জুলাই মাসে পোপ মহোদয়ের প্রার্থনার উদ্দেশ্য
খ্রিস্টীয় জীবন - খ্রিস্টযজ্ঞীয় জীবন।
আমরা সকল কাথলিকদের জন্য প্রার্থনা করি, যেন তারা খ্রিস্টযাগকে তাদের জীবনের প্রাণকেন্দ্রে স্থান দেয়; যাতে তাদের মানবিক সম্পর্ক আরও গভীর ভাবে রূপান্তরিত হয় এবং ঈশ্বর ও ভাইবোন মানুষের সাথে সাক্ষাতের একটি বিশেষ সময় হয়ে উঠে।
রবিবারের পর রবিবার - প্রতি রবিবার খ্রিস্টযাগে অংশগ্রহণ করার জন্য কাথলিকদের একটি বিধান আছে। এ প্রসঙ্গে পোপ ফ্রান্সিস বলেন:
“খ্রিস্টের মৃত্যু ও পুনরুত্থানের রহস্যের দ্বারা নবীকৃত হয়ে ... মণ্ডলী প্রতি অষ্টম দিনটি প্রভুর দিন, আমাদের পরিত্রাণের দিন বলে উদ্যাপন করে। রবিবার দিন, আজ্ঞা হওয়ার আগে, জনগণের নিকট ঈশ্বরের একটি দান হিসেবে গণ্য করা হত। আর এ কারণেই মণ্ডলী একটি আজ্ঞা দ্বারা সেই দানটি সুরক্ষিত করছে। রবিবাসরীয় উপাসনা খ্রিস্টান সমাজের জন্য যজ্ঞানুষ্ঠানে রূপান্তরিত হওয়ার একটি বিশেষ সুযোগ। রবিবারের পর রবিবার ঐশবাণী, পুনরুত্থিত প্রভুতে আমাদের অস্তিত্বকে আলোকিত করে ...। রবিবারের পর রবিবার, খ্রিস্টের দেহ ও রক্তে আমাদের মিলন, আমাদের জীবনকে পিতার তুষ্ট নৈবেদ্য রূপে গঠন করে, এবং ভ্রাতৃত্বমূলক সহভাগিতা, আতিথ্য ও ভালবাসার মিলন সৃষ্টি করে। রবিবারের পর রবিবার, ভাংগা-রুটির শক্তি দিয়ে পরিপুষ্ট হ’য়ে আমরা মঙ্গলসমাচার ঘোষণা করি, যেখানে আমাদের উদ্যাপনের যথার্থতা প্রকাশ পায়।”
আমরা যতবার রবিবাসরীয় খ্রিস্টযাগে যোগদান করি ততবার আমাদের অন্তরে ধ্বনিত হয় প্রভু যিশুর বাণী: “আমি একান্তই বাসনা করেছি, আমার যন্ত্রণাভোগের আগে তোমাদের সঙ্গে এই নিস্তারভোজে বসব” (লুক ২২:১৫)।
নিস্তারভোজে বসার অধিকার কেউ অর্জন করেনি। সকলেই আমন্ত্রিত। আরও স্পষ্ট করে বলা যায় যে, নিস্তারভোজে বসার জন্য যিশুর যে জ্বলন্ত বাসনা আছে তারই আকর্ষণে সকলে আকর্ষিত।
আমরা প্রত্যেকেই “মেষশাবকের বিবাহ-ভোজে নিমন্ত্রিত” (প্রত্যাদেশ ১৯:৯)। এই ভোজে অংশগ্রহণ করার জন্য যে বিবাহ-পোশাক প্রয়োজন তা হচ্ছে বিশ্বাস, যা জাগ্রত হয় ঐশবাণী শ্রবণের ফলে (দ্র: রোমীয় ১০:১৭)। খ্রিস্টমণ্ডলী নিজেই সেই বিবাহের পোশাক-নির্মাতা, যা “মেষশাবকের রক্তে আপন পোশাক ধৌত করে শুভ্র করে তুলেছে” (প্রত্যদেশ ৭:১৪)। এই ভোজে এখনো কত মানুষ নিমন্ত্রণ পায় নি, অথবা পেয়েছিল কিন্তু এখন ছেড়ে দিয়েছে, বা হারিয়ে ফেলেছে...।”
