পবিত্র ক্রুশ পালকীয় কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হলো জাতীয় ওয়াই.সি.এস ছাত্র নেতাদের গঠন-প্রশিক্ষণ কোর্স

এপিসকপাল যুব কমিশনের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হলো দ্বিতীয়বারের মতো জাতীয় ওয়াই.সি.এস ছাত্র নেতাদের গঠন প্রশিক্ষণ কোর্স

গত ১৬ থেকে ১৮ অক্টবর ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, এপিসকপাল যুব কমিশনের আয়োজনে  পবিত্র ক্রুশ পালকীয় কেন্দ্র ভাদুনে অনুষ্ঠিত হলো দ্বিতীয়বারের মতো জাতীয় ওয়াই.সি.এস ছাত্র নেতাদের গঠন প্রশিক্ষণ কোর্স।

এই গঠন প্রশিক্ষণ কোর্সের মূলসুর ছিলো, “ছাত্রনেতৃবৃন্দ কিশোর-কিশোরীদের হৃদয় জয় করতে ও সঠিক পথ নির্দেশনায় আহত”। এতে বাংলাদেশের ছয়টি ধর্মপ্রদেশ থেকে প্রায় ৫৮জন অংশগ্রহণ করে।

প্রথম দিন বাইবেল উপস্থাপন ও প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মাধ্যমে ছাত্র নেতাদের হৃদয়ে পবিত্র আত্মার প্রেমাগ্নি ও সহায়তা যাঞ্চনা করে প্রশিক্ষণ কোর্স আরম্ভ করা হয়।

শুভেচ্ছা বক্তব্যে ওয়াই.সি.এস এর জাতীয় চ্যাপলেইন ফাদার বিকাশ জেমস রিবেরু, সিএসসি বলেন, “ওয়াই.সি.এস ছাত্র নেতৃবৃন্দদের প্রথমে অনুধাবন করতে হবে যে, ওয়াই.সি.এস হলো একটি বিশ্বাস বৃদ্ধির স্থান, একটি গঠনের পরিবার, শিক্ষার একটি বিদ্যালয়, সেবাকাজের প্রেরণা ও মিশন দায়িত্বের জন্য মহত্তর আহ্বান।” 

মানসিক স্বাস্থ্য ও পালকীয় সহযাত্রা” এই বিষয়ে সিস্টার লিপি গ্লোরিয়া, এমডিএফএ খুবই সুন্দর ও বাস্তবভাবে শিক্ষা দেন কিভাবে একজন আরেক জনের আবেগ, অনুভূতি, সুখ-দু:খ অনুভব করে নিজের ও অন্যের যত্ন নিতে পারে।

ছাত্রনেতৃবৃন্দ কিশোর-কিশোরীদের হৃদয় জয় করতে ও সঠিক পথ নির্দেশনায় আহত” এই মূলভাবের উপর অংশগ্রহণমূলক শেসন পরিচালনা করেন এপসিকপাল যুব কমিশনের নির্বাহী সচিব ফাদার বিকাশ জেমস রিবেরু, সিএসসি।

তিনি বলেন, “ছাত্রনেতৃবৃন্দদের প্রধান দায়িত্ব হলো: “তার ছাত্র অনুসারীদেরকে ঐশ-বিশ্বাস ও ঈশ্বর-মুখী প্রত্যাশাকে জাগ্রত করে সিনোডাল অর্থ্যাৎ সহযাত্রিক নেতৃত্বের দিকে ধাবিত করা।”

ওয়াই.সি.এস কি? এর পরিচয়, কেন এই আন্দোলন করা দরকার? এই বিষয়ে বিস্তারিত অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন সিস্টার চম্পা রোজারিও, এমপিএফএ। এছাড়া ওয়াই.সি.এস এর মাণ্ডলিক কর্ম পদ্ধতির উপর বাস্তব ভিত্তিক ও দলীয়কাজের মাধ্যমে গঠনদান করেন ফাদার উজ্জ্বল রিবেরু।

