
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের খ্রিষ্টান শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে যিশুখ্রিষ্টের জন্মদিন উপলক্ষে আলোচনা সভা ও প্রাক-বড়দিন উদযাপন
১ ডিসেম্বর ২০২২ খ্রিস্টাব্দ তারিখে পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) অধ্যয়নরত খ্রিষ্টান শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে যিশুখ্রিষ্টের জন্মদিন উপলক্ষে প্রাক-বড়দিন ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সম্মেলনকক্ষে বৃহস্পতিবার বিকেলে এই আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মিল্টন বিশ্বাসের সভাপতিত্বে ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জগেশ রায়ের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ইমদাদুল হক।
উপাচার্য বলেন, ‘বাঙালির ঐতিহ্যের সঙ্গে ধর্মীয় সংস্কৃতি মিশে আছে। কোনো ধর্মই মাদক নিতে বলে না, মিথ্যা বলা শেখায় না, কারোর কোনো ক্ষতি করতে বলে না। প্রত্যেকে প্রত্যেক ধর্মের বাণীগুলো মেনে চললে কেউই পথভ্রষ্ট হবে না।
তিনি আরও বলেন “বর্তমানে ধর্মের নামে হানাহানি চলে। বড় বড় রাষ্ট্রে এখন দেখা যায় ধর্মীয় ছোট ছোট বিষয় নিয়ে বিশ্বকে অস্থিতিশীল করে তোলা হয়। আমাদের প্রত্যেকের সব ধর্মকে শ্রদ্ধা করা উচিত।”
নতুন ক্যাম্পাসের মাস্টারপ্ল্যান হয়ে গেছে জানিয়ে উপাচার্য বলেন, ‘সেখানে মসজিদ, মন্দির, গির্জা সবই হবে। সব শিক্ষার্থী তাদের নিজ ধর্ম পালন করে সহাবস্থান তৈরি করবে সেখানে।’
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন লক্ষ্মীবাজার ধর্মপল্লীর পালপুরোহিত ফাদার ডনেল ষ্টিফেন ক্রুশ, সি.এস.সি । তিনি তার বক্তব্যে যীশুর জন্ম ও নববারতার কথা তুলে ধরে বলেন, আমরা যীশু খ্রিষ্টের জন্মদিনে আমাদের ঘর-বাড়ি আলো ও নতুন সাজে সাজিয়ে থাকি কারণ আমরা যাতে আমাদের পাপ ও অন্ধকারকে ত্যাগ করে যীশুকে বরণ করার মধ্য দিয়ে সুন্দর ও আলেকময় মানুষ হয়ে উঠতে পারি, এবং এই আলো সমাজের সকল স্তরে ছিড়িয়ে দিতে পারি।

বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী পর্ণা মারিয়া কস্তা বলেন, আমি খুব আনন্দিত বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে এমন একটি অনুষ্ঠানে অংশ নিতে পেরে। বিশ্ববিদ্যালয়ের এই প্রাক-বড়দিন দ্বিতীয়বারের মত আয়োজন করা হয়েছে।
তিনি আরে বলেন, এই বছর একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে যাতে করে প্রতিবছর এর ধারাবাহিকতা বজায় থাকে । বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪০-৫০জন খ্রিষ্টান শিক্ষার্থী রয়েছে, আমাদের এই আয়োজনের মধ্যে দিয়ে আমরা আমাদের খ্রিষ্টীয় বিশ্বাস ও যীশুর ভালোবাসা সকলের সাথে সহভাগিতা করতে পারছি একই সাথে আমাদের সংস্কৃতি অন্যদের মধ্যে তুলে ধরার চেষ্টা করছি। আমরা চাই প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে উঠুক অসাম্প্রদায়িক, সকল ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা ও সন্মান রেখে আমরা গড়ে উঠি আদর্শ মানুষ হিসাবে ।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আবুল হোসেন, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. এ. কে. এম. লুৎফর রহমান, প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোস্তফা কামাল, সহকারী প্রক্টর, ও খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
কেক কাটার মধ্য দিয়ে প্রাক-বড়দিন ও আলোচনা সভা সমাপ্ত হয়।
উল্লেখ্য, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্বনাম জগন্নাথ কলেজ। এই নামেই বিংশ শতাব্দীর অধিকাংশ সময় জুড়ে পরিচিত ছিল। ১৮৫৮ সালে ঢাকা ব্রাহ্ম স্কুল নামে এর প্রতিষ্ঠা হয়। সর্বশেষ ২০০৫ সালের ২০ অক্টোবর সাড়ে ৭ একর জায়গা নিয়ে জাতীয় সংসদে আইন পাসের মাধ্যমে জগন্নাথ কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত হয়। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬টি অনুষদে ৩৬টি বিভাগ ও ২টি ইনস্টিটিউটে ৬৭৮ জন শিক্ষক রয়েছেন। এর মধ্যে অধ্যাপক ১৪৪ জন, সহযোগী অধ্যাপক ১৭৭ জন, সহকারী অধ্যাপক ২৯০ জন এবং প্রভাষক ৬৭ জন। শিক্ষার্থী রয়েছেন ১৪ হাজার ৮৫৬ জন। এ ছাড়া এমফিল করছেন ২৪৫ জন ও পিএইচডি করছেন ১৪১ জন শিক্ষার্থী।
সংবাদ : রিপন আব্রাহাম টলেন্টিনু
Add new comment