খ্রিস্টযাগে যোগদানের “নিমন্ত্রণে সাড়া দেওয়ার আগে, বুঝতে হবে যে, আমাদের জন্য প্রভু যিশুর একটা বাসনা আছে। হয়তো আমরা সে সম্বন্ধে সচেতন নই, তবুও যতবার আমরা খ্রিস্টযাগে যাই ততবার আমাদের জানতে হয় যে, আমাদের জন্য যিশুর বাসনা আমাদের আকর্ষণ করছে। তাঁর বাসনার প্রতি আমাদের সম্ভাব্য সাড়া দেওয়ার অর্থ হচ্ছে আত্মত্যাগ, তাঁর ভালবাসার প্রতি আত্মসমর্পণ, তাঁর ভালবাসার দ্বারা আমরা আকর্ষিত। প্রতিবার যখনই যিশুর দেহ-রক্ত প্রসাদরূপে গ্রহণ করি তখন আমরা জানি যে, যিশু নিজেই তাঁর শেষভোজের সময় তা বাসনা করেছিলেন”।
পঞ্চাশত্তমীর পরে আমরা যদি জেরুশালেমে গিয়ে নাজারেথের যিশুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চাইতাম, তাহলে তাঁর শিষ্যদের খুঁজে বের করা ছাড়া আমাদের আর কোন সম্ভাবনাই থাকত না; কেননা শিষ্যদের মুখেই যিশুর কথা, তাঁর প্রকাশভঙ্গি এখনও জীবন্ত। শিষ্যসমাজে তাঁর উপস্থিতির উদ্যাপন ছাড়া তার সাথে সাক্ষাৎ করার কোনো সম্ভাবনাই ছিলনা। এ কারণেই মণ্ডলী সর্বদা অতি মূল্যবান সম্পদ, “আমার স্মরণার্থে এ অনুষ্ঠান কর” - প্রভুর এই নির্দেশ সযত্নে রক্ষা করে আসছে।
আসুন আমরা প্রভুর বাসনা দ্বারা আবিষ্ট হই, কেননা তিনি সর্বদা আমাদের সাথে নিস্তারভোজে আহার করতে বাসনা করেন। এসব কিছুই হোক মণ্ডলীর মাতা, মারীয়ার দৃষ্টিতলে।
খ্রিস্টানদের সকল প্রার্থনা ও উপাসনার মধ্যে প্রথম হচ্ছে খ্রিস্টযাগ। লোকভক্তি কোনো সময় খ্রিস্টযাগের স্থান দখল করতে পারে না। তবে এটা সত্য যে, জীবনে খ্রিস্টযাগ-রহস্যের বাস্তবতা, সত্যতা ও সৌন্দর্য এখনো পুরো ভাবে আবিষ্কার করা হয়নি। খ্রিস্টযাগ সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা হয়নি এবং খ্রিস্টযাগ উদ্যাপনের জন্য যোগ্যতাও লাভ করা হয়নি, ফলে খ্রিস্টযাগের পরিত্রাণদায়ী সুফলও অধিক পরিমাণে ভোগ করতে আমরা অক্ষম।
অতএব, পুণ্যপিতা পোপ ফ্রান্সিস আবেদন জানিয়েছেন, যেন খ্রিস্টযাগ আমাদের জীবনের কেন্দ্রীয় স্থান দখল করে থাকে, খ্রিস্টীয় জীবনের উৎস ও পরিণতি হয়ে থাকে, খ্রিস্টযাগ-অনুষ্ঠান আমাদেরকে খ্রিস্টীয় জীবনে গঠন দান করে, যাতে যিশুর মৃত্যু ও পুনরুত্থানের রহস্যে প্রবেশ করে আমরা খ্রিস্টযাজ্ঞিক হয়ে উঠি এবং খ্রিস্টযাগে ঈশ্বরের দেওয়া পরিত্রাণ গ্রহণ করতে পারি।
এসো আমরা প্রার্থনা করি, যাতে আমাদের খ্রিস্টীয় জীবন খ্রিস্টযাজ্ঞিক হয়ে ওঠে এবং আমাদের খ্রিস্টসমাজ হয়ে ওঠে খ্রিস্টযাজ্ঞিক মিলন-সমাজ।
(পোপ ফ্রান্সিস: “একান্ত বাসনা করেছি”- নামক প্রৈরিতিকপত্রের ভাবনা ও কতিপয় উদ্ধৃতির সহায়তায় রচিত) । -কার্ডিনাল প্যাট্রিক ডি’রোজারিও সিএসসি