জাতীয় ওয়াই.সি.এস ছাত্র নেতাদের গঠন-প্রশিক্ষণ কোর্সে অংশগ্রহণকারীগণ

অন্যদিকে ওয়াই.সি.এস এর সেল মিটিং ও কার্যক্রম নিয়ে ধারণা প্রদান করেন ঢাকা মহাধর্মপ্রদেশের যুব সমন্বয়কারী ফাদার প্রলয় আগষ্টিন ক্রুশ। তার উপস্থাপনায় বলেন, “একজন ছাত্র নেতা হচ্ছেন সহায়ক; ব্যবস্থাপক নন; তাই ছাত্র নেতাদের দায়িত্ব হচ্ছে নিজেকে সেবার জন্য প্রস্তুত রাখা।” 

শিশু সুরক্ষা ও পরিবেশবান্ধব চেতনায় ছাত্রদের অংশগ্রহণ এবং প্রচারাভিযান বিষয়ে বিস্তারিত আলোপাত করেন ব্রাদার নির্মল ফ্রান্সিস গমেজ, সিএসসি।

বর্তমান বাস্তবতায় ওয়াই.সি.এস এর চ্যালেঞ্জ ও সমাধানের উপায় এর উপর অত্যন্ত সুন্দর ও সাবলীলভাবে উপস্থান করেন যুব সেক্রেটারী মি: ফ্লেবিয়ান ডি’কস্তা।

তিনি বলেন, “ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার উৎকর্ষতা হলো: খোলা মনে ঐশ বাণী ও পরস্পরকে শ্রবণ, উন্মুক্ততা, অবধারণ, দন্দ্বের মধ্যেও মিলন সমাজ প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা চলমান রাখা।”

এয়াড়াও তারা এক্সপোজার, দৈনিক প্রার্থনা, পবিত্র খ্রিষ্টযাগ ও সাংস্কৃতিক পরিবেশনার মাধ্যমে আত্মিক উন্নয়ন, বন্ধুত্বেও বিকাশ, পেশাগত ও বাস্তব অভিজ্ঞতা, দক্ষতা ও আত্ম-বিশ্বাস, দৃষ্টিভঙ্গিও প্রসার ও সাংস্কৃতিক জ্ঞান লাভ করেছে।

অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে মিস শিয়না রোজারিও অনুভূতি ব্যক্ত করে বলেন, “আমি প্রথমবারের মতো এই ধরণের প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করেছি। আমার আত্মবিশ্বাস ও কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি পেয়েছে, যা দিয়ে আমি আমার ওয়াই.সি.এস সেল পরিচালনা ও দলের সাথে সহযাত্রা করার প্রেরণা পেয়েছি।”

মি: নিপ্পন চিছাম বলেন,  “আমি সামাজিক সচেতনতা, মানসিক সুস্থতা, আন্তব্যক্তিক দক্ষতা যোগাযোগ সমন্ধে অভিজ্ঞতা করতে পেরেছি। একইসাথে কিভাবে একজন ছাত্র নেতা হিসাবে আমি নীতিতে খ্রীষ্টিয় মনোভাব ও দৃষ্টিতে সেবাপরায়ণ তার গঠন পেয়েছি।”

কোর্স শেষে সকল অংশগ্রহণকারীকে প্রশংসা ও অনুপ্রেরণা হিসাবে সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়। শেষ দিনে পবিত্র খ্রিষ্টযাগ অর্পণ করেন বিশপ সুব্রত বনিফাস গমেজ, সভাপতি, এপিসকপাল যুব কমিশন।  

তিনি তার উপদেশ বাণীতে বলেন, “একজন ছাত্র নেতা হবেন আধ্যাত্মিক জীবন যাপনে ও কথায়, চাল-চলনে, সাধনা-ধ্যানে, অধ্যয়নে, এমন কি চিন্ত-চেতনায় খ্রিষ্টিয় কষ্টভোগী সেবক ও আন্তঃকৃষ্টি-সংস্কৃতি দৃষ্টিভঙ্গীর মানুষ।”

পরিশেষে অংশগ্রহণকারীদের ও কোর্স পরিচালনায় সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের ধন্যবাদ প্রদানের মাধ্যমে তিনদিন ব্যাপী প্রশিক্ষণ কোর্সের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়। - এপিসকপাল যুব কমিশন প্রতিনিধি