেনা প্রার্থনা ও খ্রিস্টযাগ উৎসর্গের মধ্যদিয়ে খ্রিস্টভক্তদের আধ্যাত্নিক প্রস্তুতির পর উদযাপিত হয়েছে এই সাধু আন্তনীর তীর্থোৎসব।
এতে বৃদ্ধ হতে শিশু পর্যন্ত মহান সাধু আন্তনীর বিপুল সংখ্যক দেশী-বিদেশী ভক্তরা তীর্থোৎসবে যোগদান করেছেন।
এই তীর্থোৎসবকে কেন্দ্র করে ২টি খ্রিস্টযাগ অনুষ্ঠিত হয়েছে যথাক্রমে সকাল ৭ টায় প্রথম খ্রিস্টযাগ এবং সকাল ১০টায় দ্বিতীয় খ্রিস্টযাগ।
পবিএ খ্রিস্টযাগ উৎসর্গ করেন ঢাকা মহাধর্মপ্রদেশের আর্চবিশপ বিজয় এন. ডি’ক্রুশ, তার সাথে ছিলেন ঢাকা মহাধর্মপ্রদেশের সহকারী বিশপ সুব্রত গমেজ, বিশপ থিওটোনিয়ান গমেজসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে আগত ফাদার, ব্রাদার, সিস্টার ও খ্রিস্টভক্তগন।
ঢাকা মহাধর্মপ্রদেশের আর্চবিশপ বিজয় এন.ডি’ক্রুজ বলেন, “সাধু আন্তনীর পর্ব উৎসব উদযাপন আমাদের জীবন মূল্যায়নের সুযোগ এনে দেয়। আমরা কতটুকু যীশুর ভক্ত হতে পেরেছি তা আমরা মূল্যায়ন করতে পারি। শুধুমাত্র পার্বণের সময় নয়, আমরা যেন সারা বছরব্যাপী যীশুর কাছে থাকি। আমরা যেন আরও প্রার্থনাশীল ও দয়াবান মানুষ হয়ে উঠি।”
“সাধু আন্তনীর প্রতি ভক্তি দেখে আমরা অনুপ্রাণিত হই তার সৃষ্টিকর্তা ঈশ্বরের প্রতি যিনি তাকে অনুগ্রহ দান করেছেন। সাধু আন্তনীর মহামন্দির ও তীর্থস্থান হলো ইতালীর পাদুয়া শহরে। কিন্তু, পাদুয়ার চেয়ে নাগরী ধর্মপলীর পানজোড়া কোন অংশে কম নয়। প্রতিদিনই এখানে আন্তনী ভক্ত এসে প্রার্থনা করেন ও মানত পূরণ করেন”, বলেন আর্চবিশপ এন. ডি’ক্রুজ।

তীর্থে অংশগ্রহনকারী একজন আনন্তীভক্ত তার মনের অনুভূতি ব্যক্ত করে বলেন, “আমি প্রতিবছর সাধু আন্তনীর তীর্থ করতে ছুটে আসি তাঁর প্রতি ভক্তি, শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও প্রণাম জানাতে কারণ সাধু আন্তনী হচ্ছেন আমার প্রিয় সাধু তার কাছ থেকে আমি অনেক অনুগ্রহ লাভ করেছি।”
বাংলাদেশের মধ্যে সবচেয়ে বড় তীর্থস্থান হচ্ছে এই নাগরীর পানজোরাতে। ১৬৬৩ সাল থেকে এই পানজোরা গ্রামে সাধু আন্তনীর স্মরণে তীর্থোৎসব উদযাপন শুরু হয়েছে, যা আজও চলমান রয়েছে।
জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশ থেকেও হাজার হাজার সাধু আন্তনীর ভক্ত এই তীর্থোৎসবে যোগদান করে, প্রার্থনা করে, মানত রাখে এবং পূর্বের রেখে যাওয়া মানতের জন্য সাধু আন্তনীর মাধ্যমে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানান।
সাধু আন্তনী হচ্ছেন সবার প্রিয় সাধু। তিনি ১৫ আগস্ট ১১৯৫ খ্রিস্টাব্দে পর্তুগালের বর্তমান রাজধানী লিসবন শহরের জন্মগ্রহণ করেন। তার কর্মজীবন কাটে ইতালির পাদুয়ায়। মাত্র ৩৯ বছর বয়সে তিনি মৃত্যুবরন করেন।
সাধু আনন্তী ছিলেন অত্যন্ত সহজ-সরল, ঈশ্বর ও মানবপ্রেমী, ধার্মিক এবং দয়ালু ও দরদী এক মহান সাধু। তিনি মানুষকে ঈশ্বরের দয়া লাভ করাতে সর্বদায় সাহায্য করেছেন। দরদী হৃদয় নিয়ে তিনি দরিদ্র ও পাপীদের নিকট ঈশ্বরের ঐশভালবাসা ও দয়ার কথা প্রচার ও প্রকাশ করেছেন।
বাংলাদেশে দিন দিন সাধু আন্তনী ভক্তের সংখ্যা বাড়ছে। আর তাঁর সাক্ষ্য মেলে এই গাজীপুর জেলার নাগরী পানজোড়া গ্রামে। খ্রিস্টভক্তদের বিশ্বাসে আরো বিশ্বাসী হতে সহায়তা করছে বিশ্বের জনপ্রিয় সাধু পাদুয়ার সাধু আন্তনী।
ভক্তি, ভালবাসায় আর বিশ্বাসে প্রতি বছর পানজোরার সাধু আন্তনীর তীর্থস্থান হয়ে উঠুক মহাপুণ্যভূমি। - আরভিএ সংবাদ